ইদুল আজহাকে ঘিরে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে এদেশে গবাদি পশু ঢুকতে শুরু করেছে। মূলত সীমান্তের দুদিকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই আসছে পশু। তাতে খরচ অবশ্য একটু বেশি পড়ছে। আর কোরবানির দিন যত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে এ প্রবণতাও বাড়বে। তবে অবৈধপথে বিদেশি পশু আসাতে শুরু করায় দেশীয় খামারিরা আতঙ্কে রয়েছে। তাদের আশঙ্কা ভারতীয় গরু এলেই দাম কমে যাবে। ফলে খামারিদের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে অনুমোদন না থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে পশু আসার ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলো নীরবতা পালন করতো। আর এ বছর একটু কড়াকড়ি রয়েছে। খামারি এবং গবাদি পশু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোরবানি উপলক্ষে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু প্রস্তু রয়েছে। কিন্তু দেশে এ বছর কোরবানির চাহিদা ১ কোটি ৪ লাখ পশু। ফলে দেশীয় পশু দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকে কোরবানির ঈদের সময়ে গবাদিপশু আমদানি হলে তা মূল্যে প্রভাব ফেলবে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়িরা ভারতীয় গরু আমদানিতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। গত দেড় মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি করিডোর দিয়ে ৪৭ হাজার গবাদিপশু ছাড় করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এই সময় ব্যাপক গরু আমদানি হলেও এ বছর তা তুলনামূলক কম। সেখানে জেলা টাস্কফোর্স এখন পর্যন্ত তিনটি বিট-খাটালের অনুমোদন দিয়েছে। তবে তার বাইরেও উচ্চ আদালতে রিটের মাধ্যমে বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে আরো কয়েকটি বিট খাটাল দিয়ে গরু আসা শুরু হয়েছে। ওসব বিট খাটাল অনুমোদন দেয়া হলেও আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নেই। আর ভারত থেকে আসা গরুগুলোর মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। তাতে পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তাছাড়া রাজশাহী ও গোদাগাড়ির কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমেও মধ্যপ্রাচ্যের চ্যানেল ব্যবহার করে ভারতে অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, গরু আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বৈধ কোনো চুক্তি নেই। মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার ভিত্তিতে অলিখিত সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে গবাদিপশুর কারবার চলছে। তাতে প্যাডের নামে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গরু জোড়াপ্রতি হাতিয়ে নিচ্ছে ৪০ থেকে ৫৬ হাজার ভারতীয় রুপি। ওসব ক্ষেত্রে নগদ অর্থ ব্যবহার হয় না। প্রতি চালানে গরু আনা-নেয়াকারী রাখালদের মাধ্যমে ¯িøপ প্রেরণ করা হয়। বিভিন্ন মানের ছেঁড়া টাকা নির্ধারণ করে গবাদিপশুর সংখ্যা ও মূল্য। আর মোটা অঙ্কের টাকা বাঁচাতে চোরাই অথবা নদীপথ ব্যবহার করে আনা হচ্ছে গরু। তাছাড়া বিট খাটালগুলোতে করিডোর ফি বাবদ জোড়াপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। ফলে দেশে ওসব গরু বিক্রি করা হচ্ছে অত্যন্ত চড়া মূল্যে। ইতিমধ্যে ভারত থেকে চোরাই পথে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বিপুল সংখ্যক গরু আসতে শুরু করেছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে সেখানে পশু আমদানি ধীরগতিতে হচ্ছে। আবহাওয়া প্রতিকূল ও বাজারে গরুর মূল্য না থাকায় এমন পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ গবাদিপশু আমদানির করিডোর দিয়ে ওসব গরু-মহিষ এদেশে ঢুকছে। জুলাই মাসে ৬ হাজারের বেশি গবাদিপশু এসেছে। তবে জুলাই মাসের তুলনায় জুন মাসে দ্বিগুণের বেশি গবাদিপশু আমদানি হয়।
এদিকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানির কারণে দেশের বাজাওে পশুর দাম কমে গেছে। এমন অবস্থায় লোকসানের আশঙ্কায় আপাতত মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি কমিয়ে দিয়েছে ব্যবসায়িরা।
অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অবৈধভাবে গবাদিপশু যেন দেশের কোরবানির হাটগুলোতে আসতে না পারে সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিজিবিসহ জেলা প্রশাসনের কাছে খামারিরা দাবি জানিয়েছে। বর্তমানে ঈদের বিক্রির জন্য ওসব খামারি এবং সাধারণ গৃহস্থরা গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। ক্ষতিকারক ওষুধে নয়, বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছে দেশের খামারি ও কৃষকরা।