ঢাকা: সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুতে কুড়িগ্রাম-২ আসনটি এখন শূন্য। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় উপ-নির্বাচন হবে না এ আসনে।
জানতে চাইলে কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। তাই সেখানে উপ-নির্বাচন করার মতো সময় নেই।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন জানান, সংবিধান অনুযায়ী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে কুড়িগ্রাম-২ আসনে উপ-নির্বাচন করার কথা। কিন্তু ৩০ অক্টোবর থেকে জাতীয় নির্বাচনকালীন সময় শুরু হবে। ওই সময় থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও পুরোদমে শুরু হবে। এতে করে কুড়িগ্রাম-২ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের পর উপ-নির্বাচন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকবে না।
প্রসঙ্গত গত ১৩ আগস্ট তাজুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর আসনটি শূন্য হয়ে যায়। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আবার ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।
ফেইসবুক থেকে নিষ্কৃতির উপায় নিয়ে নাটক ‘ফেসবুক ছাড়ার ৬টি উপায়’
ফেসবুক ফেসবুক ছাড়ার ৬টি উপায় বিনোদনবিনোদন ডেস্ক: ফেইবুক আসক্ত নিজের দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন রহমান সাহেব। কেননা তার দুই ছেলেমেয়ে ফেসবুকে এতটাই আসক্ত যে ফেসবুকিং করতে গিয়ে কতবার দরজায় ধাক্কা খেয়েছে, গাড়ির নিচে পড়তে গিয়েছিল তার কোনও ইয়াত্তা নেই। ওদের চোখ ফেসবুক থেকে সরতে চায় না। অবস্থা এমন, পারলে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু বাথরুম, পড়াশোনা, ঘুম সবই যেন ফেসবুকে করে। এমন অবস্থায় রহমান সাহেব দারস্থ হন এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নিকট। সেখান থেকে পান, ফেসবুক থেকে আবিষ্কার করেন ছেলেমেয়েদের নিষ্কৃতির ৬টি উপায়।
বর্তমানে এমন ঘটনা এখন দেশের প্রতি ঘরে চলছে। ফেসবুক থেকে নিষ্কৃতির পথ খুঁজছেন পিতামাত। মূলত ফেসবুককে ঘিরে এমন সামাজিক সংকটের একটা চিত্র এবং এর প্রতিকার উঠে আসবে আলোচিত নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ানের নাটক ‘ফেসবুক ছাড়ার ৬টি উপায়’ থেকে। এতে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, ইরেশ যাকের, সিফাত শাহরিন, ইয়াশ রোহান প্রমুখ।
‘ফেসবুক ছাড়ার ৬টি উপায়’ নাটকটির পরিচালক মিজানুর রহমান আরিয়ান বললে, ‘ফেসবুক ব্যবহার ভালো। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বেশি ভালো। অনেক উপকার আছে এখানে। তবে সেটি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সংসারে-সমাজে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মূলত সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এখানে।’
যারা বর্তমানে ফেসবুক নিয়ে সঙ্কটে আছেন তারা কি সত্যিকার অর্থে এই নাটকে কোন পথ খুঁজে পাবে এই নাটকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আরিয়ান বলেন, ‘সমাধান আসলে নিজের কাছে। চাইলে যে কেউ এর সমাধান করতে পারেন। দরকার শুধু চাওয়ার। তবে আমার এই নাটকটি দেখার পর দর্শকরা একটু হলেও বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।’ সেই ভাবনা থেকেই কেউ হয়তো সমাধানের পথ খুঁজে পেলেও পেতে পারেন।
অনেকে নিশ্চয়ই জানতে অনেক আগ্রহী হয়েছে, সেই ছয় উপায় কিকি? তা জানতে একটু অপেক্ষা করতে হবে, নাটকটি প্রচার হওয়া পর্যন্ত। জানা যাবে ফেসবুক আসক্তি থেকে বাঁচার ছয় উপায়। ঈদের এই বিশেষ নাটকটি আজ ২৪ আগস্ট, শুক্রবার রাত ৮টা ৫ মিনিটে এনটিভি প্রচার করবে।। নাটকটির ট্রেলার-
মমতার হস্তক্ষেপে কাটলো বাংলা সিরিয়ালের অচলাবস্থা, কাজ শুরু আজ থেকেই
অচলাবস্থা কলকাতা বাংলা সিরিয়াল বিনোদন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বিনোদন ডেস্ক: অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই কাটলো বাংলা সিরিয়ালের অচলাবস্থা। ফলে আজ শুক্রবার থেকেই শুটিং শুরু হচ্ছে বাংলা সিরিয়ালের। খবর জিনিউজ ২৪ ঘণ্টার। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টা থেকে নবান্নে প্রযোজক, আর্টিস্ট ফোরাম, টেকনিশিয়ান এবং বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেন মমতা। আর সেখানেই সব পক্ষের অভাব-অভিযোগ-অনুযোগ শোনেন তিনি।
বৈঠক শেষে বাইরে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের মমতা জানান, টলিউড এবং টেলিউড বাংলার অহংকার। এই শিল্প বহু মানুষের কর্ম সংস্থানের যোগান দেয়, বহু মানুষের বিনোদনের খোরাক। তাই সব পক্ষ যাতে খোলামেলাভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারে, তার জন্যই বৈঠক ডাকা হয়। শুধু তাই নয়, বৈঠকে প্রত্যেকে খোলামেলাভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, একসঙ্গে কাজ করতে হলে মত বিরোধ হতেই পারে। তবে সে সব বিরোধ মোটামুটি মিটে গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে কাজ শুরু হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানান, আগামীতে যাতে কারও কাজ করতে কোন অসুবিধা না হয়, সেজন্য শিগগিরই একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হবে।প্রতিমাসে ওই কমিটি মিটিং করবে। তাতে করে তারা মিটিয়ে নেবে নিজেদের মধ্যের যে কোন ভুল বোঝাবুঝি।
কমিটিতে যারা থাকবেন তাদের কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেন মমতা। তারা হলেন- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরূপ বিশ্বাস, অপর্ণা ঘটক, লিনা গঙ্গোপাধ্যায়, জি বাংলার সম্রাট ঘোষ ও অন্য চ্যানেলের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে সবকিছু সসম্মানে মিটে গেছে জানিয়ে মমতা বলেন, ওই কমিটি কারও কোন অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখবে।
ওভারটাইম করে প্রাপ্য টাকা না পাওয়া, বেতন নিয়ে জটিলতা, বকেয়াসহ নানান সমস্যা নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে শিল্পীদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ঝামেলা চলছিলো। এসব বিবাদের জের ধরে আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকদের গত পাঁচ দিন ধরে বন্ধ ছিলো বাংলা মেগা সিরিয়ালের শ্যুটিং। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই অবসান ঘটলো এ অচলাবস্থার।
অসুস্থতা কাটিয়ে কাজে ফিরে বেতন ৬ টাকা, অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টা
