রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সৌদি আরবের কাছে আটশো কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এধরণের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সাধারণত মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের দরকার হলেও জরুরি অবস্থায় প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে তা অনুমোদনের ক্ষমতা রাখেন প্রেসিডেন্ট। এ ক্ষেত্রে ওই সুযোগই ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। জরুরি অবস্থা ঘোষণার কারণ হিসেবে ইরানের কাছ থেকে হুমকি বৃদ্ধির দাবি করেছেন তিনি।
গত শুক্রবার ট্রাম্পের প্রশাসনিক এই আদেশের বিষয়টি কংগ্রেসকে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তবে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের অভিযোগ পার্লামেন্টে কঠোর বিরোধীতার মুখে পড়ার আশঙ্কাতেই কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়েছেন ট্রাম্প।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সৌদি আরব ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের কাছেও অস্ত্র বিক্রি করতে পারেন ট্রাম্প। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার বর্ষপূর্তির দিনে চুক্তি থেকে আংশিক সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় তেহরান। এরপর ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে উগসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী, ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনস্তাত্তি¡ক যুদ্ধ’ শুরুর অভিযোগ এনেছে। আগামি কয়েক দিনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে দেড় হাজার সেনা, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। ওই ঘোষণার পরেই সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে ট্রাম্পের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল।
গত শুক্রবার কংগ্রেসকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি চিঠি মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচার পাচ্ছে। ওই চিঠিতে মাইক পম্পেও বলেন, ‘ইরানের মারাত্মক কর্মকাণ্ডের’ কারণেই তাৎক্ষনিকভাবে অস্ত্র বিক্রির দরকার। পম্পেও লেখেন, ‘ইরানের কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং ভেতরে-বাইরে আমেরিকার নিরাপত্তার ওপর মৌলিক হুমকি সৃষ্টি করেছে। পম্পেও বলেন, উপসাগরীয় এলাকা ও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে হঠকারি সিদ্ধান্ত থেকে ইরানকে বিরত রাখতে যত দ্রুত সম্ভব এসব অস্ত্র অবশ্যই হস্তান্তর হতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বি সৌদি আরব। ইরান ও সৌদি আরব আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধ ছাড়াও ইরাক ও লেবাননে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানও বিপরীতমুখী। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরব। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষের ওপর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও রিয়াদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা বেশ কয়েকবারই স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনিক আদেশে সৌদি আরবের কাছে বিক্রি হতে যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে নির্ভুল লক্ষ্যভেদে সক্ষম সামরিক সরঞ্জাম, ট্যাঙ্কবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রও বিভিন্ন ধরনের বোমা। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পরই সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা। সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ডেমোক্র্যাট সদস্য রবার্ট মেনেনদেজ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী দেশের পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ আনেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আরও একবার তিনি (ট্রাম্প) আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে আর মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলেন’।