রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যেন সেই দেশে অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ বোহিঙ্গা মুসলমানকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত হয়নি।
কারণ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য যে ধরনের অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন তা সৃষ্টিতে মিয়ানমার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। শনিবার পবিত্র মক্কা নগরীতে ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ১৪তম সম্মেলনে এশীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনের এবারের শিরোনাম ‘মক্কা আল মোকাররমা শীর্ষ সম্মেলন : ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে’।
[caption id="" align="aligncenter" width="1008"] ওআইসি’র ১৪তম সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।[/caption]
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিকূল অর্থনৈতিক, প্রতিবেশ ও নিরাপত্তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা রুজুর বিষয়েও সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক, প্রতিবেশ এবং নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ওআইসিকে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ওআইসির নিজস্ব সমস্যাগুলো মোকাবেলার সক্ষমতা থাকা উচিত।’
আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর মাধ্যমেই জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ তৈরি হয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াকে এতদূর এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই মামলা রুজুর বিষয়ে স্বেচ্ছা তহবিল সংগ্রহ এবং কারিগরি সহযোগিতার জন্য।’
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাই।’
সন্ত্রাস বন্ধে তিনি রিয়াদ সম্মেলনে ঘোষিত মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রদত্ত তার ৪ দফা নীতির কথা স্মরণ করেন। যার মধ্যে রয়েছে- অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা, সন্ত্রাসের জন্য অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যকার বিভাজন দূর করা এবং সংলাপের মাধ্যমে যে কোনো প্রকার দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
ফিলিস্তিন সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওআইসি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের ভূখণ্ড এবং সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরে পাওয়া, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মর্যাদা রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর জনগণের মধ্যে একতা ও সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে আস্থাশীল ছিল। কিন্তু ৭ দশক কেটে গেছে ফিলিস্তিনিদের সমস্যার আজও সমাধান হয়নি। আমাদের জাতি এবং সম্প্রদায়গুলো এখন পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম একদা অন্ধকার বিশ্বে আলোকবর্তিকা নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য তা আজ ভুলপথে সন্ত্রাস এবং উগ্রপন্থার নীতি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।’
শ্রীলংকার ধর্মীয় উপাসনালয়সহ পাঁচ তারকা হোটেলে বোমা হামলা এবং নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ দুটি ঘটনাতেই শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি এবং সমবেদনা প্রকাশ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলংকার সন্ত্রাসী হামলার নিন্দাও জানিয়েছি, যেখানে আমার নাতি ৮ বছরের শিশু শেখ জায়ান নিহত হয়।’
দারিদ্র্যকে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর জন্য মূলত অজ্ঞতা, দুর্যোগ এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দায়ী। এই অসামঞ্জস্য দূর করতে আমাদের যৌথভাবে অ্যাকশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
শেখ হাসিনা এ সময় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফরম মাইগ্রেশন)-এর উপ-মহাপরিচালক পদের জন্য বাংলাদেশের প্রার্থী অভিবাসন বিশেষজ্ঞ পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হককে তাদের মূল্যবান সমর্থন দেয়ার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বকে একটি শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তোলায় তার (বঙ্গবন্ধু) দূরদর্শিতা, সহনশীলতা এবং সমমর্মিতা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সরকারি সফরে শুক্রবার বিকালে সৌদি আরব পৌঁছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসিতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি গোলাম মসিহ এবং জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এফএম বোরহান উদ্দিন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।