নিউজ ডেস্ক:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ভুট্টাক্ষেত থেকে সোমবার অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধারের পরদিন তাকে সনাক্ত করা হয় গোলাপি বেগম নামে। ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারিক গোরস্থানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাফন করা হয় তার লাশ। একদিন পর বুধবার সকালে গোলাপী বেগম থানায় ফিরে জানালেন তিনি মরেননি।
গোলাপি বেগম বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার পাঁচপাড়া এলাকার বাকপ্রতিবন্ধী মনির হোসেনের স্ত্রী।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসীন আলী জানান, গত সোমবার ভুট্টা ক্ষেত থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। তার মুখমন্ডল ছিল পোড়া মবিলে ঝলসানো। এ কারণে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছিল না কেউ।
লাশের পাশ থেকে একটি কালো বোরকা, এক জোড়া স্যান্ডেল, একটি গুলের কোটা উদ্ধার করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার গোলাপীর পরিবারের লোকজন থানায় এসে উদ্ধার করা আলামত দেখে ওই লাশ সনাক্ত করলে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পারিবারিক করবস্থানে লাশ দাফনও করা হয়।
গোলাপি বেগম বলেন, গত ২৯ মে বুধবার ঈদের আগে তিনি রুস্তমপুর হাটে ৪২ হাজার টাকায় তার পালিত একটি গরু বিক্রি করেন। এই টাকা নেয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে চাপ দিতে থাকে। নিরুপায় হয়ে তিনি পরদিন বিদ্যুৎ বিল দেয়ার নাম করে ৬ বছরের সন্তানকে রেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাজশাহীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেন।
পরে ৬ বছরের সন্তান মারুফ হোসেন ও পেটের ৫ মাসের সন্তানের কথা ভেবে বুধবার সকালে রাজশাহী থেকে থেকে তিনি মহানন্দা ট্রেনে আড়ানী স্টেশনে এসে নামেন। এ সময় স্থানীয় কিছু মানুষ তাকে চিনতে পেরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
গোলাপি বেগমের ভাসুর মাজদার রহমান বলেন, গোলাপী বেগম বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আমি বাদী হয়ে গত ১ জুন বাঘা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। মৃত ওই নারীর মুখে মবিল মাখানোর কারণে আমরা সঠিকভাবে লাশ চিনতে পারিনি।
বাঘা থানার ওসি বলেন, এখন মৃত নারীর পরিচয় মিলছে, তার নাম দোলেনা বেগম (৩৮)। বাড়ি পাশ্ববর্তী চারঘাট উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের চারা বটতলায়। তার স্বামীর নাম সুরুজ মিয়া। তিনি উদ্ধার হওয়া লাশের পোশাক, স্যান্ডেল ও ছবি দেখে পুলিশকে জানিয়েছেন মৃত ওই নারী তাঁর স্ত্রী। গত এক সপ্তাহ আগে তিনি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর থেকে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খুঁজেও তাকে পাননি। দু’দিন আগে চারঘাট থানায় একটি জিডি করেন। সেখান থেকে তথ্য পেয়ে বাঘা থানায় এসে তাঁর স্ত্রীর ছবি দেখে তিনি লাশ সনাক্ত করেন।
বাঘা-চারঘাট সার্কেলের সিনিয়র এএসপি নুরে আলম বলেন, আমরা প্রথমে জেনেছিলোম উদ্ধার হওয়া লাশ আড়ানী পৌর এলাকার পাঁচপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মোমিনের স্ত্রী গোলাপির। কিন্তু বুধবার সকালে গোলাপি নিজ থেকে থানায় হাজির হওয়ায় জানলাম এ লাশটি সুরুজ মিয়ার স্ত্রী দোলেনার। এখন সুরুজ মিয়ার তথ্য মতে পুলিশ অগ্রসর হচ্ছে। আশা করা যায় খুব শিগগির তার হত্যার প্রকৃত রহস্য আমরা উদঘাটন করতে সক্ষম হবো।