প্রতি বছর কোরবানিতে পশুর বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে পরিবেশ দুষিত হয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য নগরীগুলোতে যত্রতত্র পশু কোরবানি দেওয়ার কারণে দুই-তিন যাবত দুর্গন্ধ ও রাস্তায় ময়লা আবর্জনার রাজত্ব বিরাজ করে। এ নিয়ে সিটি করপোশন কর্মীদের গলদঘর্ম হতে হয়। নির্ধারিত সময়ে নগরীগুলো বর্জমুক্ত করাই যেন করপোরেশনগুলোর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা লোকবল সংকটের সেই চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়। ফলে নগরবাসীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পশু কোরবানির ক্ষেত্রে অবশ্য নির্ধারিত স্থান ব্যবহার করা হয় এবং একটি নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য জমা হওয়ার কারণে সেগুলো দ্রুততার সাথেই সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করায় অনাগ্রহের পেছনে সুযোগ সুবিধার অভাবের পাশাপাশি অনভ্যস্ততা একটি বড় ব্যাপার। আমাদের দেশের লোকজন সাধারণত বাড়ির সামনে, গলিতে, রাস্তায় পশু কোরবানি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এতে পশুর গোস্ত আনা-নেওয়ায় সুবিধা ও পানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের নাগালে পাওয়া যায়। এছাড়া পশুর গোস্ত কাটার কাজে পরিবারের সকলকেই কাছে পাওয়া যায়। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন স্থান নির্ধারণ করে দিলেও পশু জবাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। পানি সমস্যা ও পরিবেশগত দিক ভালো না হওয়ায় এসব স্থানে যেতে আগ্রহ দেখান না সাধারণ মানুষ।
তবে নগরীগুলোর পরিবেশ পরিষ্কার রাখার স্বার্থে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাই নিশ্চিত করতে তৎপর প্রশাসন। এ জন্য পবিত্র ইদুল আযহার ছয় দিন আগেই জবাইয়ের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে মোট দুই হাজার ৯৩৬টি স্থান পশু জবাইয়ের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২০, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৩, রাজশাহী সিটিতে ২১০, চট্টগ্রাম সিটিতে ৩১৪, খুলনা সিটিতে ১৬৩, বরিশাল সিটিতে ১৩৫, সিলেট সিটিতে ৩৬, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ১৮৩, কুমিল্লা সিটিতে ১৯০, রংপুর সিটিতে ৯৯ ও গাজীপুর সিটিতে ৪৪৩টি স্থান রয়েছে।
যথাস্থানে কোরবানি করানোর ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার জন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। এ জন্য এর উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তাগুলোর প্রচার আরো বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও ভ‚মিকা রয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করা গেলে দেখা যাবে সিটি করপোরেশনগুলোর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগরীগুলোকে পরিষ্কার করতে গিয়ে যে পরিমাণে গলদঘর্ম হন তার অনেকটাই লাঘব হয়ে যাবে। শতভাগ পশু নির্ধারিত স্থানে কোরবানি নিশ্চিত করার আগে পর্যন্ত যেহেতু যত্রতত্র পশু জবাই হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যার যার পশুর বর্জ্য অলি-গলিতে জমা না করে করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো সহজেই ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে পারেন। সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এটুকু সহযোগিতা করা আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য।
ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ইদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। আমাদের বসবাসের পরিবেশ হোক আরো সুন্দর। সবাইকে ইদুল আযহার শুভেচ্ছা।