‘চেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্বে’ ভেঙে পড়েছে মান্দা এসসি মডেল স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা

admin September 04, 2018

নওগাঁ: নওগাঁর মান্দায় ‘চেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্বে’ গত তিন বছর থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিনে চেয়ার দখল নিয়ে নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চেয়ারকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে নানান তালবাহনা করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মান্দা এসসি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ’। সমস্যা সমাধান করে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি অভিভাবকদের।


সূত্রে জানা গেছ, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ৫৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৮২ জন ও ছাত্রী ২৮১ জন। ভোকেশনাল পর্যায়ে ৯ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রায় ১২২ জন। কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ জন। কলেজ শাখা এখনও জাতীয়করণ হয়নি। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকের পদসংখ্যা ২০ জনের বিপরীতে আছে ১৭ জন, ভোকেশনাল পর্যায়ে শিক্ষকের পদসংখ্যা ১৮ জনের বিপরীতে আছে ১৬ এবং কলেজ শাখায় শিক্ষক আছে ৮ জন।


জানা গেছে, গত ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রধান শিক্ষক ও ডিসেম্বরে সহকারি প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেন। পরিপত্র অনুযায়ী একই সালের ৩১ ডিসেম্বরে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে অত্র প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার সিনিয়র শিক্ষক সমরেশ মজুমদারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৪/০৭/২০১৫ ইং তারিখে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় শাখার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ গোলাম মোস্তফা মোহা: নুরুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।


পরবর্তীতে ৩০/০৯/২০১৫ ইং তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে আবারও দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ গোলাম মোস্তফা মোহা: নুরুজ্জামানকে অপসারণ করা হয়। ওই তারিখে কারিগরি শাখার তিনজন জ্যেষ্ঠকে বাদ দিয়ে জুনিয়র ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মো: রোস্তম আলীকে ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) এর দায়িত্বভার অর্পন করা হয়। এতেই শুরু হয় নানান জটিলতা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজসে পরিপত্র পরিপন্থীর নিয়ম বর্হিভ‚ত ভাবে জুনিয়রকে দায়িত্বভার অর্পন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


গত ১৯/০১/২০১৬ ইং তারিখে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড থেকে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। সেখানে সমরেশ মজুমদারের অব্যহতি পরবর্তী জ্যেষ্ঠকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বলা হয়। সে মোতাবেক কারিগরি শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক মো: শাহজাহান আলী মৃধা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবিদার বলে জানা গেছে। অপরদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষক নাই। শরীর চার্চা শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত অ্যাসেম্বলী হয়না। মোট কথা শিক্ষক স্বল্পতা ও চেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।


আরও পড়ুন >> সৈয়দপুরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা


বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আতিকুর রহমান মিঠু বলেন, ২০১৪ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন ভাবে চলছিল। দুইটি অ্যাডহক কমিটির পর বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ কিমিটি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ, দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।


সহকারি শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী মৃধা বলেন, বিষয়টি নিয়ে বারবার সভাপতিকে অবহিত করলেও তিনি কোনরুপ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বিধি বর্হিভ‚ত ভাবে তিনি জুনিয়রকে ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) এর দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।


প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক) মো. রোস্তম আলী বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটি অদ্যবধি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একটি কুচক্রী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্নভাবে পায়তারা করছেন। তবে নিয়মিত অ্যাসেম্বলী না হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।


প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গৌতম কুমার মহন্ত বলেন, পরিপত্র অনুযায়ী মো. রোস্তম আলীকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে মো. রোস্তম আলীকে যখন দায়িত্ব দেয়া হয় তখন মো. শাহজাহান আলী মৃধা অসুস্থতার কারণে ছয়মাসের ছুটিতে ছিলেন। তবে বোর্ড থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেয়ার জন্য এ বিষয়টি তিনি কখনো আমাকে অবগত করেননি। এছাড়া দুইপদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। তালবাহনার বিষয়টি ভিত্তিহীণ।


নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মোসলেম উদ্দিন বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শাখার কোন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব নয়, বরং মাধ্যমিক পর্যায়ের এমপিও ভূক্ত কোন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অধ্যক্ষ/ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন বলে যুক্তিযুক্ত এবং আইনসংগত। তবে প্রতিষ্ঠানের জটিলতার বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিই সুরাহা করতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three