রংপুর এক্সপ্রেস: পিতা ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক প্রিয় পুত্রকে আল্লাহর রাহে ত্যাগ আর পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণে পুত্র ইসমাইলের (আ) জীবন উৎসর্গের মহিমান্বিত ঘটনা থেকে পবিত্র বায়তুল্লাহয় পশু কোরবানি এবং হজের সূচনা হয়। আর জিলহজ মাসের ১০ তম দিনটি পবিত্র ইদুল আযহা হিসেবে ঘোষিত হয়। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এ দিনটিতে সামর্থবান মুসলিমগণ আরাফাতের ময়দানে মিলিত হন, যা রোজ হাশরে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার একটি প্রতীকি রূপ। সেখানে তারা হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতাসহ পশু কোরবানি করেন। ইসলামে বৈরাগ্য না থাকলেও কেবল দু’টো স্থানে তা অনুমোদিত। এর একটি জেহাদের ময়দানে ও অপরটি পবিত্র হজে। হজে ঈমানদার ব্যক্তিগণ সমস্ত দুনিয়াবী কর্মকাণ্ড ও চিন্তা-ভাবনা পরিত্যাগ করে সেলাইবিহীন অনাড়ম্বর পোশাকে আল্লাহর ঘরে হাজিরা দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজে হাজির হওয়া হাজীদের সাথে সংহতি প্রকাশার্থে হজে অনুপস্থিত ব্যক্তিরাও পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।
আরবি মাস চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয় বিধায় মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পর আমাদের দেশে আরবি মাসের তারিখ পরিবর্তন হয়। সেই হিসেবে গতকাল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জিলহজ মাসের ১০তম দিন হলেও আমাদের দেশে দিনটি পালিত হচ্ছে আজ। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশেরও বেশ কিছু জায়গায় গতকাল ইদ উদযাপিত হয়।
পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষে দূর-দূরান্তে থাকা মানুষজন আপনজনদের সাথে মিলিত হওয়ার আশায় কয়েক দিন ধরেই রাস্তা-ঘাটের নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঘরে ফেরায় ব্যস্ত ছিলেন। আজ যে যেখানেই থাকুক, সকলেই নিকটস্থ ইদগাহ বা মসজিদে ইদুল আযহার দুই রাকাত সালাহ কায়েম করবেন। খতিব খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে সালাহ কায়েম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজনীতিবিদ, বিচারক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বেসামরিক, সামরিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি সকাল ৮টায় হাইকোর্টের সামনে জাতীয় ইদগায় ইদের নামাজ আদায় করবেন।
[জানুন: রংপুরের প্রধান প্রধান ইদের জামাত কখন কোথায়]
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বুধবার গণভবনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে বেলা ১১টায় বিচারক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিক, সিনিয়র সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। অন্যদিকে দেশবাসীকে ইদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ইদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ইদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ইদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত মানের বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ইদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।