রংপুর এক্সপেস: ঈদুল আজহায় সারাদেশে বিপুল সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। ঈদের পরদিনও দেশের শহরগুলোর অনেকস্থানে পশু কোরবানি হয়েছে। আর কোরবানি শেষে পশুর চামড়া নিয়ে চলছে টানা-হেচড়া। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় অপেক্ষা করছেন ভালো দামের আশায়। কিন্তু বাজারমূল্য যা তাতে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ার অবস্থা। যে চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছেন বাজারে পাইকাররা তার দাম বলছে মাত্র ৩০০ টাকা। ঈদের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর চামড়ার পাইকারি বাজার লালবাগের পোস্তায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
সিলেট থেকে নুরুল হক দুই ট্রাক চামড়া নিয়ে পোস্তায় এসেছেন লাভের আশায়, লাভ তো দূরের কথা বিক্রিই করতে পারছিলেন না চামড়াগুলো। প্রতিটি চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছেন বলে জানান তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, কিন্তু এখন পোস্তায় ব্যবসায়ীরা দাম বলছেন মাত্র ৩০০ টাকা করে। নুরুল হক বলেন, সকাল ১০ টায় দুই ট্রাক মাল (চামড়া) নিয়ে পোস্তায় এসেছি। দুই-একজন দাম বললেও দেওয়ার মতো না। কিনেছি ৫০০ টাকায় এখন দাম বলে ৩০০ টাকা, গাড়ি ভাড়া দিয়ে এনেছি সেই টাকাও তো উঠবে না। এবার ব্যবসা করে পুরাই ধরা।
একই দশা নরসিংদীর মনোহরদীর আরেক ব্যবসায়ী মিয়া হোসেনেরও। তিনি ৩৪০ টি চামড়া দুই ভাগে বিক্রি করেছেন। তার ২১০ টি চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩১০ টাকা করে আর ১৩০ টির দাম পেয়েছেন ৩০০ টাকা করে।
মিয়া হোসেন বলেন, “ঈদের দিন দুপুরের দাম শুনে মাল কিনেছিলাম। এখানে এসে দেখি কেউ জিগায়-ই না। অনেক অনুরোধ করে ৩৪০ টি মাল বিক্রি করেছি। ১৩০ টির দাম এখনো হাতে পাইনি। পচনশীল মাল এখন বিক্রি করতে না পারলে ফেলে দিতে হবে। তাই যে দাম বলছে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই।” দাম কমের কথা স্বীকার করলেন আড়তদার লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন দুপুরে ভালো দাম গেছে। রাত থেকে মাল কেনার লোক নাই। শুধু নিলে তো হবে না আগের মালগুলো লবণ মাখাতে না পাড়লে পচন ধরবে, তাই এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি লবণ দেওয়ায়।
ঈদের দিন দুপুরে যে চামড়া ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই আকারের চামড়া এখন ৬০০ টাকাও বলছে ব্যবসায়ীরা। আর সরকার নির্ধারিত দাম তো ধারে কাছেও নাই। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ সরকারি দাম মানছেন না। নরসিংদীর জামিয়া ইসলামিয়া লক্ষ্মীপুরা রহমতপুর মাদ্রাসার ছাত্র মোবারক হোসেন ১২৫ টি চামড়া বিক্রি করেছিলেন ৬২০ টাকা করে। মাদ্রাসায় তার শিক্ষক ওমর ফারুকের কাছে বিক্রি করেছিলেন বাকিতে। কথা ছিল চামড়া বিক্রি করে টাকা দেবে। “আমি খোঁজ নিয়ে এসেছি, আইসা দেখি মালই বিক্রি করতে পারেননি, টাকা দিব কেমনে। একটু আগে একজন ২০০ টাকা পিচ বলেছে; এখন সেও নাই। দাম বলে কেউ নেয়না।”