রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
দুর্দান্ত এক সুখস্মৃতি নিয়ে আজ থেকে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসের বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপে হারানোর রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। তাই দ্বাদশ বিশ্বকাপের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেয়ে যাওয়ায় সুখস্মৃতি নিয়েই নিজেদের মিশন শুরু করছে মাশরাফির দল।
রোববার লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে এই ম্যাচটি।
২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুপার এইটের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ম্যাচে স্পষ্টভাবেই ফেভারিট ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ফেভারিটের তকমা তোয়াক্কা না করে, বিশ্বকে চমকে দেয় টাইগাররা। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন দলটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। তবে পরের দিকে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের দুর্দান্ত ব্যাটিং-এ লড়াইয়ে ফিরে বাংলাদেশ। তাকে সঙ্গ দেন আফতাব আহমেদ। পঞ্চম উইকেটে দু’জনে ৭৬ রান যোগ করেন।
আফতাব ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৩ বলে ৩৫ রান করে আউট হন। তবে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন আশরাফুল। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে থেমে যান অ্যাশ। বাংলাদেশের অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার আগে ১২টি চারে ৮৩ বলে ৮৭ রান করেন আশরাফুল। ফলে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫১ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষদিকে, ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
এরপর জয়ের জন্য ২৫২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার সৈয়দ রাসেল এবং তিন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক-মোহাম্মদ রফিক-সাকিব আল হাসানের তোপে পড়ে ১৮৪ রানেই অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। রাজ্জাক ৩টি, সাকিব-রাসেল ২টি করে এবং রফিক ১টি উইকেট নেন।
তাই ১২ বছর হয়ে গেলেও, ঐ ম্যাচের সুখস্মৃতি যে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও বেশ টগবগে মেজাজেই আছে বাংলাদেশ। গেল মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাশরাফির দল। ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারায় তারা।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেনের ২৭ বলে অপরাজিত ৫২ রান বাংলাদেশকে শিরোপার স্বাদ এনে দেয়। বৃষ্টি আইনে ২৪ ওভারে জয়ের জন্য ২১০ রানের টার্গেট পায় টাইগাররা। সেই টার্গেট ৭ বল বাকী রেখেই স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। ফলে প্রথমবারের মত ওয়ানডেতে কোন টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ নিলো মাশরাফির দল।
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের স্বাদ নিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রাখে বাংলাদেশ। মূল পর্বের জন্য অংশ নেয়া প্রত্যক দলের জন্যই দু’টি করে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ থাকে। সেই সুবাদে বাংলাদেশের দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ ছিলো পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে। দু’টি ম্যাচই ছিলো কার্ডিফে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারনে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তবে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের গা গরম করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
কিন্তু ওই ম্যাচে জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ৯৫ রানে ভারতের কাছে হারে টাইগাররা। নিজেদের দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। ১০২ রানে ভারতের চার ব্যাটম্যানকে বিদায় দিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে ১৬৪ রানের বড় জুটি গড়ে ভারতকে খেলায় ফেরান চার নম্বরে নামা লোকেশ রাহুল ও সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ পর্যন্ত দু’জনই সেঞ্চুরি তুলে নেন।
রাহুল ১২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯৯ বলে ১০৮ ও ধোনি ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৭৮ বলে ১১৩ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৫৯ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। জবাবে ব্যাট হাতে ভারতীয় বোলারদের শাসন করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ওপেনার লিটন দাস ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন। লিটন ৭৩ ও মুশফিক ৯০ রানে থেমে যান। এরপর ৩ বল বাকী রেখে ২৬৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
তাই প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হারের স্বাদ নিয়েও বিশ্বকাপ শুরু করতে হবে বাংলাদেশ। তবে এসবকে হারকে দূরে সরিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে নতুন উদ্যমে যে বাংলাদেশ শুরু করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারন এখন মাশরাফি-তামিম-সাকিবদের নিয়ে গড়া দলটি ভিন্ন চিত্রের এক বাংলাদেশ। যেকোন দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে টাইগাররা। সেই সামর্থ্যটা কতটুকু বাংলাদেশের, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৭টি জিতেছে প্রোটিয়ারা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো দু’দলের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের অন্য দু’টি জয় এসেছিলো ২০১৫ সালে। দেশের মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল: মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মর্তুজা(অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল: ফাফ ডু প্লেসিস(অধিনায়ক), আইডেন মার্করাম, কুইন্টন ডি কক, হাশিম আমলা, রাসি ভ্যান ডরি ডুসেন, ডেভিড মিলার, আন্দিল ফেলুকুয়াও, জেপি ডুমিনি, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ডেল স্টেইন, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ক্রিস মরিস, ইমরান তাহির, তাবরিজ শামসি।