Showing posts with label অপিনিয়ন. Show all posts
Showing posts with label অপিনিয়ন. Show all posts
এটিএম বুথে টাকা না থাকায় দুর্ভোগে গ্রাহকরা

এটিএম বুথে টাকা না থাকায় দুর্ভোগে গ্রাহকরা

admin June 07, 2019

নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ব্যাংক ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিলেও ছুটি শুরুর দু’দিনের মাথায় অধিকাংশ ব্যাংকের বুথে গিয়ে টাকা তুলতে পারেননি গ্রাহকরা।


এক ব্যাংকের কার্ড নিয়ে অন্য ব্যাংকের বুথে গিয়েও মেশিন থেকে কোনো টাকা বের করতে পারেননি গ্রাহকরা। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে আবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।


মো. রফিকুল ইসলাম রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রফিকুল ইসলামের ছেলে ঈদের দিন বিকেলে ওষুধ কেনার জন্য টাকা তুলতে হাসপাতালের পাশে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়ে ফেরত আসেন। কাছে নগদ টাকা না
থাকায় এক বন্ধুর কাছ থেকে বিকাশে টাকা এনে ওষুধ কিনেছেন।


এটিএম বুথে টাকার সংকট তৈরি হয়েছে ঈদের দিন বিকেল থেকেই। বেশ কয়েকজন গ্রাহক এই প্রতিবেদককে ফোন করে এটিএম বুথে টাকা না থাকার বিষয়টি জানান।


এটিএম বুথে টাকা না থাকার বিষয়ে খোঁজ নিতে বৃহ¯পতিবার (৬ জুন) সকালে গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকার কয়েকটি এটিএম বুথে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে টাকা আছে কিনা জানতে চাইলে কার্ড দিয়ে চেক করতে বলেন।


বনানীতে এনসিসি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী বুথে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি জানিয়ে দেন ঈদের দিন বিকেল থেকে এই বুথে টাকা শেষ হয়ে গেছে।


এদিকে ঈদের ছুটি বৃহস্পতিবার শেষ হলেও গ্রাহকদের এটিএম বুথে টাকার সংকট কাটতে আরও দু’দিন লাগবে। ঈদের ছুটির পরেই শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংকগুলো এটিএম বুথে কোনো টাকা দিতে পারবে না।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩১ মে (শুক্রবার) দিনগত রাতে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বাড্ডার একটি এটিএম বুথ থেকে জালিয়াত চক্র টাকা তুলে নেওয়ার পর তার কোনো প্রমাণ না থাকায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে ঈদের ছুটির সময় এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ ব্যাংকের বুথে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না।


এদিকে এক ধরনের অঘোষিতভাবেই ওই সময় থেকে বন্ধ রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা। আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন গ্রাহক বুধবার (৫ জুন) সকাল থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তুলতে পারেননি। চার থেকে পাঁচটি বুথে গিয়েছিলেন তিনি।


এ বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা যখনই কোনো বুথ টাকা সংকটের খবর পাচ্ছি, তখনই গিয়ে টাকা দিয়ে আসছি। তবে বাণিজ্যিক এলাকার দু’একটি বুথে টাকার সংকট হতে পারে। তবে তা ছিলো সাময়িক।


ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াত চক্রের টাকা তোলার পর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে অন্য ব্যাংকগুলোও। নিরাপত্তা বাড়ানো হলে বিগত সময়ে ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখলেও এবার তা সীমিত আকারে হয়েছে। যেকারণে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার আগেই এটিএম বুথগুলোতে টাকার সংকট তৈরি হয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, জালিয়াত চক্রের কারণে সবাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। তবে বুথে টাকার সংকট থাকার কথা নয়।

