হেলথ ডেস্ক: গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে প্রকৃতি। গ্রীষ্ম শুরুর আগেই থেকেই প্রখর রোদে রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করাটা বেশ কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষণীয় গরমকালে শীতল পানীয়র চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের রাস্তাঘাটের অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় আখের রস, তরমুজ-আনারসের শরবতসহ বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডা জ্যুসের শরবত। আর এইসব শরবত তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ঠাণ্ডা বরফ। ব্যস্ততম শহরে গাড়ি-ঘোরা, ধুলো-বালি আর মানুষের ঠেলাঠেলি সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত শরীরে গলা শুকিয়ে আসা স্বাভাবিক। প্রকৃতির গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানীয়ের চাহিদা বাড়তে থাকে। এমতাস্থায় তৃষ্ণার্ত মানুষ ছুটে যায় এস অস্থায়ী দোকানে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ফুটপাতের এসব ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের শরবত নিরাপদ নয়। তাদের শরবতের পানি, বরফ কোথা থেকে আসে ঠিক নেই। এ শরবত পান করলে কিডনি বিকল, পানিবাহিত রোগ, গ্যাস্ট্রিক, হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস, লিভারের জটিলতা, পাকস্থলীতে প্রদাহ, খাদ্যনালিতে সমস্যা, পেপটিক আলসারসহ মারাত্মক জটিল রোগ হতে পারে। জানা গেছে, রাস্তার এই ঠাণ্ডা পানীয়তে বরফ দেওয়া হয়, তা মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত বরফ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শরবতকে সুস্বাদু করার জন্য পানির সঙ্গে কনডেন্সড মিল্ক, শরবতের চেহারা দেখতে সুন্দর করার জন্য রং, স্বাদে মিষ্টি করার জন্য সেকারিন, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। যেসব ফল থেকে এসব পানীয় তৈরি হয়, তা বেশিরভাগ সময়ই খোলাভাবে রেখে দেওয়া । এগুলোর ওপর পড়তে থাকে ধুলো-বালি, বসতে থাকে মশা-মাছি। আর অনেক সময় ফল বা গ্লাস-মগ ধোয়া হয় নোংরা পানিতে। আর বিক্রতেরা এসব পানীয় পরিবেশন করেন নোংরা হাতে।
ফুটপাতের এসব শরবত পান করা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর -এই কথা এখন সর্বসম্মত। আসুন জেনে নেওয়া যাক এসব শরবত পানের ব্যাপারে ডাক্তারগণ কি বলছেন-
ঠাণ্ডা শরবত শরীরকে সাময়িকভাবে ঠাণ্ডা রাখছে বলে মনে হলেও এটি আসলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডা রাখার বিষয়টা পুরোটাই মানসিক। আর প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ ঠাণ্ডা পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা হেরফের করে। ফলে হতে পারে ডায়রিয়ার মতো রোগ-ব্যধি। রাজধানী ঢাকার উত্তরার ডা. রাশিদা কেয়া রাস্তার দোকানের শরবত, আখের রস ইত্যাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, খোলা শরবত খেয়ে নিজের অজান্তে বহু রোগ-জীবাণু প্রতিনিয়তই নিজের শরীরে অবাধে ঢুকার ব্যবস্থা ভুলেও করবেন না। কেননা এতে প্রাথমিক পর্যায়ে জানতে না পারলেও ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা ও হেপাটাইটিস 'এ' এবং 'ই'র মতো রোগগুলো বহন করছে পরে। এছাড়াও তিনি বাইরের খোলা খাবার, অনিরাপদ পানি না খাওয়ারও পরামর্শ দেন।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টিবিজ্ঞানী খাদিজা খাতুন বলেন, ফল খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আর গরমে তা খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু রাস্তার শরবত দেহে বিপরীত কাজ করে। পেটে পীড়া, গ্যাসটিকসহ বিভিন্ন ছোট-বড় রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই এসব বর্জন করা উচিৎ। আর বাচ্চাদের জন্য এ ধরনের খাবার একদমই খাওয়া ঠিক নয়। তিনি পরামর্শ দেন, ফল কিনে বাসায় নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে খাওয়া উচিৎ। এমনিতেই বাজারের ফলে কেমিক্যাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর ওপর যদি তা অস্বাস্থ্যকর ফলের দোকান থেকে কিনে খাওয়া হয়, তবে সমস্যা বিকট আকার ধারণ করতে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সামিহা শবনব জানান, অনিরাপদ পানি জারে ভরে শরবত বানিয়ে বিক্রি করা হয় ফুটপাতে। এসব জারে থাকে ব্যকটেরিয়া আর রোগজীবাণু। বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বরফ জমানো না হলে সেই পানি পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পাকস্থলীর সমস্যা হতে পারে। উত্তরার এক হোমিও চিকিৎসক জানান, ‘বেশির ভাগ শরবত বিক্রেতার কাছে যে পানি ও বরফ রয়েছে তা নিরাপদ নয়। এ কারণে লোকজন অসুস্থ হচ্ছে। ঘনচিনি দেওয়া শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ চিকিৎসকদের মতে, তীব্র গরমে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। সে পানি হতে পারে লেবু শবরত, ডাবের পানি। এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ না থাকলে খাবার স্যালাইন, গ্লুকোজ পান করা যেতে পারে বলে মত দেন তারা।