পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ হেফাজতখানায় হাসানুর রহমান মিলন (২২) নামের এক মাদকব্যবসায়ীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের দাবি সে হাজত খানার বাথরুমে কম্বল দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে পরিবারের দাবি পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আজ সোমবার (২০ আগষ্ট) সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানায় এ ঘটনাটি ঘটে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহমুদ হাসান জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
পুলিশ জানায়, গত রোববার রাতে দেবীগঞ্জ উপজেলার থানা পাড়া গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে মিলনকে মাদকসহ তার বাড়ি থেকে আটক করে থানা নিয়ে আসা হয়। মিলন মাদক মামলার আসামি তার বিরুদ্ধে রাতে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ আরোও জানায় সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাজতখানায় জীবিত অবস্থায় ছিলো। এর পর তার বাবা-মা আসলে বাথরুমে ফাঁস লাগা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
আজ সোমবার দুপুরে থানার পুলিশ হেফাজতখানার বাথরুম থেকে দেবীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট্র সৈয়দ মাহমুদ হাসান এর উপস্থিতিতে পুলিশ মিলনের ঝুলন্ত লাশ নামায়। তার লাশের সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। এদিকে স্থানীয় জনতা মিলনের মৃত্যতে থানার সামনে বিক্ষোভ করেন এবং প্রায় ৩ ঘন্টা দেবীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে। নিহত মিলনের বাবা ও মা জানায়, পুলিশ আমার ছেলে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা বিচার চাই।
দেবীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহমুদ হাসান জানান, প্রাথমিক সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়েছে। থানা হাজতের বাথরুমে কম্বল পেঁচিয়ে আত্মহত্যার সুরত হাল করেছি। লাশ ময়না তদন্ত করার জন্য পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে । দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম জানান, মিলন মাদক মামলার এক জন আসামী। তাকে আমরা মাদকসহ তার বাড়ি থেকে আটক করি। সে থানা হাজতখানায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
সারাদেশে ৬ দিনে নিহত ৪৫ মাদকব্যবসায়ী
এনকাউন্টার জাতীয় বন্দুকযুদ্ধ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মাদকব্যবসায়ীডেস্ক রিপোর্ট:
গত বুধবার (২৩ মে) রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ মে) সকাল পর্যন্ত আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন মাদকব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গত ৬ দিনে কথিত এসব বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৪৫ জন।
পুলিশ বলছে, বন্দুকযুদ্ধে নিহত সবাই মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযানের সময় তারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালানোয় পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা গুলি চালায়। এতেই এই নিহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এসব ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবিও জানিয়েছে তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, “মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। যে কেউই মাদকব্যবসার সাথে যুক্ত হলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এই ব্যাপারে কিছুই সহ্য করা হবে না। সে সাংসদ হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও ব্যক্তি হোক।”
তিনি বলেন, “মাদকব্যবসার সাথে সাধারনত সন্ত্রাসী-অস্ত্রবাজরা জড়িত এবং যেখানেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে সেখানেই তারা অস্ত্রশস্ত্রসহ আক্রমণ করছে। আক্রমণ করলে তো পাল্টা আক্রমণতো হবেই, সেই কাউন্টার এ্যাটাকেই এ নিহতের ঘটনাগুলো ঘটছে।” মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এসব অভিযান চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।