ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
দেশে যখন খাদ্য সঙ্কট, মানুষের দ্বাারে দ্বারে অভাব, খেয়ে না খেয়ে মানুষ যখন জীপন যাপন করছিলো। উচ্চশিক্ষা অর্জন যে সময় অনিশ্চিত চাওয়া ছিলো শিক্ষার্থীদের। সে সময়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের ছোট্ট জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম নেন তিনি। এ জেলাতেই শৈশব, কৈশর কাটিয়ে বেড়ে উঠা তাঁর। এ অঞ্চলের মানুষের সেই দুঃসমের চিত্র তাঁর মনে ছাপ ফেলে। তখনই বুকের ভেতর স্বপ্ন বুনে একটি স্বচ্ছল দিনের। যেখানে মানুষ না খেয়ে থাকবেনা আর শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেনা কোন শিক্ষার্থী।
তাঁর জন্মস্থানে তারই শৈশব ও কৈশরকাল খুঁজতে গিয়ে মিলেছে নানা অজানা তথ্য। তিনি তখন থেকেই ভাবতেন দেশ ও দেশের মানুষের জীবন মান কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে কথা? নিজের জন্মভূমিতে প্রতবেশীদের অভাব অনটন আর মানুষের জীবনের সঙ্কটময় সময় তিনি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। মানুষের দুঃসময়ে শৈশবকাল থেকে এখন পর্যন্ত নিজেকে উজার করছেন তিনি। এমনকি নিজের টিফিনের টাকা জমিয়ে মেধাবী গরীব সহপাঠীদের লেখাপড়ার জন্য করেছেন নানা রকম সাহায্য সহযোগীতা। সে সময় থেকেই তিনি এলাকার একটি সোনার টুকরো ছেলে। যিনি ভাবেন অসহায় প্রতিবেশী, সহপাঠী আর গরীব মেহনতী মানুষদের নিয়ে। এমনই অজানা তথ্য এই প্রতিবেদককে জানাচ্ছিলেন তাঁরই একাধিক প্রতিবেশী ও সহপাঠী।
আরও জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত তিনি। মানুষের সেবায় নিজেকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত করতে প্রস্তুত তিনি। সে ইচ্ছা ও মানুষের পাশাপাশি থেকে মানুষের অধিকারে কথা বলতে করেছেন ছাত্র রাজনীতি। অনেক মেধা, শ্রম ত্যাগের বিনিময়ে তিনি আজ একজন আপাদমস্তত রাজনীতিবিদ। তাঁর রাজনীতি জীবন যাত্রা শুরু হয়ে আজও থামেনি। পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি কোনোদিন।
তিনি তার রাজনৈতিক দলকে সুসংগঠিত করেছেন। কাঙ্খিত লক্ষ্যেও নিয়েছেন প্রিয় দলকে। নজর কেড়েছেন দলের শীর্ষ নেতাসহ সভানেত্রী শেখ হাসিনারও। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি জেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ছিলেন কাণ্ডারি। তিনি হলেন-ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী।
তিনি ১৯৬০ সালের ৩১ শে আগস্ট ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ইসলাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছেন। এরপর ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেণি পড়েছেন বর্তমান ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৭৫ সালে ঠাকুরগাঁও রোডের ইসলাম নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর ১৯৭৭ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৭৯ সালে বিএ পাস করেন মুহা. সাদেক কুরাইশী।
সরকারি কলেজে পড়াকালে ছাত্ররাজনীতি করেন। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সামরিক আইন জারির সময় গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের সুসংগঠিত করে সভা, সমাবেশ মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগ্রামেও লিপ্ত ছিলেন তিনি। সে সময় অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আন্দোলনে আরও কার্যকরি হন মুহা. সাদেক কুরাইশী। আন্দোলনের পর পুনঃরায় চাকরিতে যোগদান করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ। ১৯৮২-৮৩ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ১৯৮৪-৮৬ সাল পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে যুবলীগ হয়ে ওঠে গঠনমূলক ও শক্তিশালী। তার দক্ষতা ও নেতৃত্বের অগ্রগতিতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। পরে চলে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে।
১৯৯১ সালে দায়িত্ব পান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের। ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে দলীয় কোন্দলে দল জড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্র থেকে ভেঙ্গে দেয়া হয় কমিটি। সেই সময় ছিল দলের দুঃসময়। দলের ভার পড়ে যায় তার কাঁধে। সাদেক কুরাইশী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদে থেকে তিনি দলের কোন্দল দূর করে সুসংগঠিত করেছেন। দিনরাত শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন। ২০০৫ সালের দলীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাদেক কুরাইশী। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঠাকুরগাঁও-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগ দেন সাদেক কুরাইশীকে। নিয়োগ প্রাপ্তির পর জেলা পরিষদ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টিয়ে ইতিবাচকে নিয়ে এসেছেন। দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জেলার উন্নয়ন করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ম্যুরাল ও স্মৃতি ফলক স্থাপন করেছেন জেলা পরিষদ থেকে।
জেলার ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার বালিয়াডাঙ্গী মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ সম্বলিত ম্যুরাল, জাতীয় চার নেতার ছবি সম্বলিত ম্যুরাল, জেলা পরিষদ হল রুমের সামনে ৭ বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল, ডাকবাংলো হলের সামনে ও নেকমরদ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে নির্মাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ম্যুরাল। এছাড়াও জেলা পরিষদের অর্থায়নে মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, এডিবির উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক মুহা. সাদেক কুরাইশী। বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলার অনগ্রসর এলাকা চিহ্নিত করে সুপেয় পানির জন্য শতাধিক স্থানে টিউবয়েল স্থাপন করেছেন। সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলা কর্মকান্ডের জন্য জেলা পরিষদ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দেয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে আবারো ঠাকুরগাঁওজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়।
তিনি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য নির্মূলে দলীয় অবস্থান থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত দূর্গ গড়ে তুলেছেন। সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে তিনি জনগণকে এক্যবদ্ধ করেছেন। সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন।
উল্লেখ্য সাদেক কুরাইশী ২০০৯ সালে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ দিনের সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ পরিষদে যোগ দেন। ২০১৫ সালেও কোরিয়া ও চীনে সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ পান।
সাদেক কুরাইশীর রাজনৈতিক উত্থান কোন গল্প নয় একটি বাস্তব ইতিহাস। তাঁর নিরলস ও কঠোর পরিশ্রমে দল আজ গোছানো। ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মানুষ তাকে ভালো মানুষ হিসেবে চেনে এবং জানে। এক কথায় বলতে গেলে আ. লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাণ্ডারী হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও মানুষের নেতা মুহা. সাদেক কুরাইশী। তাই দলীয় নেতাকর্মীসহ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চাওয়া ও বিশ্বাস যে, জননেতা সাদেক কুরাইশী একদিন ভবিষ্যতে রাজনীতির আরও ভালো স্থানে গিয়ে নেতৃত্ব দেবে এবং এভাবেই মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে তাঁর সকল ভালো কাজের জন্য তিনি চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরে।