রংপুর এক্সপ্রেস: দেশজুড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখ লাখ যানবাহন বয়ে বেড়াচ্ছে সিলিন্ডার বোমা। যে কোনো মুহূর্তে ওসব ‘সিলিন্ডার বোমার’ ভয়ঙ্কার বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে জানমালের ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গত প্রায় ৩ বছরে দেশে সিএনজিচালিত ১৭৫টি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে এবং তাতে প্রায় ৪শ লোকের প্রাণহানি ঘটে। চলতি বছর শুরুর দিকে আশুলিয়ার ডেল্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে একটি প্রাইভেটকারে সিএনজি গ্যাস নেয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে গাড়ির মালিকসহ ২ জন নিহত হন। দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি সিলিন্ডারযুক্ত যানবাহনগুলো জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মতোই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। রিটেস্টিংবিহীন চরম ঝুঁকিপূর্ণ লাখ লাখ বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার সংযুক্ত অবস্থায় সর্বত্র ঘুরে ফিরছে। যে কোনো মুহূর্তে ওসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ডেকে আনতে পারে জানমাল ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ সর্বনাশ। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্রমতে, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ভয়াবহ তাজা বোমার ন্যায় ক্ষতিসাধনে সক্ষম। কিন্তু গাড়ির ফিটনেসের সঙ্গে রিটেস্ট বাধ্যতামূলক করা সত্তে¡ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতায় বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সিএনজিচালিত যানবাহনের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহৃত সিলিন্ডার প্রতি ৫ বছর পরপর রিটেস্ট (পুনঃপরীক্ষা) করার বিধান রয়েছে। সব ধরনের সিলিন্ডারের রিটেস্টের অনুমোদন দেয় বিস্ফোরক অধিদফতর। তাছাড়া যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। আর সিএনজি কনভার্সনসহ সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে সরকারের আরপিজিসিএল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আইনে বাধ্যবাধকতা না থাকায় সিলিন্ডারের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৮০টি সিএনজি কনভার্সন ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে ১৫ বছর ধরে সিএনজিচালিত গাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে থাকা হিসেবে বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫২২ গাড়ি জ্বালানি তেল থেকে সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। ওসব গাড়িতে সিলিন্ডার রয়েছে ৪ লাখ। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, সিএনজি কনভার্সন সেন্টারসমূহে বড়জোর ৬৫ হাজার সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হয়েছে। আগের ২ বছর যোগ করলে ৫ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ৯৪ হাজার সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হলেও বাকি ৩ লক্ষাধিক সিলিন্ডার এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও রিটেস্ট করা হয়নি। অথচ ৫ বছর মেয়াদের জন্য সংযুক্ত সিএনজি সিলিন্ডার টানা ১৫ বছর ধরে ব্যবহারেরও ভয়ানক তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র আরো জানায়, ফিটনেস থাকাবস্থায় সিএনজি সিলিন্ডারসমূহে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩ হাজার পাউন্ড চাপের গ্যাস গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ ও দেশীয় পদ্ধতিতে জোড়াতালি দিয়ে প্রস্তুত সিলিন্ডারে ওই মাত্রার গ্যাস চাপ কোনোভাবেই ধারণ করতে পারে না। ফলে চলমান বোমা হয়ে ওঠা একেকটি গ্যাস সিলিন্ডার রীতিমতো বিস্ফোরোন্মুখ অবস্থায় থাকে। সামান্য ত্রæটি-বিচ্যুতি, ছোটখাটো দুর্ঘটনা বা ধাক্কাতেও সিলিন্ডারটি ভীষণ শক্তিতে বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। স¤প্রতি টাঙ্গাইল, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অন্তত ১১টি সাধারণ দুর্ঘটনায় গোটা যানবাহন পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অন্য গাড়ির সামান্য ধাক্কায় রাস্তার উপরই কাত হয়ে পড়া যানবাহনটির গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাসে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। সেক্ষেত্রে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে আরও ভয়াবহ।
এদিকে প্রতিটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ের জন্য ২/৩ দিন সময় লাগে। তাছাড়া রিটেস্টিং করাতে গেলে ২০ থেকে ৪০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য ২ হাজার টাকা, ৪০-৬০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ৬০-৮০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং ৮০ লিটারের বেশি প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই কারণে গাড়ির মালিকরা এ প্রক্রিয়াকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট বলে মনে করে। তবে মাঝে মধ্যে কিছু প্রাইভেটকারের পুনঃপরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। তবে বাস-ট্রাক বা অন্য যানবাহনগুলোর কোনো তথ্যই বিস্ফোরক অধিদফতরের কাছে নেই। সা¤প্রতিক সময়েও কয়েকটি গাড়িতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
Showing posts with label সিলিন্ডার বোমা. Show all posts
Showing posts with label সিলিন্ডার বোমা. Show all posts
Subscribe to:
Posts (Atom)