আন্তর্জাতিক: গতকাল ভারতের অাসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে চল্লিশ লাখ লোকের নাম বাদ যাওয়ার প্রতিবাদে ‘বিজেপি হটাও’ স্লোগানে বিক্ষোভ-মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতা। এসময় ত্রুটিপূর্ণ এনআরসি বাতিল করার দাবি জানায় ক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়াও প্রতিবাদী জনতা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার বহন করে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
এনআরসির নামে বাঙালিদের হয়রানি করা চলবে না’, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করো, দেশে কল্যাণের জন্য কাজ করো’, ‘নিরপেক্ষভাবে তথ্য যাচাই করে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে’, ‘এনআরসি ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে হবে’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতল পুড়িয়ে প্রতিবাদী মানুষজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে মুসলিমদের পাশপাশি দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া মানুষজনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
পরে এক জমায়েতে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘অনেক আদিবাসী ভাইবোনেরা এখানে আছেন, যাদের কোনো নথি নেই, তাহলে তাদের কী বাংলাদেশে পার করে দেবে মোদি সরকার? আমরা মুসলিম হয়ে ওয়াদা করছি যে, আমরা আদিবাসী ভাইবোনেদের পাশি আছি। কোনোভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, জুলুম, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার কোনরকম ষড়যন্ত্রকে আমরা বরদাস্ত করব না, মেনে নেবো না।’
অসমের করিমগঞ্জ উত্তরের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ তার ভাষণে বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ হয় যে, ২০১৪ সালের ভোটার লিস্ট অনুযায়ী আমারা ভোট দিয়েছি, ২০১৬ সালের ভোটার লিস্টে নাম আছে, ২০১৮ সালের ভোটার লিস্টেও নাম আছে। কিন্তু সেই মানুষদেরও আবার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়! বারবার অসমের বাঙালিদের এভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। নথিপত্র কেবল বাঙালিদের জন্য দরকার, কিন্তু কিছু মানুষের জন্য নথির কোনো দরকার হয় না। যাদের নাম নেই তারা যখন এনআরসি কেন্দ্রে কারণ জানতে যাচ্ছেন তাদেরকে বলা হচ্ছে, ‘টেকনিক্যাল এরর’, ‘নো রিজন’ ইত্যাদি। কিন্তু এসব তো তাদের সমস্যা আমাদের কেন সেজন্য দুর্ভোগে পড়তে হবে?’
জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বাঙালি রিফিউজিস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘দলিত ও মুসলিমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে কে কী আইন করল তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সেজন্য দলিত ও মুসলিমদের একে অন্যের সমস্যায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নূরুদ্দিন, অসমের করিমগঞ্জ উত্তরের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বাঙালি রিফিউজিস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস,স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন (এসআইও) পশ্চিমবঙ্গের সংগঠন সম্পাদক শেখ খালিদ আলী, এসআইও’র জনসংযোগ সম্পাদক সুজাউদ্দিন আহমেদ, ‘সদ্ভাবনা মঞ্চ’-এর রাজ্য আহ্বায়ক মুহাম্মদ তাহেরুদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।