গত ৫ জুলাই থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তাসহ বেশকিছু নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের তিস্তা পাড়ের এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দেয়। পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয় এসব এলাকার গ্রাম, ভাঙন শুরু হয় নদী পাড়েরর গ্রামগুলো, চরম দুর্ভোগে পরে এলাকার বাসিন্দারা। তবে ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। ফলে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও যমুনা পাড়ের নিম্নাঞ্চল এলাকা বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় পানি বাড়ছে বলে জানা গেছে। যমুনার পানি বাড়ায় বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জসহ মধ্যাঞ্চলও।
উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পানি বাড়ছে যমুনা পাড়েরর বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলাসমূহে।যমুনার পানি বাড়ছে হুহু করে, ক্রমেই অবনতি ঘটছে বন্যা পরিস্থিতির। যমুনার পানি বাড়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জসহ মধ্যাঞ্চলও।
উত্তরাঞ্চলে পানি কমতে শুরু করলেও বন্যার কবলে চরম কষ্ট আর দুর্ভোগে দিন পার করছেন এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা। আবার অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, আবাস ও খাবার সঙ্কট। আর দূষিত পানি পান করায় বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। এদিকে এসব এলাকায় বন্যা পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি।
কুড়িগাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকায় শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ টন জিআর চাল, দুই লাখ টাকা জিআর ক্যাশ এবং ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। জানা গেছে, কুড়্রিগামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। অনেক এলাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। জেলার সদরের সন্ন্যাসী বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বাহাদুর মিয়া জানান, ঘরবাড়ি থেকে এখনও পানি পুরোপুরি নামেনি। তাই পলিথিন টাঙিয়ে তারা এখানে আছেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবির জানান, তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দ্রুত জমা দেওয়ার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার দ্বিতীয় তিস্তা সেতু সড়কের একটি সেতু ধসে গেছে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, সেতুর ভাঙনরোধকল্পে আপাতত বালুর বস্তা দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে লালমির হাটেও বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। লালমনিরহাটের দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, তিস্তার পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ফলে দুর্গত এলাকা থেকে পানি নামছে। জানা গেছে তিস্তা সংলগ্ন চর এলাকাগুলোতে এখনো কয়েখ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট। ফলে বন্যা দুর্গতরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুইচিং মং মারমা বলেন, বন্যদুর্গতদের জন্য ৩৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চাল ও অন্যান্য ত্রাণ সাম্রগী বিতরণ চলছে বলেও জানান তিনি।
উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পানি বাড়ছে বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা পাড়ের নিম্নাঞ্চলসমূহে। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে। যমুনার পানি বাড়ছে হুহু করে। পানির স্রোতে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙন। এসব এলাকার লাখো মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
এদিকে উত্তরাঞ্চলে বন্যা কবলিত হওয়ার পাশাপাশি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জসহ মধ্যাঞ্চলও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকালের তথ্য অনুসারে, যমুনা নদীর পানি একটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে এবং দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমায় অবস্থান করছে বলে জানায় পাউবো। অপরদিকে উজানের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে সিলেটে অঞ্চলে। বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীরণ কেন্দ্র গতকাল জানিয়েছে, সুরমা, কুশিয়ারা ৪টি পয়েন্টে পানি হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে।