রংপুর এক্সপ্রেস: গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এখন ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। আর এ সুবিধা দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ফলে গ্রামীণ জনগণ এখন অধিক হারে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে। তাতে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। মূলত ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়। এ ব্যাংকিংয়ে সাধারণ ব্যাংকের মতোই প্রায় সব সুবিধা পাওয়া যায়। সেজন্য গ্রাহককে বাড়তি কোনো চার্জও পরিশোধ করতে হয় না। এমনকি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহারেরও সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে গ্রামীণ অঞ্চলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যাংকিং। বর্তমানে গ্রামীণ এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা শহরের তুলনায় ৬ গুণ বেশি। দেশের ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্রমতে, দেশের ১৭টি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮৮টি এবং তাদের আউটলেট রয়েছে ৫ হাজার ৩৫১টি। ওসব এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তার মধ্যে গ্রামের মানুষই ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৭ জন। বাকিরা শহরের। এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে মোট স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫১ কোটি টাকা। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জমা অথবা তোলা যায়। তবে অন্তমুর্খী রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উত্তোলনের এ সীমা প্রযোজ্য নয়। দিনে দুবার জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রতি এজেন্টের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব থাকতে হয়। ওই হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতি সীমা ১০ লাখ টাকা দেয়া আছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভিতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সকল প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। তবে এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারেন না। আর এজেন্টরা বিদেশি সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। তাছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। এজেন্টরা মোট লেনদেনের ওপর কমিশন পেয়ে থাকেন।
সূত্র জানায়, এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে মোট জমা হওয়া অর্থের মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের স্থিতি সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া ডাচ-বাংলার আউটলেটও বেশি। তার পরের অবস্থানেই আছে ব্যাংক এশিয়া। তৃতীয় অবস্থানে আছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। তাছাড়া সোস্যাল ইসলামী, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মিডল্যান্ড, সিটি ও ইসলামী ব্যাংক ভালো কাজ করছে। মূলত পল্লী এলাকার মানুষের ব্যাংকের আওতায় আনতে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সেজন্যপ্র্রথমে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়াকে নিয়ে পাইলট প্রকল্প করে সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সেসময় এগিয়ে না আসায় ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ওই কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের আর্থিক জ্ঞান (ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি) হচ্ছে। আর গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ভূমিকা অন্যতম। ওই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আরও অনেক কিছু করা সম্ভব।
সূত্র আরও জানায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে স্বল্প খরচে ব্যাংকিং সেবা দিতে প্রথমে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। তারপরে একই উদ্দেশ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়া প্রথমে ওই সেবা চালু করে। এজেন্ট ব্যাংকিং হলো-সমঝোতা স্মারক চুক্তির বিপরীতে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়া। কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ২০১৩ সালের প্রথম নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেয়া হলেও পরের বছর নীতিমালায় কিছুটা সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই এমন পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট নিয়োগ দেয়া যায়। তবে মেট্রোপলিটন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় না করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আগের মতোই বহাল রাখা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবুল বশর জানান, যেসব জায়গায় ব্যাংকের শাখা নেই সেখানকার মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যাংকিং প্রয়োজন মিটাতে পারছে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো তাদের মোবাইলে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য যাচ্ছে। ফলে তাদের বিশ্বাস বাড়ছে। তাতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষ এ সেবাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।