গবাদি পশু উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা

গবাদি পশু উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা

admin August 22, 2018

পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গরু নিয়ে রয়েছে রাজনীতি। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গরুকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম হয়। সংখ্যাগুরু হিন্দুরা গো-হত্যাকে চরম অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। মূলত এরই প্রভাবে বাংলাদেশে গরু রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে রপ্তানি না করেও বিশ্বে গরুর গোস্ত রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে দেশটি।
মার্কিন এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন গরুর গোস্ত রপ্তানি করে। ২ মিলিয়ন টন রফতানি করে দ্বিতীয়স্থানে ছিল ব্রাজিল। তালিকায় তিন নম্বরে ছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের পরিমাণ দেড় মিলিয়ন টন। আর তিন দেশ মোট গরুর গোস্ত রপ্তানি করছে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভারত একাই সাড়ে ২৩ শতাংশ রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশে গরু না পাঠিয়েই তারা গোস্ত রপ্তানিতে এই অবস্থান ধরে রেখেছে।
মাত্র কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে কোরবানির পশু হিসেবে ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরতা ছিল। কিন্তু ভারত সরকার হঠাৎ বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সাময়িকভাবে কোরবানির বাজারে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। সাধারণ বাজারেও বেড়ে যায় গরুর গোস্তের দাম। এ কারণে বেড়ে যায় দেশীয় গরুর চাহিদা। তবে ভারতের এই সিদ্ধান্ত কার্যত বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ এখন গরু উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। এর কারণ হচ্ছে দেশীয় গরুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এমনিতেও দেশীয় গরুর গোস্তের স্বাদ ও গুণগত মানের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ হওয়ায় ঘরে ঘরে গরু পালন হচ্ছে এবং সেই সাথে খামারীর সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ৫ লাখ ২২ হাজার খামারী তৈরি হয়েছে, যারা গরু, ছাগলসহ সব ধরনের গবাদি পশু লালন- পালন করে থাকে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, সব মিলিয়ে দেশে এবার কোরবানি উপযোগী ১ কোটি ১৬ লাখ পশু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০/৪৫ লাখই গরু।
তবে বাংলাদেশ প্রাণীজ মাংস উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করলেও এদেশের খামারীরা এখনও লাভজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। তাই এই পেশাটি এখনও একটি স্থিতিশীল পেশায় রূপ নিতে পারেনি। এর পেছনে দুটো প্রধান কারণ রয়েছে। একটি হচ্ছে, ভারত বৈধভাবে গরু রপ্তানি না করলেও চোরাই পথে কিছু গরু ঠিকই বাংলাদেশে আসছে। ইদ বাজারে হঠাৎ ভারতীয় গরুর উপস্থিতি দেশীয় গরুর বাজারে দামের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, দেশে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য। পশু খাদ্যের সংকট হোক অথবা খাদ্য বিক্রেতাদের কারসাজিই হোক, উচ্চমূল্যের কারণে পশু পালনের ক্ষেত্রে খামারীদেরকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় মূল্য না পাওয়ায় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পশুপালনকে বড় পরিসরে পেশা বাছাই করার ধারণাটা এদেশে নতুন। এক্ষেত্রে খামারীদের অভিজ্ঞতা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয় তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য রোধে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। খামারীদের সমস্যা দূর করে তাদেরকে লাভজনক অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারলে আশা করা যায় এদেশে পশু উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিরাট বিপ্লব ঘটে যাবে। সেই সাথে বাজারে গরুর গোস্তের মূল্যেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

কোরবানির বর্জ্য যথাস্থানে ফেলুন

কোরবানির বর্জ্য যথাস্থানে ফেলুন

admin August 22, 2018

প্রতি বছর কোরবানিতে পশুর বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে পরিবেশ দুষিত হয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য নগরীগুলোতে যত্রতত্র পশু কোরবানি দেওয়ার কারণে দুই-তিন যাবত দুর্গন্ধ ও রাস্তায় ময়লা আবর্জনার রাজত্ব বিরাজ করে। এ নিয়ে সিটি করপোশন কর্মীদের গলদঘর্ম হতে হয়। নির্ধারিত সময়ে নগরীগুলো বর্জমুক্ত করাই যেন করপোরেশনগুলোর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা লোকবল সংকটের সেই চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়। ফলে নগরবাসীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পশু কোরবানির ক্ষেত্রে অবশ্য নির্ধারিত স্থান ব্যবহার করা হয় এবং একটি নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য জমা হওয়ার কারণে সেগুলো দ্রুততার সাথেই সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।


নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করায় অনাগ্রহের পেছনে সুযোগ সুবিধার অভাবের পাশাপাশি অনভ্যস্ততা একটি বড় ব্যাপার। আমাদের দেশের লোকজন সাধারণত বাড়ির সামনে, গলিতে, রাস্তায় পশু কোরবানি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এতে পশুর গোস্ত আনা-নেওয়ায় সুবিধা ও পানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের নাগালে পাওয়া যায়। এছাড়া পশুর গোস্ত কাটার কাজে পরিবারের সকলকেই কাছে পাওয়া যায়। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন স্থান নির্ধারণ করে দিলেও পশু জবাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। পানি সমস্যা ও পরিবেশগত দিক ভালো না হওয়ায় এসব স্থানে যেতে আগ্রহ দেখান না সাধারণ মানুষ।


