দুই বছর আগে ঢাকার ক‚টনৈতিক পাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণ করেছে নগরবাসী। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটির ফটক খুলে দেওয়ার পর শোকার্ত নাগরিকদের পাশাপাশি নিহত বিদেশিদের স্মরণ করতে আসেন ক‚টনীতিকরা। জঙ্গি হামলার পর কয়েক মাস সেই বাড়িটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকার পর বাড়িটিতে বসবাস করছেন মালিক। ওই ভবনের সামনে তৈরি অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বেলা ২টা পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। জাপান ও ইতালি রাষ্ট্রদূতের পর বিদেশি মিশনগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পর নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ক‚টনীতিক পাড়া গুলিশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। রাতভর উৎকণ্ঠার পর ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের অভিযান ঘটে। হামলায় অংশ নেওয়া নব্য জেএমবির পাঁচ জঙ্গি ওই অভিযানে নিহত হয়। জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন জাপানি। নিহত জাপানিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন। সেদিন ইতালীয় বায়িং হাউজ স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৫২ বছর বয়সী নাদিয়া বেনেদিত্তোর সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসা আরো ৬ জন ইতালীয় ব্যবসায়ী। গতকাল রোববার সকালে স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ৩৫ জন কর্মকর্তা হলি আর্টিজান বেকারিতে আসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। তাদের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার ওয়াহিদ আলম বলেন, নাদিয়া বাংলাদেশের একজন সম্পদ ছিলেন। তিনি ইতালীয় ব্যবসায়ীদের এ দেশে বিনিয়োগ করতে আসতে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতেন। এদেশের অর্থনীতির জন্য ছিল তার অনেক অবদান। নিহতদের প্রতি দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, হলি আর্টিজানের হামলার পর থেকেই আমরা দ্রæত ব্যবস্থা নিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেষ্টায় আমরা জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক দুর্বল করতে পেরেছি। তবে তাদের এখনো নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
গত দুই বছরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর বাংলাদেশে এখন কতটুকু নিরাপদ এমন প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, হলি আর্টিজানের পর তেমন কোনো বড় কোনো হামলা ঘটেনি। কিন্তু ইউএসের মতো দেশেও জঙ্গি হামলা হয়। সেই তুলনায় আমরা ভালো আছি। জঙ্গিবাদের সমস্যা মোকাবেলায় ‘সব সময় সতর্ক’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম বলে তিনি দাবি করেন। বিএনপির পক্ষে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান দলের ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরীরে নেতৃত্বে একটি দল। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নৃসংশ জঘন্য হত্যাকাÐ যেটা হয়েছিল, যেটা শুধু বাংলাদেশই নয় পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। সেই ঘটনার দুই বছরপূর্তি আমরা করছি। এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তদন্ত শেষ হয়নি, বিচারকার্য শুরু করতে পারেনি। পরে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হলি আর্টিজানের হামলার দিনে আমরা খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে তাদের দমন করেছি। গত দুই বছরের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বকে সিগনাল দিতে সক্ষম হয়েছি যে, বাংলাদেশ জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় নয়। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদ বরদাস্ত করবে না। এখনো আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। কারণ জঙ্গিবাদ একটি দীর্ঘ পক্রিয়া। সম্পর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তবে সেখানে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন ডিশ ক্লিনার জাকির হোসেন শাওন, পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে শাওনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহকে নিয়ে এসেছিলেন তার মা মাকসুদা বেগম। তার বুকে ছেলের একটি ছবি। মাকসুদা বেগম বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।