রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
শতকরা হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের বরাদ্দ কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে সামরিক খাতে মোট বাজেটের ৬ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক অন্যান্য দফতর ও সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ৩২ হাজার ৫২০ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তবে শতকরা হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের বরাদ্দ কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামরিক খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরকে রাখা হয়েছে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে। তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে রাখা হয়েছে আন্তঃবাহিনী দফতরগুলোকে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণের বিষয়টি রাখা হয়েছে চতুর্থ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে।
প্রতিরক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর ব্যবস্থাপনা, স্থলসীমা, জলসীমা, আকাশসীমা ও সমুদ্রসীমা রক্ষা করা। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন, বাজেট ব্যবস্থাপনা, সামরিক ভূমি ব্যবস্থাপনা, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, পূর্বাভাস। দেশের ক্যাডেট কলেজগুলো এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি করা। মহাকাশ গবেষণা, ভূ-উপগ্রহ পাঠানোসংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম ও জরিপ অধিদফতরের কার্যক্রম পরিচালনা ও সামগ্রিক তত্ত্বাবধান করা।
অগ্রাধিকারে পুলিশসহ চার বাহিনী: এবারের বাজেটে পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও কোস্টগার্ডকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ব্যয় খাত ও কর্মসূচির মধ্যে রাখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য নতুন (২০১৯-২০) অর্থবছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯২৩ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধান কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে, জননিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণী প্রশাসনিক কার্যক্রম ও এতদসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
কৌশলগত গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশের উন্নয়ন সুসংহত করা। সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কার্যক্রম, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্মিলিত কার্যক্রম গ্রহণ। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র, সরঞ্জাম, রসদ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ, যুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার যথাযথ প্রসিকিউশন দাখিল, ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান করা। জননিরাপত্তা রক্ষায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও চুক্তি করা।
বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও ভিডিপি এবং কোস্টগার্ডের কর্মদক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে এসব বাহিনীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান দমন এবং মানব ও মাদকপাচার রোধের জন্য বিজিবির পুনর্গঠনকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অধীন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কারা অধিদফতর ও বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের জন্য এবারের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ মোকাবিলা, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সুষ্ঠু কারা ব্যবস্থাপনা ও বিদেশ গমনাগমন আরও সহজ, টেকসই ও সময়োপযোগী করার মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও নাগরিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য বাজেটে এ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রধান কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে, সুরক্ষা সেবা সংক্রান্ত বিধি-বিধান, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কারা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, পাসপোর্ট, ভিসা ও নাগরিকত্ব দেওয়া সহজীকরণ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যক্রম পরিচালনা, প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগের সময় উদ্ধার কাজে সহায়তা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা ও চুক্তি সম্পাদন করা।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অনুমোদন দেওয়া হলেও সে বৈঠকেও আধঘণ্টা দেরিতে পৌঁছান অর্থমন্ত্রী। দুপুর ১টা ২১ মিনিটে বৈঠকে যোগ দেন তিনি। এবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তাফা কামালের এটিই প্রথমবারের মতো বাজেট পেশ। এটি দেশের ৪৮তম ও আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম বাজেট। বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পক্ষ থেকে সংসদে বাজেট বক্তৃতা পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।