তবে নগরীগুলোর পরিবেশ পরিষ্কার রাখার স্বার্থে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাই নিশ্চিত করতে তৎপর প্রশাসন। এ জন্য পবিত্র ইদুল আযহার ছয় দিন আগেই জবাইয়ের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে মোট দুই হাজার ৯৩৬টি স্থান পশু জবাইয়ের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২০, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৩, রাজশাহী সিটিতে ২১০, চট্টগ্রাম সিটিতে ৩১৪, খুলনা সিটিতে ১৬৩, বরিশাল সিটিতে ১৩৫, সিলেট সিটিতে ৩৬, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ১৮৩, কুমিল্লা সিটিতে ১৯০, রংপুর সিটিতে ৯৯ ও গাজীপুর সিটিতে ৪৪৩টি স্থান রয়েছে।


যথাস্থানে কোরবানি করানোর ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার জন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। এ জন্য এর উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তাগুলোর প্রচার আরো বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও ভ‚মিকা রয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করা গেলে দেখা যাবে সিটি করপোরেশনগুলোর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগরীগুলোকে পরিষ্কার করতে গিয়ে যে পরিমাণে গলদঘর্ম হন তার অনেকটাই লাঘব হয়ে যাবে। শতভাগ পশু নির্ধারিত স্থানে কোরবানি নিশ্চিত করার আগে পর্যন্ত যেহেতু যত্রতত্র পশু জবাই হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যার যার পশুর বর্জ্য অলি-গলিতে জমা না করে করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো সহজেই ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে পারেন। সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এটুকু সহযোগিতা করা আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য।


ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ইদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। আমাদের বসবাসের পরিবেশ হোক আরো সুন্দর। সবাইকে ইদুল আযহার শুভেচ্ছা।

অবিশ্বাস আর অনাস্থা নিয়ে বেশিদিন চলা যাবে না

অবিশ্বাস আর অনাস্থা নিয়ে বেশিদিন চলা যাবে না

admin August 07, 2018

রংপুর এক্সপ্রেস: বছরের পর বছর মরুকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা সমগ্র বন যখন শুষ্ক হয়, তখন বাইরে থেকে অগ্নিসংযােগের প্রয়োজন হয় না, সামান্য দুটো শাখার ঘর্ষণেই দাবানল জ্বলে উঠে অল্প সময়ের মধ্যেই সমগ্র বন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তেমনি দশকের পর দশক ধরে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থার প্রতিটি পদে পদে দুর্নীতি, অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব, অনিয়ম চলতে চলতে কোথাও আস্থা ও বিশ্বাসের ছিটেফোঁটাও নেই।


এজন্য যে কোনো একটা ইস্যুতেই দাবানল জ্বলে ওঠে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন শিক্ষার্থী প্রাণ হারানোর ঘটনায় তেমনি জ্বলে ওঠে ছাত্রসমাজ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা শহরের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলো। ট্রাফিক পুলিশকে ধুয়ো ধ্বনি শুনিয়ে পুরো রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলো ছোট ছোট ছোলমেয়েরা। এই অভাবনীয় প্রতিক্রিয়াকে কেবল একটি দুর্ঘটনায় দু’জন শিক্ষার্থীয় মৃত্যুর প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। বরং এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলার প্রতি আমাদের নতুনপ্রজ্যন্মর অনান্থা আর অবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।



[পথদুর্ঘটনা নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর যত বিরুপ মন্তব্য]


প্রমাণ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি। তাদেরকে একটা কথাই বারবার বলতে শোনা গেছে, আগে দাবি বাস্তবায়ন হোক, তারপর আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসব। পুরো রাজধানী এক সপ্তাহের জন্য যেভাবে অচল হয়ে পড়ে, শেষ পর্যন্ত তারা যে সেই অবস্থান থেকে সরে এলো। তার বড় কারণ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।



[নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন: ছোটদের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ]


এই ভোগান্থির কষ্ট বিবেচনা করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য সবমহল থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি যখন অনুরোধ করা হলো তখনই তারা স্কুলে ফিরে গেছে। কথা হচ্ছে এই অবিশ্বাস, এই অনান্থা নিয়ে রাষ্ট্র বেশিদিন চলতে পারে না।আজকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে, কিছুদিন আগে দেখা গেছে শিক্ষকরা নেমেছিলেন। আগামীতে দেখা যাবে অভিভাবকেরা নামবেন। কোনো ইস্যু পেলে শ্রমিক, মজুর, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসক, নার্স, কেউ বাদ যায় না, হয় রাস্তায় নেমে আসেন, না হয় কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে সবকিছু অচল করে দেন। এর কারণ কি?



[আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন]


আমাদের নীতি নির্ধারকদের বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। গোটা ব্যবস্থাটা এত অবিশ্বাস আর অনাস্থার উপর কোনো রকম দাঁড়িয়ে আছে যে কোনো সময় এটা ধসে পড়তে পারে, যে কোনো ক্ষুদ্র একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে শুষ্ক বনের ন্যায় দাবানল ছড়িয়ে পড়তে পায়ে মুহূর্তের মধ্যেই একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাত্তব্যেবন্থা প্রতিষ্ঠা না করে জোড়াতালি দিয়ে দিয়ে তৈরি ভঙ্গুর এ ব্যবস্থাকে ঠেকানোর জন্য এই দাবানলকে কতদিন ফিরিয়ে রাখা যাবে সেটাই এখন প্রশ্ন।

মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

admin August 01, 2018

দারিদ্র থেকে মুক্তির আশায় পুরুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের নারী কর্মীরাও বিদেশে  বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি দিয়ে থাকেন। নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দেশ ছেড়ে অনেক স্বপ্ন নিয়েই সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশে গিয়ে থাকেন। উন্নত দেশ হওয়ায় এসব দেশে সাধারণ কোনো কাজ পেলেই অর্থের অভাব হবে না- এই আশ্বাস দিয়ে দালালরা খুব সহজেই নারী শ্রমিকদের মনে আশার সঞ্চার করে। এভাবে তারা বিদেশে পাঠাতে যতটা না ব্যয় হয়, তার চেয়েও বেশি খরচ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর চরম বাস্তবতার সঙ্গে পরাজিত হয়ে সব স্বপ্নকে মধ্যপ্রাচ্যের ওই তপ্ত মরুতে চাপা ফিরে আসে তারা। না হয় তাদের দু:খের শেষ, না শেষ হয় কষ্টের সেই করুন গল্প। তাই বিদেশে এসব শ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।



[পথদুর্ঘটনা নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর যত বিরুপ মন্তব্য]


মিডিয়ার কল্যাণে এ দেশের নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের ভয়াবহতা এখন প্রায়শই খবর পাওয়া যায়। নির্মম অত্যাচার সইতে না পেরে তারা দেশে ফিরে আসছে। আবার অনেকে সেখানে কি অবস্থায় আছে সেটা জানারও উপায় নেই। যারা ফিরে আসছেন তারা বলছেন, ছ্যাঁকা, বৈদ্যুতিক শক, অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে নেওয়া, পাসপোর্ট রেখে দেওয়া, খাবার খেতে না দেওয়া, ধর্ষন ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। আর নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরিও ছাড়া যায় না; দেশেও ফেরত আসা যায় না।

আবার অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করতে গেলে জরিমানা থেকে শুরু করে তাদের ফেরত পাঠানোর ভয়তো আছেই। তাছাড়া কর্মী-মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে উল্টো কর্মীর বিরুদ্ধে তখন চুরির অপবাদ দেওয়া হয়। গৃহকর্তারা যখন নির্যাতন করে, তখন আসলে সেসব নির্যাতনের প্রমাণ রাখা খুবই কঠিন। কারণ এগুলোর বেশিরভাগই মালিকের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানে করা হয়ে থাকে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা যায় না।



[পথদুর্ঘটনা: বেপরোয়া ড্রাইভারদের বাগে আনতে হবে]


আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে, মধ্যপ্রাচ্যে এদেশের শ্রমিকদের সংখ্যা একুশ লাখের কাছাকাছি। দেশের ৭ লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে কাজ করছেন, যার মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ সৌদিতে। এখন নির্যাতিত নারীরা ফেরত আসছে। এই বিষয়টি আসলে এখন নারী নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে দেশের জন্যও অপমানজনক হয়ে গেছে। সৌদিরা জানে, আইনগতভাবে কিছু করা যাবে না তাদের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশটাকেও এ ধরনের আচরণের দ্বারা তারা যথেষ্ট অপমান করে যাচ্ছে। তবে নির্যাতন বাড়ার ফলে নারী শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। কারণ পেটের দায়ে আমাদের নারীরা যেন বাধ্য হয়ে পড়েছে দাসত্ব খাটতে।




[মিয়ানমার সরকারের তামাশা ও দাম্ভিক আচরণ]



অন্যদিকে ভিন্ন গল্পও চালু আছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নারীরা খাপ খাওয়াতে পারছে না অথবা অধিকাংশই দেশে এসে মিথ্যা গল্প বানাচ্ছে। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ দাবি সর্বৈব সত্য হতে পারে না। কারণ এ ধরনের ঘটনার অহরহ বর্ণনা নিয়মিত শোনা যায়। তাছাড়া সৌদি গৃহমালিকরা যদি এ ধরনের অমানবিক আচরণ করেও থাকে তবে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসাও বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে উপায় একটাই- আর তা হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে ওসব দেশে তাদেরকে পাঠানোই একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।


