সৈয়দপুরে অপহরণের শিকার স্কুলছাত্র উদ্ধার, আটক ১

admin September 07, 2018

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে সিনেমার শুটিংয়ের কায়দায় অপহরণের শিকার এক স্কুল ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় সৈয়দপুর শহরের বাইপাস সড়ক বসুনিয়াপাড়া মোড় এলাকায়। আটক যুবকের নাম ফয়সাল। সে শহরের সাহেবপাড়া হানিফ মোড় সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা স্কুল এলাকার মো: মিলনের ছেলে। উদ্ধারকৃত স্কুল ছাত্রের নাম মো: আমান। সে একই এলাকার মৃত. জব্বারের ছেলে ও সৈয়দপুর রেলওয়ে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র।


আমান জানায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রাইভেট থেকে ফিরে বাড়ির সামনে ব্রাশ করছিলাম। এমন সময় একটি কার এসে দাঁড়ায় বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায়। কার থেকে ২ জন অপরিচিত যুবক এসে আমার ক্লাসমেট আকাশের বাড়ি দেখিয়ে দিতে বলে। আমি আকাশের বাড়ির ঠিকানা বলার পর তারা অনুরোধ করে যে তাদের যেন বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেয়া হয়। এতে সম্মত হয়ে তাদের সাথে মাইক্রোবাসে উঠে শহরের পূর্ব দিকে সৈয়দপুর থানার পাশে রাসুলপুর এলাকায় ফ্রি আমিন স্কুলের দিকে যেতে বলি। কিন্তু তারা আমাকে নিয়ে উল্টোদিকে অর্থাৎ রেলওয়ে কারখানা হয়ে মিস্ত্রিপাড়া মোড় দিয়ে পশ্চিমে বাইপাস সড়কের দিকে যেতে থাকে। এতে আমি আপত্তি করায় তারা জোড় পূর্বক সেদিকেই যেতে ড্রাইভারকে তাগাদা দেয়। এক পর্যায়ে একটি তোয়ালে দিয়ে আমার চোখ মুখ বেঁধে ফেলে। এতে আমি চিৎকার করলে ড্রাইভার হঠাৎ মাইক্রোবাস থামিয়ে দিয়ে চাবি নিয়ে নেমে পড়ে এবং বলে এমন ভাড়া সে যাবেনা। এর ফলে অপহরণকারীরা কার থেকে নেমে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যায় এবং আমি নামার পর ড্রাইভারকে চিনতে পারি। পরে ড্রাইভার আমাকে নিয়ে বাড়ি পৌছে দেয়। তার সহযোগিতায় এ অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানতে পেরে তাকে এলাকাবাসী আটক করে স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিকলীগ অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেধড়ক গণপিটুনি দেয়া হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ৩ টার দিকে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।


এ ব্যাপারে কার চালক এনামুল হক জানায়, বুধবার আমির নামে একজন ড্রাইভারের সাথে ২ হাজার ৫শ’ টাকায় শুটিং করার কথা বলে ভাড়া ঠিক করে ফয়সাল। কিন্তু কোন কারণে আমির যেতে না পারায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে আমাকে জানালে আমি যেতে রাজি হই। এসময় আমাকে জানানো হয় যে, ৪ জন যাত্রী দিনাজপুর যাবে। তবে তারা রেলওয়ে শ্রমিকলীগ অফিস, রেলওয়ে কারখানা ও দিনাজপুরের জেলখানার পিছনে, বড় ময়দান এলাকায় কিছুক্ষণ করে অবস্থান করবেন। কারণ এসব জায়গায় শুটিং করা হবে। সে অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে রেলওয়ে মাঠের মাইক্রো স্ট্যান্ড থেকে ফয়সাল আমার গাড়িতে উঠে রেলওয়ে শ্রমিকলীগ অফিসের সামনে গিয়ে নেমে পরে এবং সেখানে ৩ যুবক ওঠে। তারা সেখান থেকে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা স্কুলের সামনে গিয়ে এক ছেলেকে নিয়ে আসে। তারা এসময় জানায় যে এখন নায়কের ছোট ভাইকে অপহরণের শুটিং হবে। কিন্তু তাদের হাতে কোন ক্যামেরা বা অন্যান্য উপকরণ না থাকায় আমার একটু সন্দেহ হয়। সে ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসা করলেও তারা কোন উত্তর দেয়নি। তারপর রেলওয়ে কারখানার কাছে আসার পর ছেলেটি আমাকে ফ্রি আমিন স্কুলের দিকে যেতে বলে কিন্তু কারে ওঠা অপর যাত্রীরা আমাকে মিস্ত্রিপাড়ার দিকে যাওয়ার জন্য তাগাদা দেয়। এতে ভাড়াকারীদের কথায় আমি সেদিকেই যেতে থাকি। একসময় বসুনিয়াপাড়া মোড়ে এলে আমার কাছ থেকে তোয়ালা চেয়ে নিয়ে যখন ছেলেটির চোখ মুখ বেধে দেয় তখন আমার সন্দেহ সত্যে পরিণত হওয়ায় আমি গাড়ি বন্ধ করে চাবি নিয়ে নেমে প্রথমে ছেলেটিকে আমার দরজা দিয়ে বাইরে আনি পড়ে ওই যুবকদের ধরার চেষ্টা করার আগেই তারা দরজা খুলে বের হয়ে দিনাজপুরের পখে রাবেয়া মিলের দিকে পালিয়ে যায়। পরে ছেলেটিকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌছে দেই।


আটক যুবক শহরের আলম প্রেসের মেশিন ম্যান ফয়সাল জানায়, আমান আমার ব্যাপারে অশ্লীল অপপ্রচারণা চালাচ্ছিল। আমি নাকি নেশা করি, মেয়েদের সাথে ঘুরি। তাকে বার বার নিষেধ করা সত্বেও সে থামেনি। একারণে তাকে ভয় দেখিয়ে নিবৃত করার জন্য নাটক করতে সাগর ভাইয়ের শরনাপন্ন হই। তিনি প্লাজায় প্রায়ই আসেন। কিন্তু তার বাসা কোথায় বা কি করেন তা জানিনা। তিনি তার আরও ২ বন্ধুসহ আমাকে সহযোগিতা করতে চান বলেই এ কাজ করেছি। কিন্তু আমি আমানকে শুধু ভয় দেখাতে বলেছি। কিন্তু তারা যে তাকে মারধর করবে বা চোখ মুখ বেঁধে নিয়ে যাবে তা আমার জানা ছিলনা।


সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান পাশা জানান, শুটিংয়ের নাম করে কার ভাড়া নিয়ে অপহরনের চেষ্টা করা হয়েছিল এবং স্কুলছাত্র ও চালকের সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্বায় তারা রেহাই পায় মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে, অপর ৩ জনকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three