স্বাস্থ্য ডেস্ক: জীবনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত আমাদের টাকা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই টাকা অজান্তেই আমাদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এটা জানতেন কি? জীবাণুর আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা। এই ধরুন, পেটে ব্যাথ্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎকরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আপনার এই দশা। জেনে রাখুন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে আপনার পকেটের টাকাই আপনাকে এই অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। অন্তত বিজ্ঞানীদের এমনটাই দাবি।
সম্প্রতি ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, টাকার মধ্যে কমপক্ষে ৭৮ টি জীবাণুর খোঁজ মিলেছে। টাকা লেনদেনের সঙ্গে এই জীবাণুরও লেনদেন ঘটে। আর এভাবেই এসব ক্ষতিকারী জীবানু পৌঁছে যাচ্ছে আপনার হাতে। একটু অসতর্ক হলেই সেই জীবানু হাত থেকে পেটে যেতে কতক্ষণ?
এমন অবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে একটি চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির বাণিজ্যিক সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স। অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে.পি. নাড্ডা এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বলে দাবি সিএআইটি-র। তাদের যুক্তি কী?
সিএআইটি জানাচ্ছে, বেশির ভাগ রোগ ছড়াচ্ছে ব্যাঙ্ক নোটের মাধ্যমেই। বাজারে ছড়িয়ে থাকা সব ধরনের ব্যাঙ্ক নোট স্বাস্থ্যের কতটা হানি ঘটাচ্ছে, তা পরীক্ষা করা দরকার। সিএআইটি বিভিন্ন জার্নালের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, টাকার মধ্যে কমপক্ষে ৭৮ ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ইনস্টিটিউট অব জেনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন টাকার মধ্যে যে সব ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের হদিস মিলেছে, সে সব জীবাণুই পেটের রোগ থেকে মাথা যন্ত্রণা-সহ একাধিক রোগের জন্য দায়ী। দিল্লির এক হাসপাতালের অণুজীব বিজ্ঞানী নন্দিনী দুগ্গল জানাচ্ছেন, টাকা বাহিত রোগগুলির মধ্যে অন্যতম ইনফ্লোয়েঞ্জা। তাঁর নিদান, টাকা ব্যবহারের পর ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।
অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল সায়েন্স-এর প্রাক্তন গবেষক মুনীব ফায়েক বলছেন, “’টয়লেট পেপারের থেকেও টাকা বেশি নোংরা। টাকার মাধ্যমে জীবাণু বেশি ছড়ায়।” মুনীব আরও জানান, মুখের লালা হাতে লাগিয়ে টাকা গোনা এখুনি নিষিদ্ধ করা উচিত। এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, টাকার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ইউক্যারিওটিক প্রজাতির ছত্রাক (৭০ শতাংশ), ব্যাকটেরিয়া (৯শতাংশ) এবং ভাইরাস (<১ শতাংশ)।
টাকা থেকে যে ৭৮ রকমের জীবাণু মিলেছে, তার মধ্যে স্ট্যাফিলোকোকাস এবং এন্টারোকোকাস প্রজাতির জীবাণু অন্যতম। স্ট্যাফিলোকোকাস-এ সাধারণত ত্বকের রোগ, সর্দি কাশি, পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এন্টারোকোকাস-এ আবার দাঁতের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কী করা উচিত? ব্যাঙ্কনোট ব্যবহারের পর অব্যশই ভাল করে হাত ধুয়ে ফেলুন। বিশেষ করে, বাজার থেকে পাওয়া নোটের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকুন। মুখের লালা দিয়ে টাকা গোনা একদমই উচিত নয়। তবে, জীবাণু ছড়ানো থেকে বাঁচতে ব্যাঙ্কনোটকে প্লাস্টিকে রূপান্তরিত করার পথে হাঁটা উচিত সরকারের বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনের মতো পলিমার ব্যাঙ্কনোট-এর ভাবনা চিন্তা করা যেতে পারে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।