যেহেতু আমরা ওদের কাছে কর্মসংস্থানপ্রার্থী সেহেতু আমরা তাদেরকে বাগে আনতে পারছি না। বরং আমাদেরকেই নিচু হয়ে তাদের অমানবিক আচরণ মেনে নিতে হচ্ছে। এমতবস্থায়, আত্মমর্যাদার স্বার্থে, নির্যাতনের প্রতিবাদে অবশ্যই আমাদেরকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছাতে হবে। এভাবে আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে রেমিটেন্স এনে দেশ উন্নত করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। রেমিট্যান্স আসার কারণে নারীদেরকে আমরা এভাবে বিকিয়ে দিতে পারি না। বিদেশে নির্যাতিত নারীদের কান্না নিয়ত দেশবাসীর আত্মমর্যাদায় আঘাত করছে। তাই রাষ্ট্রকেই দেশের সম্মান ধরে রাখায় পদক্ষেপ নিতে হবে।

পথদুর্ঘটনা নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর যত বিরুপ মন্তব্য

পথদুর্ঘটনা নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর যত বিরুপ মন্তব্য

admin July 31, 2018

বাংলাদেশ সরকারেরর নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। তিনি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়াকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতিও। দেশের পার্লামেন্টের একজন সংসদ সদস্য, একজন মন্ত্রী। শ্রমিক সমিতির সভাপতি হওয়ার দরুন মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর থেকে বরাবরই পথদুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তিনি গাড়ির ড্রাইভার, হেলপারদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন তিনি। পথদুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুও যেন তার কাছে হাস্যকর ব্যাপার। সম্প্রতি তার মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকারের অন্য মন্ত্রীরাও। সোমবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই দু:খ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তাকে সংযত হয়ে কথা বলা নির্দেশ দিয়েছেন।


গত রবিবার ঢাকার বিমানবন্দরে বেপরোয়া এক বাসের চাপায় মারা যান দুই কলেজ শিক্ষার্থী। এতেও মন্ত্রী পক্ষ নেন গাড়ির শ্রমিকদের, এ নিয়ে গত রবিবার থেকে স্যোশাল মিডিয়ায় চলছে তার সমালোচনা। ওই পথদুর্ঘটনার পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ভারতের এক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে অট্টহাসি হাসেন।



আরও পড়তে পারেন


[পথদুর্ঘটনা: বেপরোয়া ড্রাইভারদের বাগে আনতে হবে]


শুধই এই প্রথম নয় এর পূর্বে বরাবরই তিনি এমন বিরুপ মন্তব্য করেছেন শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে। ২০১১ সালে এক সমাবেশে রাস্তার গরু-ছাগল বা মানুষ চিনতে পারলেই চালকদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিতে হবে এমন বক্তব্য দেন। এ নিয়ে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।


পথদুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় এক ড্রাইভারের যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আদালত। এতে পরিবহন শ্রমিকরা খুলনা বিভাগের ধর্মঘট শুরু করে। ওই সময়ই সাভারে পথদুর্ঘটনায় এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাকের ড্রাইভারকে ফাঁসির দণ্ড দিলে সারা দেশে ধর্মঘট করে পরিবহন শ্রমিকরা। এসব ধর্মঘটকে প্রকাশে সমর্থন দেন এই মন্ত্রী। ওই সময় তিনি বলেছিলেন শ্রমিকরা আর কাজ করবেনা । তারা অবসর নিয়েছে।


চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বাস চালকদের বেপরোয়া গতি, বাসের রেষারেষির কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ঘটলে ফুসে ওঠে সচেতন মহল। এ নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে শাজাহান খান পথদুর্ঘটনার জন্য চালকদের সাজা বাড়ানো হলে দুর্ঘটনা কমবে না বলে মন্তব্য করে। এসব নিয়ে নিষ্ক্রিয়তা ও চালকের শাস্তির সরাসরি বিরুদ্ধাচারণ করায় অনেকেকেই তার রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। শ্রমিক এসোসিয়েশনের নেতা ও সরকারের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এসব কিভাবে সম্ভব?

