কুড়িগ্রাম: তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার একমাত্র সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে ও ইসিজি কার্যক্রম বন্ধ সহ নানা সমস্যার কারণে জনসাধারণ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৫ সনে জনসাধারনকে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার অত্যাধুনিক মানের একটি এক্সরে মেশিন বরাদ্দ প্রদান করেন। শুরুতে মেশিনটি চালুর অল্পদিনের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার মেশিনটি মেরামত করেও কাজ হয়নি। ফলে এক্সরে মেশিন স্থাপনের পর থেকেই তা বিকল হয়ে পরে রয়েছে। ইসিজি মেশিনটির ও একই অবস্থা। একমাস চললে ছয় মাসেই বন্ধ থাকে। বর্তমানে এটি দিয়েও কাজ চলছে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যন্ত্রপাতি ও ওষুধের অপ্রতুলতা, অপারেশন থিয়েটারের লাইট ও টেবিল না থাকায় কোন অপারেশনও হয় না ।
এদিকে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০১২ সনের শুরুতে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পায়নি। ৫০ শয্যার অবকাঠামোয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানাসথেশিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) সহ মোট ২১জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা সহ মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সটি। ফলে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অসামর্থ ও নিম্নবিত্ত অসহায় মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছে ।
[রৌমারীতে শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের দাবি]
সবমিলে প্রায় তিন লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলাবাসীর একমাত্র ভরসা রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এখন নাই, নাই অবস্থা বিরাজ করছে। জনসংখ্যা অনুপাতে উপজেলাবাসীর চিকিৎসক এখন লাখে একজন। এ কারণে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণে যাদের সামর্থ নেই সে সব নিম্নবিত্ত অসহায় মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছে । উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তাকে ও নিয়মিত অফিসে উপস্থিত পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অনেকে অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরর আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে দীর্ঘদিন যাবৎ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্ত্বরের ভিতরে চিকিৎসকদের বসবাসের কোয়ার্টার গুলোতেও এখন কেউ থাকেন না। প্রায়ই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক শুন্য থাকে বলে তারা অভিযোগ করেন। এতে করে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।
বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আছমা বেগম জানান, ডাক্তার দেখাতে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। আবার ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে। মুহাম্মদ আলী জানান, প্যারাসিটামল ও স্যালাইন ছাড়া প্রায় সব ঔষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। মিজানুর, রমজান আলীও জানান নানা হয়রানীর কথা। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল্লাহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও তার অফিসে অনুপস্থিতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতাল সৃষ্টির পর থেকে বর্তমানের মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কখনই ছিল না।