ঠাকুরগাঁও: বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বা স্কুল লেভেল ইমপ্রুভম্যান্ট (স্লিপ)-এর বরাদ্দের টাকা হরিলুট হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। বেশির ভাগ স্কুলে টাকা উত্তোলনের দুই মাস অতিবাহিত হলেও কাজ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক নামমাত্র কাজ করে দায় সেরেছেন। আবার কোনো কোনো প্রধান শিক্ষক জোড়াতালি কাজ করে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা হজমের চেষ্টা করেছেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদ হাসান জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয় গত অর্থবছরে ৪০ হাজার করে স্লিপের টাকা বরাদ্দ পায়। এতে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরাদ্দের সমুদয় টাকা পাওয়ার দুই মাস অতিবাহিত হলেও কাজ শুরু করেননি ভানোর দীঘিপাড়া দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৌলা দোগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুপগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অথচ সকল বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে গত ৩০ জুনের মধ্যে। যদিও দাপ্তরিক নির্দেশনা ছিল নিজেদের টাকা দিয়ে ৩০ জুনের মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানের কাজ শতভাগ সম্পাদন করে সঠিক বিল ভাউচার দেখিয়ে চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করার। এ নির্দেশনাও মানা হয়নি। অন্যদিকে কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু হলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্লিপের টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর যাচ্ছেতাই করে চলেছেন স্কুল প্রধান শিক্ষকরা।
[ফকিরের আস্তানা থেকে গুপ্তধন চুরির গুঞ্জনে তোলপাড়! ]
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, চলতি অর্থ বছরে স্লিপের বরাদ্দের ৪০ হাজার টাকা মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সমাবেশ বেদী নির্মাণ, বছরে ৫টি দিবস পালনের জন্য ৫ হাজার টাকা, ক্যাচমেন্ট এলাকার ম্যাপ ক্রয়ের জন্য ১ হাজার টাকা, সাউন্ড সিস্টেম মেরামত বাবদ ১ হাজার, টাকা, সীমানা প্রাচীরের পার্শ্বে বৃক্ষরোপনের জন্য ১ হাজার টাকা, সিটিজেন চার্টার ক্রয় বাবদ ১ হাজার, কৃতি শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা পুরস্কার, বিদ্যাললয়ের নাম ফলক, পতাকা স্ট্যান্ড পাইপ ক্রয়সহ অন্যান্য খাতে খরচের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ৪২ নং গান্ডিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। বরাদ্দ পাওয়ার পর উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে গত ১৬ আগস্ট বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আঃ মান্নানের বরাবর স্লিপের কাজে নিম্নমান সামগ্রী ব্যবহার করে টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমরান আলী।
ইমরান আলীর সাথে কথা বলে ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কাজ করেছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি করে সমাবেশবেদী নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা হয়। তার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সমাবেশবেদী নির্মাণে নতুন ইট ব্যবহার না করে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুরাতন ইট অর্থাৎ পূর্বে ব্যবহৃত ইট ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
জানতে চাইলে গান্ডিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লের প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর অভিযোগটি সত্য নয়। অন্য বিদ্যালয় সমাবেশবেদী দুই নম্বর ইট দিয়ে করলেও আমি এক নম্বর ইট দিয়ে করেছি।
[দিনাজপুরে বিশাল আকৃতির কাঁঠাল দেখতে হাজারো মানুষের ভিড়]
এ বিষয়ে লালাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, স্লিপের টাকার ভাগ বিভিন্ন জায়গায় দিতে হয়। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরাও এতে ভাগ বসায় এবং আমাকেও দিতে হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানে এ অভিযোগ সত্য নয়। কিছু কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষক এ বিষয়ে জড়িত মর্মে শুনেছি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, গত অর্থবছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পাদন করে বিল তোলার কথা। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান নানা জটিলতার কারণে কাজ করতে পারেনি বলে আমি শুনেছি। তবে সরকারি নির্দেশনা ছিল নিজেদের টাকায় ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে টাকা উত্তোলন করার।
[কাউনিয়ায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে টানটান উত্তেজনা, রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের আশঙ্কা]
জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ. মান্নান বলেন, ভানোর গান্ডিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী (পুরাতন ইট) দিয়ে প্রতিষ্ঠানের বেদী নির্মাণ হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ স্থানীয়রা আমার দপ্তরে জমা দেয়। যেহেতু অভিযোগটি অন্য দপ্তরের, তাই অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শামশুল আলম বলেন, নিম্নমানের পুরাতন ইট দিয়ে সমাবেশবেদী নির্মাণের একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি, তাদের তাগাদা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।