অবসাদ অসুস্থতা আত্মহত্যা আত্মহত্যার চেষ্টা বিশ্বআন্তর্জাতিক ডেস্ক: অজয় নামে একব্যক্তি কাজ করতেন একটি ফুটওয়্যার কোম্পানিতে। গত ২৭ জুলাই ফ্যাক্টরিতে এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অজয়। হাসপাতালের সমস্ত বিল মেটায় কারখানার কর্তৃপক্ষ। পরে সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিলে মাস শেষে তাকে বেতন দেওয়া হয় ৬ টাকা। মাথায় বারি পরে তার। তাতে বেচারা টাকা না কেটে, কিস্তিতে মেটানোর অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেকথা না মানায়, আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ফ্যাক্টরিতেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অজয়। সহকর্মীরা দেখে ফেলায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেন তারা। কোনও মতে প্রাণে বাঁচেন তিনি। অজয়ের আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশি তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে।
আগ্রার একটি জুতা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন তিনি। বয়স ত্রিশ হবে অজয়ের। পুলিশ জানায়, ৬ টাকা বেতন পাওয়ার পরই ভেঙে পড়েন তিনি। মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। আগ্রার সিকান্দার পুলিশ স্টেশনের তদন্তকারীদের দাবি, কারখানার ভিতরেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন অজয়। ঠিক সময় সহকর্মীরা সেখানে এসে পড়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তাঁর। অজয়কে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এঘটার পর অজয় বা তাঁর পরিবারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এ নিয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি জুতো কোম্পানির কর্তৃপক্ষের।
এসআইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশকর্তার স্ত্রীর ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগ
উত্তরাঞ্চল যৌন হয়রানি রাজশাহী বিভাগ সারাদেশরাজশাহী: রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় কর্মরত এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে নগরীর অন্য এক থানার পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যদিও ওই এসআইয়ের দাবি যা হয়েছে তা অনিচ্ছাকৃত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। অভিযোগ বোয়ালিয়া থানার এসআই মাসুদ রানার বিরুদ্ধে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, তার স্ত্রী মার্কেটে একটি কসমেটিকসের দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। তখন অভিযুক্ত এসআই তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাকে বিরক্ত করতে থাকে। এক সময় তার স্ত্রী এর প্রতিবাদ করেন। বলেন, ‘আপনি বার বার আমার শরীর ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন কেন? আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?’ জবাবে এসআই মাসুদ রানা বলেন, ‘এটা কি আপনার জায়গা নাকি?’ একপর্যায়ে তার স্ত্রী তাকে (মাসুদ রানা) বলেন, ‘আমাকে চেনেন, আমি কে?’ জবাবে এসআই মাসুদ রানা বলেন, ‘আপনার শরীরে তো লেখা নাই। আপনি কে?’ এরপর পুলিশের স্ত্রী স্বামীর পরিচয় দিলে এসআই মাসুদ রানা সেখান থেকে দ্রুত চলে যান।
এসআই মাসুদ রানার বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য একটা ক্লিপ কিনতে দোকানের সামনে দাড়িয়েছিলাম। উনি আমাকে সরে দাঁড়াতে বলেন। আমি বলি, আপনার শরীরে কি টাচ লেগেছে? এই নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। বিষয়টা নিয়ে আমি লজ্জিত, ব্যথিত। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে বকাঝকা করেছেন। তিনি দাবি করেন, তার ওই ধরনের মেন্টালিটি নাই। বলেন, এটা অনিচ্ছাকৃত ও অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’ মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) আমীর জাফর জানান, বিষটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ সত্য হলে অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় ঠাকুরগাঁওয়ে দুই গৃহবধুকে মারপিটের অভিযোগ
উত্তরাঞ্চল গৃহবধু ঠাকুরগাঁও মারপিটঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদ করায় দুই গৃহবধুকে মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তারা মারাত্মক আহত অবস্থায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের হরিনারায়নপুর হাজীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দুই গৃহবধু হলেন- আক্তারা বেগম (২৮) ও লিলুফা বেগম (২৫)।
স্থানীয়রা জানান, চলাচলের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় এর প্রতিবাদ ও বাঁশের বেড়া খুলে দিতে গেলে তাদের চাচাশ্বশুরসহ তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসময় তাদের আমাদেরকে বেধরক মারপিট করে জখম করে। পরে ওই দুই নারীর পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই দুই গৃহবধু অভিযোগ করে জানান, আমাদের রাস্তায় চলাচলে বেড়া দিয়ে বাঁধা সৃষ্টি করায় আমরা এর প্রতিবাদ করি এবং তা সরিয়ে দিতে গেছে চাচা শ্বশুর রুস্তম আলী, তার ছেলে ফজলু, সোহরাব ও তাদের স্ত্রী বিউটি বেগম, তছলিমা বেগম আমাদের মারপিট করে জখম করে। আমরা এর বিচার চাই।
হাসপাতালের চিকিৎসক শুভেন্দু কুমার দেবনাথ বলেন, আহত দুই গৃহবধুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের দাগ রয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত চাচা শ্বশুর রুস্তম আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ইদ উদযাপনের বার্তা বইছে রংপুরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে
ইদ উদযাপন উত্তরাঞ্চল বার্তারংপুর এক্সপ্রেস: পবিত্র ইদুল আযহাকে ঘিরে আনন্দে মেতে উঠছে রংপুরবাসী। ইদের ছুটিতে রংপুরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সব বসয়ী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে বিনোদন স্পট জুড়ে বইছে নির্বিঘ্নে ইদ উদযাপনের বার্তা। ভিন্ন জগত, তাজহাট জমিদার বাড়ি, চিড়িয়াখানা, সুরভি উদ্যান, চিকলি পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্কসহ প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্রই মানুষের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠেছে। ইদের দিন ও ইদের দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার রংপুরের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে নারী, শিশুসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।
আজ সকালে রংপুর চিড়িয়াখানার টিকেট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন দেখা যায়। সবাই দাঁড়িয়ে আছেন টিকিটের অপেক্ষায়। সেখানে টিকিটের অপেক্ষায় থাকা দর্শনার্থী সোহেল রশীদ জানান, ইদকে ঘিরে এখানে পশু-পাখির নতুন কোনো সংযোজন নেই। তবে কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকটি পশু-পাখি ও গাছগাছালির পরিচিতি তুলে ধরে যে কাজটি করেছেন তা অনেক সুন্দর ও তথ্যমূলক। সবুজে ঘেরা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ রয়েছে এর ভেতরে।
নগরীর নিসবেতগঞ্জ ঘাঘট নদের তীর ঘেঁষে রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘প্রয়াস’ বিনোদন পার্ক। পাখির কিচিরমিচির শব্দের খেলাও কানে বাজবে। ইচ্ছে হলে পানিতে ভেসে বেড়াতে পারেন পালতোলা বা ডিঙি নৌকায়। এই পার্কেও টিকিটের জন্য ভিড় রয়েছে। এর ভেতরে রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি গোরিলা, বাঘ, ভাল্লুক, জিরাপ, ঘড়িয়াল, জেব্রা, কুমির, সাপ, বানর, হরিণ, ব্যাঙ, পাখিসহ গ্রামীণ ঐহিত্যের কলস নিয়ে নারী, রূপকথার পরি, শিশুদের ডরিমন।
দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়িতে। অনিন্দ্যসুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই জমিদার বাড়িটি। এখানকার সিঁড়ি শ্বেতপাথরের, যা ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। সিঁড়িটি নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত উঠে গেছে। চোখ জুড়ানো শৈল্পিক কারুকার্য রয়েছে জমিদার বাড়িকে ঘিরে। বিশাল আয়তনে ঘেরা সবুজ শ্যামল ফুলে ফুলে ভরা। এখানেও রয়েছে দর্শনাথীদের ভিড়।
এছাড়াও রংপুর মহানগরীর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যানে রয়েছে শিশু-কিশোর ও উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের ভিড়। ইদ আনন্দে মেতে ওঠা চিত্তবিনোদন প্রিয় মানুষের আনাগোনা রয়েছে শতবছরের ইতিহাসের সাক্ষী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজে। এই কলেজে দিগন্তজোড়া খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ালে মনটা জুড়িয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আগে প্রতিষ্ঠিত কারমাইকেল কলেজে রয়েছে শতবর্ষী বিরল কাইজেলিয়া বৃক্ষটি। এর পাশেই রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ইদকে ঘিরে এখানেও আড্ডাপ্রিয়দের ভিড় রয়েছে।
এছাড়াও ফ্যান্টাসি জোন, মহিপুরঘাট, তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্ট, বেগম রোকেয়ার বাসভন, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, কবি হেয়াত মাহমুদের সমাধি, মনোমুগ্ধকর বিশাল বিল ও সাড়ে তিনশ বছরের একটি প্রাচীন বৃক্ষরাজা, নীলাম্বরের জলমহালসহ প্রায় সকল স্পটে বিনোদন পিপাশু মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
চামড়া কিনেছেন ৪০০-৫০০, বাজারমূল্য ২০০-৩০০
চামড়া জাতীয় বাজারমূল্যরংপুর এক্সপেস: ঈদুল আজহায় সারাদেশে বিপুল সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। ঈদের পরদিনও দেশের শহরগুলোর অনেকস্থানে পশু কোরবানি হয়েছে। আর কোরবানি শেষে পশুর চামড়া নিয়ে চলছে টানা-হেচড়া। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় অপেক্ষা করছেন ভালো দামের আশায়। কিন্তু বাজারমূল্য যা তাতে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ার অবস্থা। যে চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছেন বাজারে পাইকাররা তার দাম বলছে মাত্র ৩০০ টাকা। ঈদের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর চামড়ার পাইকারি বাজার লালবাগের পোস্তায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
সিলেট থেকে নুরুল হক দুই ট্রাক চামড়া নিয়ে পোস্তায় এসেছেন লাভের আশায়, লাভ তো দূরের কথা বিক্রিই করতে পারছিলেন না চামড়াগুলো। প্রতিটি চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছেন বলে জানান তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, কিন্তু এখন পোস্তায় ব্যবসায়ীরা দাম বলছেন মাত্র ৩০০ টাকা করে। নুরুল হক বলেন, সকাল ১০ টায় দুই ট্রাক মাল (চামড়া) নিয়ে পোস্তায় এসেছি। দুই-একজন দাম বললেও দেওয়ার মতো না। কিনেছি ৫০০ টাকায় এখন দাম বলে ৩০০ টাকা, গাড়ি ভাড়া দিয়ে এনেছি সেই টাকাও তো উঠবে না। এবার ব্যবসা করে পুরাই ধরা।
একই দশা নরসিংদীর মনোহরদীর আরেক ব্যবসায়ী মিয়া হোসেনেরও। তিনি ৩৪০ টি চামড়া দুই ভাগে বিক্রি করেছেন। তার ২১০ টি চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩১০ টাকা করে আর ১৩০ টির দাম পেয়েছেন ৩০০ টাকা করে।
মিয়া হোসেন বলেন, “ঈদের দিন দুপুরের দাম শুনে মাল কিনেছিলাম। এখানে এসে দেখি কেউ জিগায়-ই না। অনেক অনুরোধ করে ৩৪০ টি মাল বিক্রি করেছি। ১৩০ টির দাম এখনো হাতে পাইনি। পচনশীল মাল এখন বিক্রি করতে না পারলে ফেলে দিতে হবে। তাই যে দাম বলছে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই।” দাম কমের কথা স্বীকার করলেন আড়তদার লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন দুপুরে ভালো দাম গেছে। রাত থেকে মাল কেনার লোক নাই। শুধু নিলে তো হবে না আগের মালগুলো লবণ মাখাতে না পাড়লে পচন ধরবে, তাই এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি লবণ দেওয়ায়।
ঈদের দিন দুপুরে যে চামড়া ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই আকারের চামড়া এখন ৬০০ টাকাও বলছে ব্যবসায়ীরা। আর সরকার নির্ধারিত দাম তো ধারে কাছেও নাই। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ সরকারি দাম মানছেন না। নরসিংদীর জামিয়া ইসলামিয়া লক্ষ্মীপুরা রহমতপুর মাদ্রাসার ছাত্র মোবারক হোসেন ১২৫ টি চামড়া বিক্রি করেছিলেন ৬২০ টাকা করে। মাদ্রাসায় তার শিক্ষক ওমর ফারুকের কাছে বিক্রি করেছিলেন বাকিতে। কথা ছিল চামড়া বিক্রি করে টাকা দেবে। “আমি খোঁজ নিয়ে এসেছি, আইসা দেখি মালই বিক্রি করতে পারেননি, টাকা দিব কেমনে। একটু আগে একজন ২০০ টাকা পিচ বলেছে; এখন সেও নাই। দাম বলে কেউ নেয়না।”
আওয়ামী লীগ সঙ্কট তৈরি করেছে -ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ উত্তরাঞ্চল ঠাকুরগাঁও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতিঠাকুরগাঁও: আওয়ামাী লীগ নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, গায়ের জোরে বললে হবে না-যে সংকট নেই। আলোচনার মাধ্যমে সংকট দুর করতে হবে। সংলাপের বসতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়িস্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় কালে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কারাগারে ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা করতে না দেয়াকে মির্জা ফখরুল সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব বলে মন্তব্য করে বলেন, বিরোধী দলকে রাস্তায় নামতে দেয়না, সভা সমাবেশের অনুমতি দেয়না। এর পরেও শান্তিপূর্ণ ভাবে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে বিএনপি। এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা, সদর উপজেলা, পৌর বিএনপি ও যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে আজ সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন মির্জা ফখরুল। এসময় সাংবাদিদের মুখোমুখি হন তিনি। বলেন, কথা দিয়ে কথা না রেখে জনগণের সাথে প্রতারণা করা আওয়ামী লীগের চিরাচরিত স্বভাব। নির্বানে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হতে হবে কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচন মানেই প্রহসনের নির্বাচন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন করার মতো পরিবেশ আওয়ামী লীগকেই তৈরি করতে হবে। এই সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তার প্রমাণ হলো সিটি নির্বাচনগুলোতে ভোটের কারচুপির মহোৎসব। আলাপ আলোচনার মধ্যেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে বিএনপি মনে করে। জনগণ ভোট দিতে না পারলে সে ভোট আর ভোট নয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র ও সাবেক সাংসদ আমজাদ হোসেন সরকার, দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান মিয়া, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র শাহিন আখতার শাহিন প্রমুখ।
রৌমারীতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কারের দাবি
উত্তরাঞ্চল চাঁদাবাজির অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার দাবি রৌমারীকুড়িগ্রাম: চাঁদাবাজি, জমি দখল, পুকুর দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সালমান ফারসী তুষারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। গত মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সভার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী এই ছাত্রলীগ নেতাকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।
সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা সোহেলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি এমএ মোমেন, এন আর জাহাঙ্গীর আলম রবু, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আবিদ শাহনেওয়াজ তুহিন, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজু আহম্মেদ খোকা, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সালমান ফারসি তুষার ৩ বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কিছু দুষ্কৃতিদের নিয়ে তুষার বাহিনী বানিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, ইফটিজিং, জমি দখলের কন্ট্রাক, পুকুর দখলের কন্টাক, মাদকব্যবসা ও মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। যা দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে। তাই তাকে অবিলম্বে দল থেকে বহিস্কার করার দাবি জানান বক্তারা।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের সভাপতি রাজু আহম্মেদ খোকা তার বক্তবে বলেন, সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার নটানপাড় এলাকায় পাখিউড়া গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য রোকনের শশুর বাড়িতে গিয়ে তুষারসহ তার বাহিনী রোকনের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে তার বাড়ির কাজ বন্ধ করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। রোকন কোন উপায় না পেয়ে তার শ্যালক সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন বিপ্লব টাকা দিবে বলে তাকে বিদায় করেন। পরে তারা ঐ দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে বিপ্লবকে পথরোধ করে চাঁদার টাকা দাবি করলে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। বিপ্লব বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আবগত করেন।
রৌমারী উপজেলা ছাত্রলীগ অফিস সুত্রে জানা যায়, ঘটনার পর অভিযোগের বিষয়টি জানার জন্য তুষারকে একাধিকবার পার্টি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু সে কর্ণপাত না করে তার সাঙ্গপাঙ্গসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিপ্লবকে আক্রমন করার জন্য খুঁজে বেড়ায়। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রাজু আহম্মেদ খোকাসহ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বিষয়টি নিরসনের জন্য এগিয়ে গেলে তুষার বাহিনী রামদা দিয়ে সভাপতিসহ অনেকের উপর আক্রমন করে। এসময় ছাত্রলীগ সদস্য মণ্ডল মিয়া (২৪) সভাপতিকে রক্ষা করতে গেলে তার দুই হাত কেটে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে রৌমারী হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করেন।
ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, গত তিন মাসে তুষার বাহিনী কন্ট্রাকে উপজেলার ইছাকুড়িগ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়ি দখল করে। শৌলমারী গ্রামে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে জমি দখল করে। বাইটকামারী গ্রামে পুকুর দখল করে। মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ২লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। সবুজপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান স্কুল শিক্ষক সুমনকে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা নেয়। ইফটিজিংসহ অসংখ্য অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় রাজু আহম্মেদ খোকা নিজে বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তার এহেন কার্যকলাপের জন্য তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কারের জোরালো দাবী জানান ছাত্রলীগ নেতাসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু বলেন, তুষারের অপকর্মের হিসাব দেওয়া মুসকিল। তাকে এখনেই বহিস্কার না করলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পরবে। আওয়ামী লীগে কোন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীর স্থান নেই।
রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি জাকির হোসেন জানান, সে আমাকেই আক্রমন করার সাহস দেখায় তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা। আমি ছাত্রলীগের সভাপতিকে বলছি তুমি ঈদের পরের দিন মিটিং করে তুষার কে বহিস্কারে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেজুলেশন কর। আমি সুপারিশ দিয়ে জেলায় পাঠাব। 'বর্তমান সরকারের আমলে এরকম সন্ত্রাসীর স্থান আওয়ামী লীগে নেই' -উল্লেখ করেন তিনি।
কেরালার বন্যা: আমিরাতের সাহায্য প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত
আমিরাত কেরালার বন্যা বিশ্ব ভারতআন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের কেরালার বন্যার্তদের সাহায্যর্থে দেওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭০০ কোটি রুপি আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত। ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সরকারিভাবে ঘোষণা করা না-হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। গত প্রায় দেড় দশক ধরে বিদেশি সাহায্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারত কঠোর নীতি মেনে আসছে।
জানা যায়, আমিরাতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশই কেরালা থেকে যাওয়া লোকজন, আর ভারতের ওই ভূখণ্ডের সাথে তাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া কেরালার পুনর্গঠনেও এখন প্রচুর অর্থের দরকার। যে কারনেই আমিরাত এ বিপুল সাহায্য দিতে চেয়েছিল। গত প্রায় একশ' বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় কেরালায় শুধু শত শত প্রাণহানিই হয়নি, লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে - প্রায় পুরো রাজ্যের অবকাঠামোও ভেঙে পড়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই, আবুধাবি, শারজার মতো শহরগুলি গড়ে তোলার পেছনে এই কেরালার মানুষদের অবদান প্রচুর - আর তার স্বীকৃতিতেই আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ কেরালার বন্যাত্রাণে সাতশো কোটি রুপির সমপরিমাণ অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নিজেই এ কথা জানান, কিন্তু আমিরাতের প্রস্তাব আসলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্বিধায় ফেলে দেয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কেরালার প্রতিনিধি, পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসো এ খবর জানার পর বিবিসিকে বলেন, "আমিরাত যেরকম দরাজভাবে সহায়তা করতে চেয়েছে তা অবশ্যই স্বাগত, তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এই বিদেশি সাহায্য নেওয়া যাবে কি না, তা কেন্দ্রীয় সরকারই ঠিক করবে।"
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আমিরাত কর্তৃপক্ষকে টুইটারে ধন্যবাদ জানান, কিন্তু পাশাপাশি ভারত সরকার এই সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে যে, শুধু আমিরাত নয় - মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলোও কেরালার জন্য যে সাহায্য করতে চেয়েছে তার সবই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এদিন দিল্লিতে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতও টুইট করে জানান যে ভারত আসলে কেরালার জন্য কোনও বিদেশি সাহায্যই নিতে চাইছে না।
কেরালার বন্যা পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মোট ৬০০ কোটি রুপির সহায়তা ঘোষণা করেছিলেন, তার চেয়েও একশো কোটি রুপি বেশি দিতে চেয়েই আমিরাত সরকার গণ্ডগোল করে ফেলেছে কিনা। এ নিয়ে এরই মধ্যে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রবল হাসি-মশকরা চলছে। বিজেপির মন্ত্রী কে জে আলফানসো যার জবাবে বলছেন, যাদের বন্যাত্রাণে এসে নামার মুরোদ নেই, অথচ সোশ্যাল মিডিয়াতে জটলা করার সময় আছে, তারাই কেবল এ ধরনের বাজে রসিকতা করতে পারে।
ইদের দিনে ৪ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১২ জনের
এক্সক্লুসিভ জাতীয় সড়ক দুর্ঘটনা সারাদেশরংপুর এক্সপ্রেস: গতকাল ইদ আনন্দের মধ্যে দেশের ৪ জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ১৯ জন। এরমধ্যে বগুড়ায় ৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ৩ জন এবং নীলফামারীতে ১ জনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুই দুর্ঘটনায় ৫ জন মারা যান। এরমধ্যে শাজাহানপুরে বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ আর শেরপুরে গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেল ধাক্কা খেলে হতাহতের এসব ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুইজন হলেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার হাজরাহারি গ্রামের সোহরব হোসেনের ছেলে শামীম আকাশ (২৮) ও জয়নাল আবেদিন সোহেল রানা (২৭)। একজনের নাম জানা যায়নি। সকাল ৮ টার দিকে এ দুর্ঘটান ঘটে। অপরদেকে শেরপুর উপজেলার শালপাড়া বোয়ালকান্দি এলাকায় বেলা ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুইজন নিহত হয়।
কুষ্টিয়ায় পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন। সদরের বটতৈল এবং দৌলতপুর উপজেলার তারাগুণিয়া বাজারে এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন দৌলতপুরের সাহাবুল (১২), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলারর শিপন (২৮)। নিহত শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। কুষ্টিয়া সদরে দুপুর আড়াইটার দিকে এবং দৌলতপুরে সকালের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নীলফামারীতে অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংর্ঘষে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন; এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সংঘলশী ইনিয়নে ইকু জুট মিলের সামনে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইসলাম (২৮) ওই ইউনিয়নের বাদশাপাড়া গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে।
সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হতাহতদের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, দুপুরে সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ওভারব্রিজের পূর্বপাশে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী একটি ছাগল বোঝাই ট্রাক ওভারব্রিজে উঠতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উপর উল্টে যায়। এতে ওই ট্রাকে থাকা ১৫ জন ব্যাপারির মধ্যে দুইজন নিহত হন। অপরদিকে সলঙ্গায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অজ্ঞাত পরিচয় এক গরুর ব্যাপারী নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন মাইক্রোবাস চালকসহ ৬ জন।
গবাদি পশু উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা
অপিনিয়ন উৎপাদন গবাদি পশু বাংলাদেশ সক্ষমতাপাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গরু নিয়ে রয়েছে রাজনীতি। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গরুকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম হয়। সংখ্যাগুরু হিন্দুরা গো-হত্যাকে চরম অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। মূলত এরই প্রভাবে বাংলাদেশে গরু রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে রপ্তানি না করেও বিশ্বে গরুর গোস্ত রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে দেশটি।
মার্কিন এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন গরুর গোস্ত রপ্তানি করে। ২ মিলিয়ন টন রফতানি করে দ্বিতীয়স্থানে ছিল ব্রাজিল। তালিকায় তিন নম্বরে ছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের পরিমাণ দেড় মিলিয়ন টন। আর তিন দেশ মোট গরুর গোস্ত রপ্তানি করছে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভারত একাই সাড়ে ২৩ শতাংশ রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশে গরু না পাঠিয়েই তারা গোস্ত রপ্তানিতে এই অবস্থান ধরে রেখেছে।
