অনলাইন ডেস্ক:
ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুরের উপর দিয়ে ৪ মে সকালে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আর আবহাওয়া কর্মকর্তা বলছেন, ‘ফণী’ যদি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।
প্রস্তুতির ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এনডিআরসি প্রতিনিয়ত সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে। সিপিসির হেড কোয়ার্টার ও উপকূলীয় ১৯টি জেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এসব জেলার উপজেলা পর্যায়েও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। রেডক্রিসেন্টের কন্ট্রোলরুমও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা প্রস্তুতি রেখেছেন।
‘সিপিপির ৫৬ হাজার ভলান্টিয়ারকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা প্রস্তুত আছে। তারা ইতোমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। মানুষের অন্ন-বস্ত্র চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব জেলার প্রশাসকদের কাছে দুইশ মেট্রিকটন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে পাঁচ লাখ করে টাকাও দেওয়া আছে। একইসঙ্গে ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
‘স্যালাইনের সুপেয় পানির জন্য পানির ট্রাক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ লন্ডনে যাওয়ার আগে তার মুখ্য সচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশাকরি হতাহতের ঘটনা আমরা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারবো।’
বুধবার (২০) বিকেলে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় ফণী বিষয়ক বৈঠকে একথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। বর্তমানে ফণী ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করছে। কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২০৫ কিলোমিটার। ১৯ জেলা ও তার প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। ফণীপ্রবণ এলাকায় সব সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট, পুলিশ, আনসারসহ সব স্বেচ্ছাসেবকদের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, রংপুর হয়ে দিনাজপুরের দিকে যেতে পারে। সেই সঙ্গে কক্সবাজার ও চট্রগ্রামে আঘাত হানতে পারে। তবে ফণী ৪ মে সকাল নাগাদ এ আঘাত হানতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৪ এপ্রিল গভীর সমুদ্রে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপে জন্ম নেওয়া এ ঘূর্ণিঝড় বর্তমানে মহাপ্রলংকারী রূপ নিয়ে গভীর সমুদ্রেই রয়েছে। বর্তমানে মোংলা বন্দর থেকে তা এক হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ফণী তামিলনাড়ু উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে। কিন্তু এখন তা উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রমের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পশ্চিমা বায়ুর ঘূর্ণায়নে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।
বৈঠকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, শক্তিশালী ফণী যদি গভীর সমুদ্র থেকে সরাসরি মোংলা হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা হয়ে আমাদের দেশে আসে তাহলে তা অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারত সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এলাকাগুলোতে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে এটা ৫, ৬ বা ৭ নম্বর সংকেতে উন্নীত হতে পারে। এই বিপদ সংকেত বেড়ে যদি ৮, ৯ বা ১০ এ উন্নীত হয় তাহলে তা হবে মহাবিপদ সংকেত।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আরও বলেন, এই মহূর্তে এর গতিপথ যেভাবে রয়েছে তাতে প্রথমে এটি ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত করবে, এরপর পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু এর গতিপথ যদি পরিবর্তন হয়ে সমুদ্রের কোল ঘেষে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে এটি খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে ভয়াবহ আকারে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।