গুলাশানে আক্রমণ মামলার অভিযোগপত্র ও প্রত্যাশা

গুলাশানে আক্রমণ মামলার অভিযোগপত্র ও প্রত্যাশা

admin July 25, 2018

গুলশানের হোলি আর্টিসান জঙ্গি হামলার দুই বছর ২২ দিনের দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত সোমবার দায়ের করা ওই কেসের অভিযোগপত্র (Charge sheet) কোর্টে জমা দিয়েছে ইনভেসটিগেশন টিম। কেসটি ইনভেসটিগেশন করে পুলিশের Counter Terrorism and Trans-National Crimes (সিটিটিসি) ইউনিট। অভিযোগপত্রে জীবিত ৮ জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (Charge sheet) দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে অন্য অভিযুক্ত ১৩ জঙ্গি ২০১৬ সালের ০১ জুলাই থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়। জঙ্গি হামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেজাউল হাসনাত করিমকে। একই ঘটনায় আটক কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে এক বছর আগে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে ৬ জন পুলিশ হেফাজতে ও দুই জঙ্গি পলাতক আছে। পলাতক দুই জন ভারতে লুকিয়ে আছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। অভিযানে নিহত হোলি আর্টিসানের পাচক সাইফুল ইসলামকে শুরুতে সন্দেহের তালিকায় রাখা হলেও তার সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ তদন্তকারীরা পাননি। এমনকি জঙ্গি হামলার পর আটক হোলি আর্টিসানের কর্মী জাকির হোসেন শাওনের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগপত্র প্রদানের দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, এ হামলাটি চালানোর পেছনে জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান, আল কায়েদা, আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণ করা। জঙ্গিরা মনে করতো, ওসব জঙ্গি সংগঠনের অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র আছে। তাই তাদের দৃষ্টিতে আসতে পারলে এসব অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে। সিসিটিসির প্রধান আরও জানান, জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার। তারা মনে করেছিল, এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সরকার পড়বে বিপদে।


ঢাকায় হামলা চালানোর পেছনে জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারন্যাশনাল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ। জঙ্গিরা মনে করতো, তাদের দৃষ্টিতে আসতে পারলে তারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তিগত সাহায্য পাবে। এছাড়াও জঙ্গিরা আক্রমণ করে বিভিন্নভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছিলো।


২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিসান বেকারিতে থাকা বিদেশিসহ সব অতিথিকে জিম্মি করে ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। রাতে পুলিশ-র‌্যাবের যৌথ অভিযানে জঙ্গিদের গুলি ও গ্রেনেড হামলায় ৩৩ পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্য আহত হন। এদের মধ্যে সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালেহ উদ্দিন রাতেই মারা যান। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অপারেশনে ৫ জঙ্গিসহ ৬ নিহত হয়।
বাংলাদেশে সংঘটিত এ জঙ্গি হামলাটি সারা বিশ্বে ঘটা বড় বড় জঙ্গি হামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা। ঘটনার রাত ও পরে বিশ্ববাসীর নজর ছিল ঢাকার এই ঘটনার দিকে। ঐ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে গজিয়ে ওঠা চরমপন্থী সংগঠন আইসিস এর রমরমা অবস্থা। তারা বিশ্বজুড়েই নানা নৃশংস ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই হত্যকারী তরুণ জঙ্গিগুলোগুলো এ অভিযানে নামে। ইসলামের নামে গজিয়ে ওঠা এসব উগ্রপন্থীরা মূলত ধর্মীয় বিকৃত ব্যাখ্যা দ্বারা উদ্ভুদ্ধ হয়ে মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছিল। অর্থাৎ এদের পেছনে একটা আদর্শ কাজ করেছে। যে কারণে তারা আত্মঘাতী হতেও দ্বিধা বোধ করে না। কিন্তু তাদের এ আদর্শ ছিল ভুল আদর্শ। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ আমাদের দেশের এসব ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা বর্তমানে একেবারে নির্মূলের পথে। মানুষ মেরে ধর্মপালন, নৃশংসতা চালানোর নীতিকে সাধারণ মানুষও সমর্থন করেনি। যে কারণে তারা কোথাও সহযোগিতা না পেয়ে ধরাশায়ী হয়ে জেল খাটছে।
আত্মঘাতী নীতিতে (ধর্মীয় বিকৃত নীতি) উদ্বুদ্ধ সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা সহজ কোনো কাজ ছিল না। তবে বেশকিছু সামাজিক ও ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক দল এদের আদর্শকে বিকৃত ও অগ্রহণযোগ্য আদর্শ হিসেবে প্রমাণ করে দেওয়ার কাজটি করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সশস্ত্র মোকাবেলা- এই দুইয়ের সম্মিলনেই আজ এ সফলতা এসেছে। দুই পক্ষকেই আমরা অভিনন্দন জানাই। একই সাথে প্রত্যাশা করি, অভিযোগপত্রে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা আইনের দ্বারা যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি হবে এবং যারা পলাতক রয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এভাবেই ভবিষ্যতে ধর্মের নামে উগ্রবাদের উত্থান একদিন পুরোপুরি বন্ধ হবেই হবে।



আরও পড়তে পারেন-


‘মফিজ’ নামের ইতিবৃত্ত: গরিবদের উপকারী বন্ধু থেকে এ নামের উৎপত্তি!