মাত্র কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে কোরবানির পশু হিসেবে ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরতা ছিল। কিন্তু ভারত সরকার হঠাৎ বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সাময়িকভাবে কোরবানির বাজারে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। সাধারণ বাজারেও বেড়ে যায় গরুর গোস্তের দাম। এ কারণে বেড়ে যায় দেশীয় গরুর চাহিদা। তবে ভারতের এই সিদ্ধান্ত কার্যত বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ এখন গরু উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। এর কারণ হচ্ছে দেশীয় গরুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এমনিতেও দেশীয় গরুর গোস্তের স্বাদ ও গুণগত মানের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ হওয়ায় ঘরে ঘরে গরু পালন হচ্ছে এবং সেই সাথে খামারীর সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ৫ লাখ ২২ হাজার খামারী তৈরি হয়েছে, যারা গরু, ছাগলসহ সব ধরনের গবাদি পশু লালন- পালন করে থাকে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, সব মিলিয়ে দেশে এবার কোরবানি উপযোগী ১ কোটি ১৬ লাখ পশু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০/৪৫ লাখই গরু।
তবে বাংলাদেশ প্রাণীজ মাংস উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করলেও এদেশের খামারীরা এখনও লাভজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। তাই এই পেশাটি এখনও একটি স্থিতিশীল পেশায় রূপ নিতে পারেনি। এর পেছনে দুটো প্রধান কারণ রয়েছে। একটি হচ্ছে, ভারত বৈধভাবে গরু রপ্তানি না করলেও চোরাই পথে কিছু গরু ঠিকই বাংলাদেশে আসছে। ইদ বাজারে হঠাৎ ভারতীয় গরুর উপস্থিতি দেশীয় গরুর বাজারে দামের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, দেশে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য। পশু খাদ্যের সংকট হোক অথবা খাদ্য বিক্রেতাদের কারসাজিই হোক, উচ্চমূল্যের কারণে পশু পালনের ক্ষেত্রে খামারীদেরকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় মূল্য না পাওয়ায় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পশুপালনকে বড় পরিসরে পেশা বাছাই করার ধারণাটা এদেশে নতুন। এক্ষেত্রে খামারীদের অভিজ্ঞতা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয় তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য রোধে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। খামারীদের সমস্যা দূর করে তাদেরকে লাভজনক অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারলে আশা করা যায় এদেশে পশু উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিরাট বিপ্লব ঘটে যাবে। সেই সাথে বাজারে গরুর গোস্তের মূল্যেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
বোদায় বাগানের দেড় হাজার আম গাছ কেটে দিলো দুর্বৃত্তরা
আম গাছ উত্তরাঞ্চল বোদাপঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদায় এক কৃষকের আমবাগানের প্রায় দেড় হাজার আমগাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার রাতের কোন একসময় দুর্বৃত্তরা ওই বাগানের গাছ কাটা হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আমবাগানের মালিক সাগর ইসলাম বাদি হয়ে বোদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। জানা গেছে, সাগর ইসলাম জমি লিজ নিয়ে আমের বাগান করেছিলেন। গাছগুলো এক বছর আগে ওই জমিতে রোপণ করেছিলেন তিনি। মামলায় ওই জমির লিজ প্রদানকারী বিভুরঞ্জন সরকার, মনোরঞ্জন সরকার, প্রিয়রঞ্জন সরকার, মোকলেছার রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জন দুর্বৃত্তদের অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে পঞ্চগড় জেলা শহরের সাগর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বোদা উপজেলার বেংহাড়ি বনগ্রাম ইউনিয়নের দেবীডাঙ্গা এলাকায় করতোয়া নদীর চরে ৪২ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেয়। এর মধ্যে নিয়ে ২১ বিঘা জমি দখল পায় সাগর। এরপর তিনি প্রায় ২০ লাখেরও বেশি টাকা খরচ করে ব্যাপক পরিচর্যার মাধ্যমে নদীর পতিত বালুচরকে আম বাগানে রূপ দেন। ২১ বিঘার মধ্যে ১৫ বিঘা জমিতে আমরুপালির বাগান গড়ে তোলেন। গত এক বছরের আমের চারাগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে। এরই মধ্যে গত সোমবার গভীর রাতে একদল দুর্বৃত্ত তার ১৫ বিঘা জমির আম বাগানের প্রায় দেড় হাজার গাছ কেটে দিয়ে চলে যায়। এতে ওই কৃষকের প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে বলে দাবি করেছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাগর ইসলামের অভিযোগ, ২০১৭ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বিভুরঞ্জন সরকার তার ভাই মনোরঞ্জন সরকার, প্রিয়রঞ্জন সরকারসহ ৮ জনের কাছ থেকে ৪২ বিঘা জমি বার্ষিক লক্ষাধিক টাকা হারে ১০ বছরের জন্য লিজ নেন তিনি। এর মধ্যে ২১ বিঘা জমি দখল পান। এক বছর আগে ১৫ বিঘা জমিতে আম বাগান করেন তিনি। কিন্ত কিছুদিন ধরে জমির মালিক পক্ষ তাকে জমি ছেড়ে দিতে চাপ দিতে থাকেন এবং নানা রকম হুমকি দিতে থাকেন। এই শত্রুতার জের ধরেই জমির মালিক পক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বাগানের মালিক সাগর ইসলাম বলেন, আমি খুব কষ্ট করে বালুচরে এই আম বাগান গড়ে তুলেছি। আম বাগান করার পর থেকেই বিভুরঞ্জন সরকারসহ তার ভাইয়েরা আমাকে বিভিন্নভাবে লিজ বাতিল করার জন্য হুমকি দিতে থাকে। আমার মনে হয় তারাই তাদের লোকজন দিয়ে আমার আম বাগানের দেড় হাজারেরও বেশি গাছ কেটে ফেলেছে। ওই এলাকার মাহামুদুল হাসান জানান, এতগুলো আম গাছ কেটে কেউ কাউকে ক্ষতি করতে পারে এটা ধারণার বাইরে। যশোরের নার্সারি মালিক আব্দুল মোমিন জানান, এক বছর আগে এই আম গাছের চারাগুলো নিয়ে এসে আমিই রোপণ করে দেই। আগামী বছর এই বাগান থেকে ১৫ লাখ টাকারও বেশি আম বিক্রি করতে পারতো। এখন তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।
বেংহাড়ি বনগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, সাগর ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে খুব কষ্ট করে আম বাগানটি করেছে। সাগরের ও লিজ প্রদানকারীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলছিল। রাতের আঁধারে লিজ প্রদানকারী বিভুরঞ্জন সরকার ও তার ভাই মনোরঞ্জন সরকারসহ তাদের সহযোগিরা ওই বাগানের দেড় হাজার আম গাছ কেটে ফেলেছে বলে আমরা ধারণা করছি। এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে লিজ প্রদানকারী বিভুরঞ্জন সরকারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকরা কিভাবে নিউজ করে তা দেখার নেয়ার হুমকি দেন। বোদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হারেস জানান, আমি ক্ষতিগ্রস্ত আমবাগান পরিদর্শন করেছি। এটি আসলেই অমানবিক কাজ। তবে কারা এই বাগানের গাছ কেটেছে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম পরিচয় জানতে পারিনি। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোদা থানার ওসি (তদন্ত) আবু সায়েম মিয়া জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের নন্দরাম মণ্ডল মৌজার জেএল নং ৬৫ আওতাধীন ওই আমবাগানসহ প্রায় ৪শ’ বিঘা জমি বাংলাদেশ বন বিভাগের নামে খতিয়ানভুক্ত।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে রংপুর বিভাগে ইদ-উল-আযহা উদযাপন
