এক্সপ্রেস ডেস্ক: রাশিয়াকে ঠেকাতে মার্কিনীরা সৌদি আরবকে ওয়াবী মতবাদ প্রচারে অনুরোধ করে, যে কারণে সৌদি আরব বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ দেয় বলে দাবি করেছেন সৌদি । যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গত ২২ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। সৌদি প্রিন্স এমন এক সময়ে এই দাবি করলেন যখন ওয়াবীদের সন্ত্রাসবাদের আখড়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে পশ্চিমারা। সৌদি আরবের যুবরাজ হওয়ার পর ক্ষমতাধর হয়ে সংস্কারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই যুবরাজ গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান।
যুবরাজের ভাষ্য, ‘মুসলিম দেশগুলো যেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে চলে না যায়, সেজন্যই গত শতাব্দীর সত্তর দশকে স্নায়ু যুদ্ধের সময় পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধে বিভিন্ন দেশের মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ ঢেলে ওয়াহাবি মতাদর্শের বিস্তারে কাজ শুরু করে সৌদি আরব।’
মুসলমানদের প্রধান দুটি বিভক্তির অন্যতম সুন্নিদেরই অংশ ওহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠা পায় অষ্টাদশ শতকে আরবের নজদ থেকে। যার উদ্ভাবক ছিলেন মোহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাব নামে এক ব্যক্তি। যিনি বার শতকের ইবনে তায়মিয়া’র অনুসারী। ইবনে তায়মিয়া মনে করতেন, রাষ্ট্র ধর্ম দ্বারা পরিচালিত হবে। এছাড়াও তিনি মুক্ত মত চর্চার ঘোর বিরোধী ছিলেন। আর স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী; যাদের অধিকাংশই ওহাবি মতবাদে বিশ্বাসী। যাদেরকে কোন কোন দেশে সালাফিও বলা হয়।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপে সৌদি আরব গঠন করে ক্ষমতায় বসে সউদ পরিবার, তখন তাদের সঙ্গে গাঁটছাড়া হয় ওহাবিদের। রাজ পরিবারের অর্থায়ন ও পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়ে ওহাবিদের উগ্র মতবাদ, যা এখনও অব্যাহত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্ধৃতি তুলে ধরে টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে জানায়, সুন্নিদের উগ্র ওহাবি মতবাদে দীক্ষিত করতে ১৯৭০ থেকে চার দশকে ১ হাজার কোটিরও বেশি ডলার অর্থ ব্যয় করে সৌদি আরব। এই অর্থের ২০ শতাংশের মতো আল কায়দা, তালেবানসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানে ব্যয় হয় বলে ইউরোপের গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানায় ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ। ২০১৩ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ওহাবি মতবাদকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের আখড়া’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টকে জানাচ্ছেন, ওহাবি মতবাদের প্রচারে অর্থায়ন যে আঙ্গিকে শুরু হয়েছিল, পরে তার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায় সৌদি সরকারের। । এখন সরকারের বদলে বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই অর্থায়ন হচ্ছে। তার ভাষ্য, যে কাজটি শুরু হয়েছিল সৌদি আরব থেকে, তাতে এখন দূষিত হচ্ছে তারাও। আইএস এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুও হচ্ছে তারা। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য টেলিগ্রাম, রয়টার্স।