Showing posts with label সাঁতার. Show all posts
Showing posts with label সাঁতার. Show all posts
সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড নেত্রকোনার ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের

সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড নেত্রকোনার ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের

admin September 06, 2018

সারাদেশ: একটানা ১৮৫ কিলো মিটার সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট ও নেত্রকোনা জেলার সাঁতারু বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে গেল সোমবার শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার ভোগাই নদীর ব্রিজ থেকে সাঁতার শুরু করেন তিনি। এরপর বিরামহীন ভোগাই, নেতাই, কংস ও মগড়া নদী পাড়ি দেয়ার পর বুধবার রাত ৮টায় মোট ৬১ ঘণ্টায় তিনি ১৮৫ কিলোমিটার নদীপথ সফলভাবে সাঁতরে অতিক্রম করেন। নেত্রকোনার মদন উপজেলার দেওয়ান বাজারে মগড়া নদীর ঘাটে এ প্রদর্শনী শেষ করেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র।


এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে মাত্র ৪৩ ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়েও রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। ৬৭ বছর বয়সী প্রবীণ এ সাঁতারু জানান, গিনেস রেকর্ড বুকে স্থান পেতে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শনী চলাকালে এক মিনিটের জন্যও কোথাও থামেননি। নদীতে সাঁতার অব্যাহত রেখেই গ্রহণ করছেন তরল জাতীয় খাবার।


মূলত আমেরিকার সাঁতারু ডায়ানা নাঈদের ২০১৩ সালে কিউবা টু ফ্লোরিডার ১৭৭ কিলোমিটার দূরপাল্লার সাঁতারের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতেই তার এ সাঁতার। ক্ষিতীন্দ্র সাঁতার করছেন এমন খবরে বুধবার দুপুরের পর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু মগড়া নদীর বিভিন্ন ঘাটে ও আনাচে-কানাচে অপেক্ষা করতে থাকে। তাকে দেখেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা।


সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে শেরপুরের নালিতাবাড়ির ভোগাই নদীর ওপর নির্মিত সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার শুরু করেন ৬৭ বছর বয়সী এই সাঁতারু। এর আগে সেখানে এক অনুষ্ঠানে এ সাঁতার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। এ সময় নালিতাবাড়ী পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, নেত্রকোনার মদন পৌরসভার সাবেক মেয়র মোদাচ্ছের হোসেন শফিকসহ মদন নাগরিক কমিটি এবং নালিতাবাড়ি প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ক্ষিতীন্দ্রের এ সাঁতারে মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ি পৌরসভা এ সাঁতার অনুষ্ঠানে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে সার্বিক সহায়তা করে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। ১৯৭০ সালে সিলেটের ধোপাদিঘি পুুকুরে সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি সাঁতারে উদ্বুদ্ধ হন। শুরুতে ওই বছরের মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আলোচিত হন।khitindra-Swimmer


পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ সাঁতারের রেকর্ডও রয়েছে তার। ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।


জানা যায়, ১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিটব্যাপী সাঁতার প্রদর্শন করে পুরাতন রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুরে পাড়ে একটি স্মারক (ফলক) নির্মাণ করে।


এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তার একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতেও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গিপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন তিনি।


সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে গণভবনে ডেকে রূপার নৌকা উপহার দেন। একই বছর ডাকসু তাকে বিশেষ সম্মাননা সূচক স্বর্ণপদক দেয়। এছাড়াও জগন্নাথ হল কর্তৃপক্ষ দুইবার এবং শামছুন্নাহার হল কর্তৃপক্ষ একবার তাকে সংবর্ধনা ও স্বর্ণপ্রদক প্রদান করে। এছাড়া বহু সংগঠন পুরস্কৃত করে তাকে।


মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক (সাবেক মেয়র) দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক জানান, এই কৃতি সাঁতারুর ১৮৫ কিলোমিটার বিরামহীন সাঁতারের রের্কড রাখতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারিখ ও সময় নির্ধারিত ভিডিও ক্যামেরায় ফুটেজ রাখা হয়েছে। এই সাঁতারে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের তিনি উপজেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।


ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য আমাদের দেশের গর্ব, ওনাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। গিনেস বুকে নাম লেখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three