আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে লেখক, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকও রয়েছেন। দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের ভিমা কোরেগাঁওয়ে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) একযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। অভিযান চালানো হয় ফরিদাবাদ, গোয়া, মুম্বাই, ঠাণে, রাঁচি, হায়দ্রাবাদে।
এ সময় ফরিদাবাদ থেকে সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, হায়দ্রাবাদ থেকে কবি ও মানবাধিকার কর্মী ভারভারা রাওকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া পৃথক অভিযানে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী গৌতম নাভাকহামকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এরইমধ্যে সমাজকর্মী অরুণ ফেরেইরা এবং ভেনন গঞ্জালভেসও নেওয়া হয়েছে পুলিশি হেফাজতে।
মঙ্গলবার সকালে রাঁচির ফাদার স্ট্যান স্বামীর বাসস্থানেও অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ল্যাপটপ, পেন-ড্রাইভসহ বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশের দাবি, এই সমাজকর্মীরা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ সূত্রে আরো জানানো হয়েছে, মারাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে জয়কে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করতে এ বছরের ১লা জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভিমা কোরেগাঁও এলাকায় জমায়েত হয় দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। সেখানেই উচ্চ বর্ণের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ বাঁধে।
পরে এই ঘটনার তদন্তে নেমেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানতে পারে গোয়েন্দারা। সম্প্রতি মুম্বাই, নাগপুর এবং দিল্লী থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন মাওবাদীর ৫ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন- দলিত নেতা সুধীর ধাওয়ালে, আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, মহেশ রাউত, সোমা সেন এবং রোনা উইলসন।
গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে সেসময় একটি চিঠি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই চিঠিতে মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলে। এতে মোদীকে হত্যা করতে একটি এম-ফোর রাইফেল ও গুলি কেনার জন্য ৮ কোটি রুপি চাওয়া হয়েছিল। আর চিঠির শেষে উল্লেখ ছিল ভারাভারার রাওয়ের নাম। এরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তবে মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন ভারাভারা রাও।
অপরদিকে দেশ জুড়ে এভাবে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়ানোয় পুলিশের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটির বুদ্ধিজীবী সমাজ। লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘কবি, সাহিত্যিক, দলিত আন্দোলনকারী, আইনজীবীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলে ভরা হচ্ছে। পুলিশের উচিত গো-রক্ষার নামে যারা গণপিটুনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে এবং উস্কানি দিচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করা।’
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির বদলে ভারতের উচিত মত প্রকাশ, সভা-সমিতি গঠন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করা। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি এবং কাজকর্মের জন্যই কি তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে?’