ঈদ উদযাপন উত্তরাঞ্চল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রংপুর বিভাগরংপুর: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায় রংপুর বিভাগে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ইদুল আযহা। ইদের নামাজ শেষে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেন এ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মাঠে-ময়দানে ও মসজিদে ইদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং ধনী-গরিব নির্বিশেষে পারস্পরিক কোলাকুলি ও কুশলবিনিময় করে। বেশিরভাগ ইদগাঁ মাঠে পুলিশ ও র্যাবের কঠোর নজরকারী রাখা হয়।
রংপুর বিভাগীয় শহরসহ বিভাগের ৮ জেলায় ৭ হাজার ৩৩২ টি স্থানে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত পবিত্র ইদুল আযহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় ইদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে। এখানে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ ইদের নামাজ আদায় করেন।
জানা গেছে, রংপুর নগরীর কালেক্টরেট ইদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮ টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি, স্থানীয় মেয়রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ প্রায় বিশ হাজার মুসল্লি পবিত্র ইদুল আযহার নামাজ জামাতে আদায় করেন।
[caption id="attachment_1286" align="aligncenter" width="600"] নীলফামারী জেলার কেন্দ্রীয় ইদগাহে নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন সংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।[/caption]
নামাজ শুরুর পূর্বে রংপুরসহ পুরো দেশবাসীকে ইদুল আযহার শুভেচ্ছা জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এসময় তিনি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি রংপুর সদর আসন থেকে নির্বাচন করব। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমি আপনাদের ঋৃণ কোন দিনও শোধ করতে পারব না। সামনের নির্বাচনই হয়তো আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। এজন্য আমি আপনাদের পাশে থেকে কিছু করতে চাই। কোরবানির পশুর বর্জ্য সংরক্ষণ ও অপসারণে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পরিচ্ছনতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এছাড়াও শুভেচ্ছা জানান রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রবিউল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের সেক্রেটারী এস এম ইয়াছির, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফিউল ইসলাম সাফি, প্রচার সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
রংপুর পুলিশ লাইন ইদগাহ মাঠে সকাল আটটায় ইদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে রংপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, গণমাধ্যম কর্মীসহ প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি ইদের নামাজ আদায় করেন। সেখানে নগরবাসীকে ইদ শুভেচ্ছা জানান নবাগত রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ।
এছাড়া রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইদগাহ মাঠে ইদের জামাতে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের লালমনিরহাটে ইদের নামাজ আদায় করেন। মিঠাপুকুরে আশিকুর রহমান এমপি, কাউনিয়ায় টিপু মুন্সি এমপি, বদরগঞ্জে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরি ডিউক এমপিসহ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকাতে ইদের জামাতে অংশ নেন ।
সেফাত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে আ.লীগ নেতার মামলা
জাতীয় মামলা সিফাত উল্লাহ সিফাত উল্ল্যাহ সেফাত উল্লাহ সেফাত উল্ল্যাহরংপুর এক্সপ্রেস: ফেসবুক ও ইউটিউবে নানা নেতবিাচক ও অশ্লীল মন্তব্যকারী সেফাত উল্ল্যাহ ওরফে সেফুদার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জার্মান আওয়ামী লীগের এক নেতা। গত সোমবার জার্মানের বোন পুলিশ স্টেশনে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, অশ্লীল কথাবার্তা ছড়ানোয় অস্ট্রিয়া প্রবাসী সিফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদার বিরুদ্ধে মামলা বিরুদ্ধে মামলা করেন জার্মান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান মুন্না। গত সোমবার জার্মান বোন পুলিশ স্টেশনে এই মামলাটি করেন তিনি।
বর্তমানে সাইবার জগতে বেশ আলোচিত-সমালোচিত-বিতর্কিত ব্যক্তির নাম সিফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা। এই সেফাত উল্ল্যাহ বাংলাদেশ ও সম-সাময়িক বিষয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য আর অদ্ভুত, বেপরোয়া কথাবার্তা বলে থাকে ফেসবুক লাইভে। তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাননি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এছাড়াও সেফাত সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতা, বিরোধী দলীয় নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যক্তিদের নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলে।
মেহেদী হাসান মুন্না জানান, যে ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নিয়ে গালাগালি করছে তার ছবি দিয়ে বাঙালিরা ট্রল করে মজা নিচ্ছে। ইউরোপে বসে একজন ব্যক্তি এসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছে, দেশটিতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আছে। তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই বিষয়ে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি এবং ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে মামলার ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বলে জানান।
মুন্না বলেন, বর্তমানে সিফাত উল্লাহ মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে দাবি করেছে তার পরিবার। কিন্তু আমি বিদেশের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন এই ব্যক্তি তেমন কোনো রোগে আক্রান্ত নয়। কোনো পাগল এতো পুরনো ইতিহাস মনে রাখতে পারে না। সে এসব পরিকল্পিতভাবে করছে বলেও জানিয়েছেন ডাক্তারগণ।
কোরবানির বর্জ্য যথাস্থানে ফেলুন
