রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির বলেছেন- ‘সব বানোয়াট’। মঙ্গলবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত বাছির বলেন, যে অভিযোগ করেছে তাকে (ডিআইজি মিজান) প্রমাণ করতে বলুন। চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে। এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান এনামুল বাছির।
সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান রোববার দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। তবে ঘুষ দেওয়াও যে ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
ডিআইজি মিজান বলেন, সব জেনেশুনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’। তিনি যে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত, তা প্রমাণ করতে, তাকে ফাঁসানোর জন্য করেছি এবং নিজের সেইফটির জন্য করেছি। মঙ্গলবার দুদক কার্যালয়ে নিজের কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের তোপে পড়ে দুদক পরিচালক বাছির অসহায় ভঙ্গিতে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি দপ্তর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে বার বার প্রশ্ন করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা ওই অডিওর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা বানোয়াট একটা অভিযোগ। আপনারা যত প্রকারের এক্সপার্ট নিয়ে পারেন প্রমাণ করেন। যেইভাবে পারেন প্রমাণ করেন। তাকে প্রমাণ নিয়ে আসতে বলেন। মিথ্যার কোনো প্রমাণ থাকে না। ডিআইজি মিজান মিথ্যা অভিযোগ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন কিনা- সেই প্রশ্ন বাছিরকে করেন সাংবাদিকরা। এই দুদক কর্মকর্তা উত্তরে বলেন, আমার নিজেরই চাকরি নাই। মামলা করবো কি? মামলার প্রশ্ন অবান্তর।
সব রেকর্ড আছে, দাবি ডিআইজি মিজানের: দুর্নীতি দমন কমিশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট বললেও অভিযোগকারী ডিআইজি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তার কাছে সব রেকর্ড আছে। কমিশন থেকে ডাকা হলে তিনি তা উপস্থাপন করবেন। মঙ্গলবার দুপুরে বেইলি রোডের বাসায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান। মঙ্গলবার দুপুরে ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কমিটি করে অডিওটির সত্যতা যাচাই করুক, সংশ্লিষ্ট কমিশনে পাঠাক। এই ভোকালটা ওঁর (এনামুল বাছিরের) কিনা দেখুক। তাহলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
অডিও ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, নিজেকে সেভ করার জন্য এটা করেছি। আমার কাছে সব রেকর্ড আছে। আমাকে যখন ডাকবে তখন সব দেখাবো। কেন তিনি ঘুষ দিয়েছেন -এই প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্নভাবে আমাকে প্রেশার ক্রিয়েট করে। বারবার দেখা করতে চায়। আমি দেখা করলাম। যখন দেখলাম যে এই লোকটা নিজেই দুর্নীতিবাজ, তখন সেটা তো প্রমাণ করতে হবে। আমি এই বিষয়টাই প্রমাণ করেছি। আমি ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়েছি। আমার স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তার সব তথ্য আছে। আমি যথাসময়ে অনুসন্ধান কমিটিকে প্রমাণ দেবো।
দুদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি কমিশনের কাছে অন্যায় কিছু চাচ্ছি না। আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার চাচ্ছি। ওঁরা যদি সেটা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাকে আইনি আশ্রয় নিতে হবে। আমি আশা করবো তদন্ত কর্মকর্তা কোনও রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে নয়, স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর জাস্টিস অ্যাপ্লাই করবেন। জিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।
অনুসন্ধানকালে তিনি কয়েক দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। তিনি একটি অডিও ফাঁস করেন। যেখানে ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের কথোপকথন রয়েছে। এ অভিযোগের পর কমিশন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আলাদা তদন্ত হবে বলে রোববার সাংবাদিকদের জানান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।