বিশ্ব জনমত কিংবা মানবতার তোয়াক্কা না করে মিয়ানমার রাষ্ট্রটি সকলকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে। যা মূলত বিশ্বের শান্তিপ্রিয় দেশগুলোকে নিয়ে তামাশা ও মিয়ানমারের দাম্ভিক আচরণের বহি:প্রকাশ। তারা সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় হত্যা ও ধর্ষণ করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। হাজার হাজার বসতভিটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে তারা নৃশংসতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রগুলি তাদের অমানবিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছে। ফলে এক সময় রোহিঙ্গাদের প্রতি মৌখিকভাবে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করলেও তারা সেটা আন্তরিকভাবে করেনি বলে তাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে বার বার প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার ব্যাপারে চুক্তিও করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা আনুষ্ঠানিকভাবে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ দেশটিতে ফেরত যেতে চাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে সেখানকার পরিস্থিতি এখনো শঙ্কাজনক বলে মনে করছেন জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারে এখনো নিপীড়ন বন্ধ হয়নি। এখনো ‘হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া' অব্যাহত আছে। এ বছরও ১১ হাজার অধিবাসী রাখাইন থেকে পালিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এর অর্থ এখনো সেখানে সহিংসতা চলছে, যার ফলে তারা পালাতে বাধ্য হচ্ছে।
মিয়ানমারের প্রতিনিয়ত দাম্ভিক আচরণের প্রেক্ষিতে, তাদের জবাব কেবল ধিক্কার বা নিন্দা জানানোতেই যথার্থ নয়। তাই এখন মিয়ানমারকে প্রয়োজনে শক্তিপ্রয়োগ করে শায়েস্তা করা । এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসমূহের অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ।
একদিকে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়া ও অন্যদিকে তাদের ফেরার পরিবেশ তৈরি না করার পাশাপাশি তারা ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদেরকে গ্রেফতার করছে। এটা শুধু রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্মমতা প্রদর্শনই নয়, বিশ্ববাসীর সাথে তামাশাও বটে। মিয়ানমারের মতো এমন ভণ্ডামিপূর্ণ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের একটা উচিত জবাব অবশ্যই বিশ্ববাসীর তরফ থেকে আসা উচিত। কিন্তু মিয়ানমারের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাম্ভিক আচরণে খোদ জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মুখ থেকে যথার্থ শক্ত প্রতিবাদ বা পদক্ষেপ আসছে না। এখনো ধিক্কারসূচক শব্দেই প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ রয়েছে।
যেমন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান জাইদ রা’দ আল হুসেইন মিয়ানমারের এ ধরনের তামাশাসূচক আচরণে ’মিয়ানমারের লজ্জা থাকা উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। মিয়ানমারের এমন আচরণের প্রেক্ষিতে, তাদের এমন অসভ্য দাম্ভিক আচরণের জবাব কেবল ধিক্কার বা নিন্দা জানানোতেই যথার্থ নয়। মিয়ানমার নিজেদের ন্যূনতম মানবিকতার মাথা খেয়েই রোহিঙ্গা নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাই এখন মিয়ানমারকে প্রয়োজনে শক্তিপ্রয়োগ করে শায়েস্তা করা । এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসমূহের অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘের উচিত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মিয়ানমারের অসভ্য কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগী হচ্ছে মূলত বাংলাদেশ। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশরও মিয়ানমারের বারংবার দাম্ভিকতা প্রদর্শনের উচিৎ জবাব দিতে জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।