অপিনিয়ন কোরবানির বর্জ্যপ্রতি বছর কোরবানিতে পশুর বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে পরিবেশ দুষিত হয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য নগরীগুলোতে যত্রতত্র পশু কোরবানি দেওয়ার কারণে দুই-তিন যাবত দুর্গন্ধ ও রাস্তায় ময়লা আবর্জনার রাজত্ব বিরাজ করে। এ নিয়ে সিটি করপোশন কর্মীদের গলদঘর্ম হতে হয়। নির্ধারিত সময়ে নগরীগুলো বর্জমুক্ত করাই যেন করপোরেশনগুলোর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা লোকবল সংকটের সেই চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়। ফলে নগরবাসীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পশু কোরবানির ক্ষেত্রে অবশ্য নির্ধারিত স্থান ব্যবহার করা হয় এবং একটি নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য জমা হওয়ার কারণে সেগুলো দ্রুততার সাথেই সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করায় অনাগ্রহের পেছনে সুযোগ সুবিধার অভাবের পাশাপাশি অনভ্যস্ততা একটি বড় ব্যাপার। আমাদের দেশের লোকজন সাধারণত বাড়ির সামনে, গলিতে, রাস্তায় পশু কোরবানি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এতে পশুর গোস্ত আনা-নেওয়ায় সুবিধা ও পানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের নাগালে পাওয়া যায়। এছাড়া পশুর গোস্ত কাটার কাজে পরিবারের সকলকেই কাছে পাওয়া যায়। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন স্থান নির্ধারণ করে দিলেও পশু জবাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। পানি সমস্যা ও পরিবেশগত দিক ভালো না হওয়ায় এসব স্থানে যেতে আগ্রহ দেখান না সাধারণ মানুষ।
তবে নগরীগুলোর পরিবেশ পরিষ্কার রাখার স্বার্থে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাই নিশ্চিত করতে তৎপর প্রশাসন। এ জন্য পবিত্র ইদুল আযহার ছয় দিন আগেই জবাইয়ের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে মোট দুই হাজার ৯৩৬টি স্থান পশু জবাইয়ের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২০, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৩, রাজশাহী সিটিতে ২১০, চট্টগ্রাম সিটিতে ৩১৪, খুলনা সিটিতে ১৬৩, বরিশাল সিটিতে ১৩৫, সিলেট সিটিতে ৩৬, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ১৮৩, কুমিল্লা সিটিতে ১৯০, রংপুর সিটিতে ৯৯ ও গাজীপুর সিটিতে ৪৪৩টি স্থান রয়েছে।
যথাস্থানে কোরবানি করানোর ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার জন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। এ জন্য এর উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তাগুলোর প্রচার আরো বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও ভ‚মিকা রয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করা গেলে দেখা যাবে সিটি করপোরেশনগুলোর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগরীগুলোকে পরিষ্কার করতে গিয়ে যে পরিমাণে গলদঘর্ম হন তার অনেকটাই লাঘব হয়ে যাবে। শতভাগ পশু নির্ধারিত স্থানে কোরবানি নিশ্চিত করার আগে পর্যন্ত যেহেতু যত্রতত্র পশু জবাই হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যার যার পশুর বর্জ্য অলি-গলিতে জমা না করে করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো সহজেই ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে পারেন। সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এটুকু সহযোগিতা করা আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য।
ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ইদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। আমাদের বসবাসের পরিবেশ হোক আরো সুন্দর। সবাইকে ইদুল আযহার শুভেচ্ছা।
আজ পবিত্র ইদ-উল-আযহা
ইদ ইদ-উল-আযহা এক্সক্লুসিভ জাতীয়রংপুর এক্সপ্রেস: পিতা ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক প্রিয় পুত্রকে আল্লাহর রাহে ত্যাগ আর পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণে পুত্র ইসমাইলের (আ) জীবন উৎসর্গের মহিমান্বিত ঘটনা থেকে পবিত্র বায়তুল্লাহয় পশু কোরবানি এবং হজের সূচনা হয়। আর জিলহজ মাসের ১০ তম দিনটি পবিত্র ইদুল আযহা হিসেবে ঘোষিত হয়। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এ দিনটিতে সামর্থবান মুসলিমগণ আরাফাতের ময়দানে মিলিত হন, যা রোজ হাশরে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার একটি প্রতীকি রূপ। সেখানে তারা হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতাসহ পশু কোরবানি করেন। ইসলামে বৈরাগ্য না থাকলেও কেবল দু’টো স্থানে তা অনুমোদিত। এর একটি জেহাদের ময়দানে ও অপরটি পবিত্র হজে। হজে ঈমানদার ব্যক্তিগণ সমস্ত দুনিয়াবী কর্মকাণ্ড ও চিন্তা-ভাবনা পরিত্যাগ করে সেলাইবিহীন অনাড়ম্বর পোশাকে আল্লাহর ঘরে হাজিরা দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজে হাজির হওয়া হাজীদের সাথে সংহতি প্রকাশার্থে হজে অনুপস্থিত ব্যক্তিরাও পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।
আরবি মাস চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয় বিধায় মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পর আমাদের দেশে আরবি মাসের তারিখ পরিবর্তন হয়। সেই হিসেবে গতকাল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জিলহজ মাসের ১০তম দিন হলেও আমাদের দেশে দিনটি পালিত হচ্ছে আজ। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশেরও বেশ কিছু জায়গায় গতকাল ইদ উদযাপিত হয়।
পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষে দূর-দূরান্তে থাকা মানুষজন আপনজনদের সাথে মিলিত হওয়ার আশায় কয়েক দিন ধরেই রাস্তা-ঘাটের নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঘরে ফেরায় ব্যস্ত ছিলেন। আজ যে যেখানেই থাকুক, সকলেই নিকটস্থ ইদগাহ বা মসজিদে ইদুল আযহার দুই রাকাত সালাহ কায়েম করবেন। খতিব খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে সালাহ কায়েম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজনীতিবিদ, বিচারক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বেসামরিক, সামরিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি সকাল ৮টায় হাইকোর্টের সামনে জাতীয় ইদগায় ইদের নামাজ আদায় করবেন।
[জানুন: রংপুরের প্রধান প্রধান ইদের জামাত কখন কোথায়]
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বুধবার গণভবনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে বেলা ১১টায় বিচারক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিক, সিনিয়র সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। অন্যদিকে দেশবাসীকে ইদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ইদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ইদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ইদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত মানের বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ইদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।