পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গরু নিয়ে রয়েছে রাজনীতি। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গরুকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম হয়। সংখ্যাগুরু হিন্দুরা গো-হত্যাকে চরম অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। মূলত এরই প্রভাবে বাংলাদেশে গরু রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে রপ্তানি না করেও বিশ্বে গরুর গোস্ত রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে দেশটি।
মার্কিন এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন গরুর গোস্ত রপ্তানি করে। ২ মিলিয়ন টন রফতানি করে দ্বিতীয়স্থানে ছিল ব্রাজিল। তালিকায় তিন নম্বরে ছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের পরিমাণ দেড় মিলিয়ন টন। আর তিন দেশ মোট গরুর গোস্ত রপ্তানি করছে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভারত একাই সাড়ে ২৩ শতাংশ রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশে গরু না পাঠিয়েই তারা গোস্ত রপ্তানিতে এই অবস্থান ধরে রেখেছে।
মাত্র কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে কোরবানির পশু হিসেবে ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরতা ছিল। কিন্তু ভারত সরকার হঠাৎ বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সাময়িকভাবে কোরবানির বাজারে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। সাধারণ বাজারেও বেড়ে যায় গরুর গোস্তের দাম। এ কারণে বেড়ে যায় দেশীয় গরুর চাহিদা। তবে ভারতের এই সিদ্ধান্ত কার্যত বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ এখন গরু উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। এর কারণ হচ্ছে দেশীয় গরুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এমনিতেও দেশীয় গরুর গোস্তের স্বাদ ও গুণগত মানের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ হওয়ায় ঘরে ঘরে গরু পালন হচ্ছে এবং সেই সাথে খামারীর সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ৫ লাখ ২২ হাজার খামারী তৈরি হয়েছে, যারা গরু, ছাগলসহ সব ধরনের গবাদি পশু লালন- পালন করে থাকে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, সব মিলিয়ে দেশে এবার কোরবানি উপযোগী ১ কোটি ১৬ লাখ পশু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০/৪৫ লাখই গরু।
তবে বাংলাদেশ প্রাণীজ মাংস উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করলেও এদেশের খামারীরা এখনও লাভজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। তাই এই পেশাটি এখনও একটি স্থিতিশীল পেশায় রূপ নিতে পারেনি। এর পেছনে দুটো প্রধান কারণ রয়েছে। একটি হচ্ছে, ভারত বৈধভাবে গরু রপ্তানি না করলেও চোরাই পথে কিছু গরু ঠিকই বাংলাদেশে আসছে। ইদ বাজারে হঠাৎ ভারতীয় গরুর উপস্থিতি দেশীয় গরুর বাজারে দামের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, দেশে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য। পশু খাদ্যের সংকট হোক অথবা খাদ্য বিক্রেতাদের কারসাজিই হোক, উচ্চমূল্যের কারণে পশু পালনের ক্ষেত্রে খামারীদেরকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় মূল্য না পাওয়ায় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পশুপালনকে বড় পরিসরে পেশা বাছাই করার ধারণাটা এদেশে নতুন। এক্ষেত্রে খামারীদের অভিজ্ঞতা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয় তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য রোধে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। খামারীদের সমস্যা দূর করে তাদেরকে লাভজনক অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারলে আশা করা যায় এদেশে পশু উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিরাট বিপ্লব ঘটে যাবে। সেই সাথে বাজারে গরুর গোস্তের মূল্যেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
Showing posts with label সক্ষমতা. Show all posts
Showing posts with label সক্ষমতা. Show all posts
Subscribe to:
Posts (Atom)