রাস্তায় গাড়ি চালকদের বেপরোয়া ও অসর্তকতার সাথে গাড়ি চালানোর কারণে কখনও প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ পথচারীদের, কখনবা যাত্রীদের। একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে ক্ষোভ ও ভীতি। প্রশ্ন উঠেছে বাস চালক-হেলপাররা কি তবে কিলিং মিশনে নেমেছে?
মাত্র কয়েকদিন আগে হানিফ পরিবহনের চালক -হেলপার কর্তৃক পায়েল নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে রীতিমতো হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হেলপার। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত রবিবার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর বাস উঠিয়ে দিল আরেক চালক। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বারো জন। এভাবে শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ অন্য শিক্ষার্থীরা বেশকিছু বাস ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। নিহত দুই শিক্ষার্থী শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়তেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, বিমানবন্দর সড়কের বাঁপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বাসে উঠার জন্য সিগন্যাল দিচ্ছিল। এসময় আরেক বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুতগতিতে আসা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসটি শিক্ষার্থীদের না উঠিয়ে চাপা দিয়ে চলে যায়। গাড়ীর চাকায় পিষ্ঠ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় ঐ শিক্ষার্থীদের।
চালকদের এ ধরনের হটকারী কাণ্ডের প্রতিবাদে আজও বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে। বেলা বারো টার দিকে বিএএফ শাহীন কলেজ, ভাষানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও কলেজ, বাংলা কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিমানবন্দর সড়কের উভয় পাশ বন্ধ করে দেয়। দুপুর দেড়টা থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের রেল চলাচলও বন্ধ রাখে রেল কর্তৃপক্ষ। পরে দুপুর সাড়ে তিনটার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে নয় দফা দাবি আদায়ে চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বিকেল চারটার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
এদেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকে সড়ক, মহাসড়কে যত ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, সন্দেহের প্রথম তীরটি কিন্তু ড্রাইভারদের গায়েই পরেছে। এর যথাযথ কারণও রয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, দেশের সড়কগুলো প্রায় অর্ধকোটি অদক্ষ, ভুয়া ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের নিয়ন্ত্রণে। বলা যায়, বেপরোয়া গাড়ি চালাতেই এদের দক্ষতা রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন
[পথদুর্ঘটনা নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর যত বিরুপ মন্তব্য]
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রায় ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সহীন ড্রাইভার আছে। অনেকের লাইসেন্স থাকলেও তা জাল বা নকল। ড্রাইভার অদক্ষ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের দ্বারা দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। শুধু তাই নয়, পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় মালিকদের দাপটের কারণেও আস্কারা পাচ্ছে ড্রাইভার-হেলপাররা। যে কারণে দুর্ঘটনার দায় নিতে তারা অস্বীকার করে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এমনকি আইন প্রণয়নকারী মন্ত্রী- এমপি পর্যন্ত তাদের হাত বিস্তৃত। এ কারণে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর আইনও করা সম্ভব হচ্ছে না। এঁদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত গেলে তারা সংঘবদ্ধভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে দেশ অচল করে দেয়।
ড্রাইভার-হেলপারদের এই দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এখন ফুঁসে উঠছে। তাদের পক্ষ হয়ে দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে বক্তব্য প্রদান করায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক এসোসিয়েশনের প্রধান ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যে নয় দফা দাবিতে চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ছাত্রছাত্রীরা দিয়েছে তার মধ্যে একটি দফা হচ্ছে তাঁর পদত্যাগ। এমতবস্থায় চালক-হেলপারদের বেপরোয়া মনোভাব দূরীকরণে কঠোর থেকে কঠোরতম আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করে তাদেরকে চাপে রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মানুষের প্রাণ নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তাদেরকে দেওয়া যায় না। এখনই সময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে চালক-হেলপারদের দৌরাত্ম্য রোধ করা।