‘মফিজ’ নামের ইতিবৃত্ত: গরিবদের উপকারী বন্ধু থেকে এ নামের উৎপত্তি!

admin July 12, 2018

দীর্ঘ অনেকদিন যাবৎ রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের লোকদেরকে রাজধানীতে অনেকে ব্যাঙ্গ করে ‘মফিজ’ নামে ডকেন। কতদিন যাবৎ তা জানা নেই কারও। তবে কেউ কেউ মনে করেন আশি বা নব্বই দশকের কোন একসময় থেকে এ প্রচলন শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই শব্দটা সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকা বা গাজীপুরে বেশি প্রচলিত। এখন শুধু উত্তরবঙ্গের লোকজনকেও নয়, ইদানীং সহজ-সরল বা কম চালাক মানুষদেরকেও মফিজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এটা বেশ প্রচলিত হয়েছে বা হচ্ছে, বলা হয় ‘মফিজ কোথাকার?’ মফিজ, ‘তুইতো দেখি রংপুরের মফিজ’, ‘তুইকি রংপুরের মফিজ নাকি’ ইত্যাদি।


মফিজ কেন বলা হয় ? -এটা নিয়ে আমরা কেউ তেমন কিছু জানিনা বা অনেকেই জানেন। অনেক সময় জানতে ইচ্ছে করে যে কেন মফিজ বলা হয় উত্তরবঙ্গের মানুষদের। রংপুরের বা উত্তরাঞ্চলের মানুষকে মফিজ বলা নিয়ে অনেক রকমের গল্প প্রচলিত আছে। যেগুলোর সত্যতা যাচাই করা যায় নি যে, মফিজ নামে কাউকে কেন্দ্র করেই এই নামকরণ নাকি কম চালাক মানুষদের ঠাট্টা করার জন্য এটি নিছকই একটি প্রচলন মাত্র।



গাইবান্ধা জেলার একজন মফিজ কে কেন্দ্র করে। যেখানে গরিব-দিনমজুর শ্রেণির উপকারী বন্ধু মফিজ।

মফিজ উপাখ্যান নিয়ে যে গল্পগুলো প্রচলিত তার মধ্যে একটি গাইবান্ধা জেলার একজন মফিজ কে কেন্দ্র করে। যেখানে গরিব-দিনমজুর শ্রেণির উপকারী বন্ধু মফিজ। বলা হয়, গাইবান্ধার কোন এক গ্রামের সহজ-সরল, সৎ একজন ড্রাইভার ছিলেন। তার নাম ছিল মফিজ। আমরা তাকে মফিজ সাহেব হিসেবে উল্লেখ করবো। মফিজ সাহেব তার জমানো টাকা দিয়ে একবার ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে একটি বাস চালু করেন। মানবদরদী মফিজ সাহেব নূন্যতম ভাড়ায় দিনমজুর লোকেদের ঢাকায় নিয়ে যেতেন। কালক্রমে একসময় মফিজ সাহেব নিজের আর গাড়ি চালাতেন না। তিনি তখন অন্য ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখলেন। এদিকে দিনমজুর গরিব লোকজন ভাড়া সাশ্রয়ের জন্য মফিজ সাহেবের বাড়িতে যায় স্বল্প ভাড়ায় তাদের ঢাকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে।


ফলে মফিজ সাহেব তাদের স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াতের জন্য দিনমজুর শ্রেণিটিকে তার নিজের নামের স্বাক্ষর (অর্থাৎ ‘মফিজ’) করে কাগজ দিতেন। যা সুপারভাইজারকে দেখিয়ে নামমাত্র ভাড়ায় মফিজ সাহেবের বাসের ছাদে যাতায়াত করতেন তারা। আর বাস যাতায়াতের পূর্বে বাসের সুপারভাইজার ছাদে যাতায়াতের কয়জনকে বুঝাতে মফিজের কয়জন? আছে তাদেরকে ডাক দিতেন। সময়ক্রমে সুপারভাইজার ডাক দিতেন কতজন মফিজ আছে। এভাবেই পরবর্তীতে বাসের ছাদে যাতায়াতকারী লোকেদেরকে মফিজ নামে ডাকা হয়। যা পরবর্তীতের রংপুর বা কুড়িগ্রাম সহ উত্তরাঞ্চল থেকে বাসের ছাদে যাতায়াতকারীদেরকে বলা হতো। পরবর্তীতের উত্তরাঞ্চলের সহজ-সরল বা কম চালাক মানুষদেরকেও মফিজ বলা শুরু হলো। এর পরবর্তীতে যা ঘটলো তা হলো, একশ্রেণির লোক উত্তরাঞ্চলের মানুষ বলতেই মফিজ বলা শুরু করলো। যা এখনও প্রচলিত।



