কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
অবশেষ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার খাদ্য গুদামকে সিন্ডিকেট মুক্ত করাসহ সরকারীভাবে ধান সংগ্রহ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে উলিপুর উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সর্বশেষ সভায় পূর্বের কৃষকের তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের সহায়তায় স্থানীয় কৃষিবিভাগ তালিকা সংশোধনের কাজ চুড়ান্ত করবে মর্মে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, উলিপুর উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এলাকার প্রকৃত কৃষকরা তার সুফল পাবে।
সুত্র আরো জানায়, খাদ্য দস্যু রাজা মিয়ার নেতৃত্বধীন চিহ্নিত সিন্ডিকেটটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে সরকারী খাদ্য গুদামকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে কৃষকের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে আসছিল। কাগজ-কলমে কৃষকের নাম থাকলেও প্রকৃত পক্ষে কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে পারতো না। কৃষকের স্বাক্ষর জাল করে ফায়দা লুটতো ওই চিহ্নিত সিন্ডিকেটটি। এই সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কৃষকের তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জোর দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে তার কৃষক বান্ধব দাবিটি উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সভায় পূর্ণতা পায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, উলিপুর উপজেলায় মোট কৃষকের সংখ্যা ১লাখ। তার মধ্যে কৃষি ভ‚র্তকীর কার্ড প্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা ৭৪ হাজারের অধিক। এদের মধ্য থেকে ধান সংগ্রহের জন্য ১৮ হাজার ৮শ ৯৫ জন কৃষককে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই তালিকা নিয়ে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের সহায়তায় তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।
উলিপুর উপজেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো ধান কেনার লক্ষ্য মাত্র ধরা হয়েছে- ৬শ’ ৩৭ মেঃটন। এর মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ৩শ’ ১৮ মেঃ টন ধান কেনার জন্য লটারীর মাধ্যমে ৬শ’ ৬২ জন কৃষকের নাম চূড়ান্ত করা হয়। তালিকা সংশোধনের পর দ্বিতীয় কিস্তির ৩শ’ ১৯ মেঃটন ধান কেনার জন্য লটারীর মাধ্যমে কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
উলিপুর উপজেলার খাদ্য দস্যু খ্যাত সিন্ডিকেটের হোতা রাজা মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি একজন মিল মালিক। এইটুকুই আমার পরিচয়।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, খাদ্য সংগ্রহ কমিটির নির্দেশনা অনুসরণ করে কৃষকের তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছি।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাদের জানান, খাদ্য সংগ্রহকে ত্রুটি মুক্ত করার জন্য আমরা কৃষকের তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি এই উদ্যোগের সুফল সাধারণ কৃষকরা পাবেন।
উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, চিহ্নিত সিন্ডিকেটটি অসৎ কৃষি অফিসারদের সহায়তায় তাদের মনগড়া তালিকা প্রণয়ন করার বিষয়টি অবগত হবার পর থেকে আমি কৃষকের তালিকা সংশোধনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম।
তিনি বলেন, ‘অবশেষে উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটি সেই দাবির আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। তবে লটারীতে নাম উঠার পরে যাতে ভাগ্যবান কৃষকরা সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান জমা দিয়ে সরকার প্রদত্ত্ব আর্থ হাতে গুণে নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’