মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

admin August 01, 2018

দারিদ্র থেকে মুক্তির আশায় পুরুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের নারী কর্মীরাও বিদেশে  বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি দিয়ে থাকেন। নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দেশ ছেড়ে অনেক স্বপ্ন নিয়েই সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশে গিয়ে থাকেন। উন্নত দেশ হওয়ায় এসব দেশে সাধারণ কোনো কাজ পেলেই অর্থের অভাব হবে না- এই আশ্বাস দিয়ে দালালরা খুব সহজেই নারী শ্রমিকদের মনে আশার সঞ্চার করে। এভাবে তারা বিদেশে পাঠাতে যতটা না ব্যয় হয়, তার চেয়েও বেশি খরচ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর চরম বাস্তবতার সঙ্গে পরাজিত হয়ে সব স্বপ্নকে মধ্যপ্রাচ্যের ওই তপ্ত মরুতে চাপা ফিরে আসে তারা। না হয় তাদের দু:খের শেষ, না শেষ হয় কষ্টের সেই করুন গল্প। তাই বিদেশে এসব শ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।



[পথদুর্ঘটনা নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর যত বিরুপ মন্তব্য]


মিডিয়ার কল্যাণে এ দেশের নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের ভয়াবহতা এখন প্রায়শই খবর পাওয়া যায়। নির্মম অত্যাচার সইতে না পেরে তারা দেশে ফিরে আসছে। আবার অনেকে সেখানে কি অবস্থায় আছে সেটা জানারও উপায় নেই। যারা ফিরে আসছেন তারা বলছেন, ছ্যাঁকা, বৈদ্যুতিক শক, অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে নেওয়া, পাসপোর্ট রেখে দেওয়া, খাবার খেতে না দেওয়া, ধর্ষন ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। আর নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরিও ছাড়া যায় না; দেশেও ফেরত আসা যায় না।

আবার অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করতে গেলে জরিমানা থেকে শুরু করে তাদের ফেরত পাঠানোর ভয়তো আছেই। তাছাড়া কর্মী-মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে উল্টো কর্মীর বিরুদ্ধে তখন চুরির অপবাদ দেওয়া হয়। গৃহকর্তারা যখন নির্যাতন করে, তখন আসলে সেসব নির্যাতনের প্রমাণ রাখা খুবই কঠিন। কারণ এগুলোর বেশিরভাগই মালিকের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানে করা হয়ে থাকে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা যায় না।



[পথদুর্ঘটনা: বেপরোয়া ড্রাইভারদের বাগে আনতে হবে]


আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে, মধ্যপ্রাচ্যে এদেশের শ্রমিকদের সংখ্যা একুশ লাখের কাছাকাছি। দেশের ৭ লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে কাজ করছেন, যার মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ সৌদিতে। এখন নির্যাতিত নারীরা ফেরত আসছে। এই বিষয়টি আসলে এখন নারী নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে দেশের জন্যও অপমানজনক হয়ে গেছে। সৌদিরা জানে, আইনগতভাবে কিছু করা যাবে না তাদের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশটাকেও এ ধরনের আচরণের দ্বারা তারা যথেষ্ট অপমান করে যাচ্ছে। তবে নির্যাতন বাড়ার ফলে নারী শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। কারণ পেটের দায়ে আমাদের নারীরা যেন বাধ্য হয়ে পড়েছে দাসত্ব খাটতে।




[মিয়ানমার সরকারের তামাশা ও দাম্ভিক আচরণ]



অন্যদিকে ভিন্ন গল্পও চালু আছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নারীরা খাপ খাওয়াতে পারছে না অথবা অধিকাংশই দেশে এসে মিথ্যা গল্প বানাচ্ছে। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ দাবি সর্বৈব সত্য হতে পারে না। কারণ এ ধরনের ঘটনার অহরহ বর্ণনা নিয়মিত শোনা যায়। তাছাড়া সৌদি গৃহমালিকরা যদি এ ধরনের অমানবিক আচরণ করেও থাকে তবে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসাও বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে উপায় একটাই- আর তা হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে ওসব দেশে তাদেরকে পাঠানোই একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।


যেহেতু আমরা ওদের কাছে কর্মসংস্থানপ্রার্থী সেহেতু আমরা তাদেরকে বাগে আনতে পারছি না। বরং আমাদেরকেই নিচু হয়ে তাদের অমানবিক আচরণ মেনে নিতে হচ্ছে। এমতবস্থায়, আত্মমর্যাদার স্বার্থে, নির্যাতনের প্রতিবাদে অবশ্যই আমাদেরকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছাতে হবে। এভাবে আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে রেমিটেন্স এনে দেশ উন্নত করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। রেমিট্যান্স আসার কারণে নারীদেরকে আমরা এভাবে বিকিয়ে দিতে পারি না। বিদেশে নির্যাতিত নারীদের কান্না নিয়ত দেশবাসীর আত্মমর্যাদায় আঘাত করছে। তাই রাষ্ট্রকেই দেশের সম্মান ধরে রাখায় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three