আরও পড়ুন: অনেক বদলেছে উত্তরবঙ্গ


আরও একটি ঘটনা আছে। যেখানেও মফিজ উদ্দিন নামে একজনকে পাওয়া যায়। যার ভূমিকাও অসহায়, গরিব-দু:খী মানুষের বন্ধুরুপে। এটা জ্ঞাতব্য যে, উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে কুড়িগ্রাম জেলা বেশ বন্যা প্রবণ এলাকা। প্রচলিত গল্প অনুযায়ী ঘটনাটি আশির দশকের কোন বন্যা পরবর্তী। সেটা অষ্ট আশির বন্যা কিনা তা জানা যায় নি, হয়তোবা নয়। সেসময় কুড়িগ্রামের প্রায় সব উপজেলায় খুব বড় আকারের বন্যা হয়। বন্যায় ওইসব বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘর, জমিসহ সবকিছু হাড়িয়ে অত্যান্ত কষ্টে দিন যাপন করছিল। একসময় ওইসব মানুষ অভাবের তারণায় জীবিকার তাগিতে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমায়। ওইসময় ঢাকায় যাওয়ার জন্য তারা প্রথমে রংপুরের মডার্ণ বাসস্ট্যান্ড এ আসে ঢাকায় যাওয়ার বাস ধরতে।


ওইসময় বাস কম ছিল। বলা হয় যে, যানবাহন কম হলেও দালাল (চেনমাস্টার) ছিল অনেক। দালালদের মধ্যে একজনের নাম ছিল মফিজ উদ্দিন। যিনি ওই মানুষদের অনুরোধে অর্ধেক ভাড়ায় বাসের ছাদে করে কুড়িগ্রামের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতেন। আর এভাবেই বাসের ছাদে ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ এ অঞ্চলের অনেক মানুষ নিতে লাগলেন। সময়ক্রমে বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট সুপাভাইবার বা হেলপাররা বাসের ছাদে যাতায়াতকারী বোঝাতে মফিজের কতজন? (মফিজ উদ্দিনের দেওয়া যাত্রী কতজন), পরবর্তীতে কতজন মফিজ আছে? ইত্যাদি বাক্যের প্রচলন শুরু করেন। ফলে বাসের ছাদে যাতায়াতাকারীরা ‘মফিজ’ আখ্যা পেয়ে যান। আর পরবর্তীতে গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষদেরকেই মফিজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। যা এখনও প্রচলিত।


উপরের ঘটনা ছাড়াও অনলাইনে ঘেটে এক ব্লগারের পোস্টে অন্য একটি তথ্য পাওয়া গেল। মফিজ শব্দটি নাকি মপীজ এর বিকৃতরুপ। মপীজ অর্থ বলা হয়েছে মঙ্গা পীড়িত জনগন। উত্তরাঞ্চল একসময় খুবই মঙ্গা পীড়িত অঞ্চল ছিল। সেসময় উত্তরবঙ্গের লোকেদের জন্য ওই ক্যাটাগরিতে সাহায্য বরাদ্দ থাকতো। তারই বিকৃতরুপ মফিজ। যদিও বর্তমানে উত্তরবঙ্গের লোকদের অনেক উন্নতি হয়েছে তবুও সেই আগের নামটি রয়েই গেছে।


উপরের কোন ঘটনারই বাস্তবে কোন ভিত্তি আছে কিনা বা সঠিক কিনা তা যাচাই করা সম্ভব হয় নি। মফিজ সাহেব বা মফিজ উদ্দিন নামের কাররই বর্তমানে উপস্থিতি নেই। তারা এখনও জীবিত নাকি মৃত, তাও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। কেননা যারা এসব ঘটনা বলছেন, তারা নির্দিষ্ট সময় বা কোন এলাকার/কে তা উল্লেখ করছেন না। আবার মফিজ উপাখ্যানের জন্য প্রাসঙ্গিক দুই স্থানে প্রায় একই ঘটনাও ভাববার বিষয়! তবে এমনও হতে পারে দুই ঘটনাই সত্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে! আসলেই ‘মফিজ’ নামকরণের সঠিক ইতিহাস কি?

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three