অনলাইন ডেস্ক:
শনিবার সকালে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এটি সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়।
খবর অনুযায়ী, ফণীর প্রভাবে ও আঘাতে গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, ভোলা, বরগুনা, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভোলা : ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে আজ ভোলার সাত উপজেলায় প্রায় শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার দক্ষিণ দিঘলদী এলাকায় ঘরচাপা পড়ে রাণী বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও ভোলার বোরহানউদ্দিনের চর জহিরউদ্দিন, তজুমদ্দিনের চর মোজাম্মেল, মনপুরার চর নিজাম, চরফ্যাশনের ঢাল চর, কুকরী-মুকরী, চর পাতিলাসহ কয়েকটি চরে ঘরবাড়ি ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে প্রায় ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চরজব্বর ইউনিয়নের চর আমিনুল হক নামক গ্রামটি টর্নেডোতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আজ ভোর ৪টায় এক থেকে দেড় মিনিটের এ টর্নেডোতে প্রায় শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ঘরচাপা পড়ে ইসমাইল হোসেন (২) হোসেন নামে শিশু নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৩০-৩৫ জন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ : ফণীর প্রভাবে গতকাল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলায় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাকুন্দিয়ার তিনজন, মিঠামইনের দুইজন ও ইটনার একজন রয়েছেন।
নিহতরা হলেন পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কুর্শাকান্দা গ্রামের আয়াজ আলীর ছেলে আসাদ মিয়া (৫৫), একই উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আবদুল হালিমের মেয়ে নুরুন্নাহার (৩০), একই এলাকার এন্তাজ আলীর ছেলে মুজিবুর (১৭), মিঠামইন উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের গোলাপ মিয়ার ছেলে মহিউদ্দিন (২৩), একই উপজেলার কেওয়াজোড় ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের এবাদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৭) ও ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাটুইর গ্রামের রাখেশ দাসের ছেলে রুবেল দাস (২৬)।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনার মদন উপজেলায় গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কদমশ্রী হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আব্দুল বারেক (৩৫)। তিনি মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের মনিকা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত রোমালির ছেলে।
বরগুনা : বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসে কাঠের ঘর ভেঙে পড়ে দাদি ও নাতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানি গ্রামের বাঁধঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নুরজাহান (৬০) ও তার নাতি জাহিদুর (৯)। জাহিদুর বাঁধঘাট এলাকার ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে।
বাগেরহাট : প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বইছে ঝড়ো হাওয়া। সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে চোরামনকাটি গ্রামে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে শাহানুর বেগম (৩৫) নামে এক নারী নিহত হন। তিনি ওই গ্রামের মোজাহারের স্ত্রী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় বজ্রপাতে আপেল মিয়া (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির সময় নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নের বগডহর গ্রামে এ বজ্রপাত হয়। নিহত আপেল ওই গ্রামের উরমুজ আলীর ছেলে। তিনি ক্ষেতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন।
মাদারীপুর : ঘূর্ণিঝড় ফণীকে ঘিরে দেয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচলের সময় গতকাল বিকেলে এক যাত্রী নিহত ও ১০ যাত্রী আহত হন। এ ঘটনায় আমির হামজা নামে ৬ বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। শিশুটি উদ্ধার করতে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পদ্মা নদীতে কাজ শুরু করলেও বৈরী আবহাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে। এ দুর্ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৯ স্পিডবোট চালককে আটক করেছে পুলিশ।