Showing posts with label একুশ শতক. Show all posts
Showing posts with label একুশ শতক. Show all posts
অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি: একুশ শতকেই অর্ধ দুনিয়া থাকবে চীনের হাতে

অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি: একুশ শতকেই অর্ধ দুনিয়া থাকবে চীনের হাতে

admin August 26, 2018

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সপ্তম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর সভ্যতা। কাগজ, ছাপাখানা, বারুদ, চীনামাটি, রেশম এবং দিক নির্ণয় কম্পাস- সবই চীনে প্রথম উদ্ভাবিত হয়। নৌ বাণিজ্যে বিশ্ব দখল নীতি সেসময় থেকেই চীনের দখলে।

তারপর খ্রিস্টপূর্ব ২০৭০ অব্দ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত (২ হাজার বছর) প্রায় ২৭টি সাম্রাজ্য চীন শাসন করেছে। এর মধ্যে বিশাল এলাকাজুড়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তার করে তাং সাম্রাজ্য। প্রভাব বিস্তারে এরই মধ্যে সেই তাং সাম্রাজ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে বেইজিং।


জিনপিংয়ের শাসনামলে তা আরও দ্রুত গতিতে বিস্তৃত হচ্ছে। বিমানের বিশাল বহর, বিরাট আকারের সব রণতরী আর পরমাণু শক্তির আধুনিকায়ন। সমসাময়িক সময়ে চীনের এ অপ্রতিরোধ্য ধাবমান অগ্রগতিই বলে দিচ্ছে একুশ শতকের মধ্যেই অর্ধেক বিশ্ব চলে আসবে চীনের মুঠোয়। আর এ নিয়েই ভয়ে আছে ভারত।


চীনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানও দেশটিকে চোখে চোখে রাখছে। মার্কিন দৈনিক ব্ল–মবার্গের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি চীনের এ ‘ধীর আগ্রাসন নীতির চিত্র’ তুলে ধরা হয়েছে।


বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সাম্রাজ্য দখল কৌশল একেবারেই উল্টো। ওয়াশিংটনের সামরিক নীতির বিকল্প ব্যবসা নীতেতে এগোচ্ছে বেইজিং। বাণিজ্য ফাঁদের জালে ফেলে প্রতিবেশী, মিত্র দেশে আধিপত্য বাড়াচ্ছে চীন। পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। এর মধ্যে শ্রীলংকা তো ‘চায়না কোলোনি’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে বিশ্ব মহলে। নৌবন্দর, মহাসড়ক নির্মাণ, আবাসন প্রকল্প, নতুন নতুন রেললাইনের মাধ্যমে দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি- সবমিলিয়ে গুটি গুটি পায়ে দেশগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাচ্ছে চীন। এ তো গেল ঘরের পাশের প্রতিবেশীর কথা। হাজার হাজার মাইল দূরের দেশগুলোয়ও এখন নোঙর ফেলেছে চীনের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের বহর।


২০১৩ সালের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ জালে এরই মধ্যে বিশ্বের ৭৬টি দেশ বেঁধে ফেলেছে চীন। রমরমা রেশম যুগের সেই ‘সিল্ক রোডের’ আধুনিক সংস্করণ এ রেলপথকে বিশ্বব্যাপী ‘নিউ সিল্ক রোড’ নামে সামনে তুলে এনেছে বেইজিং।


শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রধান দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে চীন। বর্তমানে এমন কোনো পণ্য নেই যা এ দেশটি তৈরি করে না। এসব পণ্য রফতানির জন্য দরকার নতুন নতুন বাজার। বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে এ নতুন সিল্ক রোড তথা বাণিজ্য পথ। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই হচ্ছে সেই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি। এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত চীনের মুঠোয় রাখবে এই রোড।


হাজার হাজার মাইল দূরের আফ্রিকার কেনিয়া, সিয়েরা লিয়নেও এখন চীনের আধিপত্য। কেনিয়ার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র রাজধানী নাইরোবির দ্য পোর্ট অব মোমবাসাকে এখন আর কেউ ব্রিটিশ কলোনি বলে না। বন্দরটি এখন চীন কলোনি নামেই বেশি পরিচিত। মোমবাসা থেকে নাইরোবি পর্যন্ত ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের রেললাইন প্রজেক্টের কাজ করছে চীন। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজর কেনীয় শ্রমিক কাজ করে চীনের অধীনে।


শুধু বাণিজ্যিকভাবেই নয়, সামরিক ক্ষেত্রেও সমান তালে এগোচ্ছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি অন্যের ভূখণ্ডে নিজেদের সেনাঘাঁটি বসানো শুরু করেছে চীন। আফ্রিকার জিবুতিতে বসিয়েছে, পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরেও আরেকটি বসানোর উদ্যোগ চলছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে উত্তর চীন সাগর, ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত নিজেদের প্রভাবের আওতায় নিয়ে এসেছে চীনা সামরিক বাহিনী। ভারত মহাসাগরজুড়ে কয়েক ডজন নৌবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের দাবি, এটি সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথভাবে লাভবান হওয়ার নতুন এক মডেল। ভারত বরাবরই অভিযোগ করেছে, এটি নতুন ধরনের উপনিবেশবাদ। এটি দুর্বল রাষ্ট্রকে ঋণের জালে বেঁধে ফেলবে।


আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের হঠাৎ এমন আগ্রাসী নীতির মূলে রয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার নেতৃত্বেই একুশ শতকের উপযোগী সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে দেশটি। চলতি বছরের মার্চেই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদের ব্যাপারে সংবিধানের যে বাধ্যবাধকতা তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে সম্রাট যেমন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদ আকড়ে থাকেন, ঠিক একইভাবে আজীবন প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন তিনি। তার চিন্তা ও ভাবাদর্শও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন নিজের ভাবাদর্শ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের পর সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা জিনপিং।


অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে চীনকে শক্তিশালী দেখতে চান জিনপিং। একই সঙ্গে সামরিক ক্ষেত্রেও উচ্চাশা পোষণ করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ‘মেইক চায়না গ্রেট অ্যাগেইন’ তথা চীনকে আবার মহান করে তোলার স্বপ্ন তার চোখেও।


বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘তার এ ভাবাদর্শ ও উচ্চাশার বাস্তবায়ন হলে খুব শিগগিরই বিশ্বের অর্ধেক ভূখণ্ডে বেইজিংয়ের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের হাতে নির্মিত হচ্ছে এ সাম্রাজ্য। আমরা এ সাম্রাজ্যের নাম দিতে পারি ‘শি সাম্রাজ্য’। প্রধানত একদলীয় শাসন ব্যস্থায় এরই মধ্যে নিজের ক্ষমতা ও অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। বর্তমানে জিনপিং একাধারে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) প্রধান, দেশের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনী পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) প্রধান।’

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three