নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। ইতোমধ্যে এসব মানুষদের পরিসংখ্যান করে একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। তারা যাতে সমাজের মূল স্রোতে প্রবেশ করে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, সে লক্ষ্যে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান (বিপিএম-বার, পিপিএম-বার) কাজ করছেন। তারই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নীলফামারীতেও চলছে উদ্যোগ বাস্তবায়ন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন আয়বর্ধক মুলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। এজন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তত্বাবধানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে তাদের।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নীলফামারী শহরের হাড়োয়া এলাকার কাজল মিয়া বলেন, ‘আমরা অবহেলিত থাকবো কেন, আমরাও তো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। আমরাও শিক্ষিত, বিদ্যা-বুদ্ধি সবই আছে।’ তাহলে আমরা বঞ্চিত কেন’। আমরা রাস্তায় হাঁটলে অন্যভাবে দেখা হয়, বলা হয় ওই যে হিজড়া যাচ্ছে’। আমরা এর-ওর কাছে দু’চার পয়সা নিয়ে খেয়ে বাঁচি থাকি।
তার দাবি, একবার আমাদের সুযোগ দিয়ে দ্যাখেন। আমরা করতে পারি কি-না। আমরাও অনেক ভালো করতে পারবো। আমরা খুঁজে খেতে চাই না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছেন।
ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের সোনাখুলি গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের টাইটেল দিয়েছেন ‘তৃতীয় লিঙ্গ’। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
কিন্তু আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়, আমাদের হিজড়া বলে টিজ করা হয়। আমরা ভয় দেখিয়ে খাই না, বাচ্চাদের নাচিয়ে খাই। আমাদেরকে সমাজে ঘৃণা করা হচ্ছে। অথচ জনগণের টাকা দিয়েই কিন্তু আমরা বেঁচে আছি। এ জন্য পুলিশ যে উদ্যোগ নিয়েছে নিশ্চয় আমাদের পরিবর্তন ঘটবে।
নীলফামারী পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ছয় উপজেলায় ৫০ জনের তালিকা করা হয়েছে। এরমধ্যে নীলফামারী সদরে ৫জন, সৈয়দপুরে ১৩জন, জলঢাকায় ২জন, ডোমারে ৫জন এবং কিশোরগঞ্জে ২৫ জন রয়েছেন।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষদের সাথে কথা বলে আমরা দেখেছি, তারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চায়। মনোবল ও আগ্রহ রয়েছে তাদের মধ্যে। শুধু তদারকি এবং কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারলে সেটা সম্ভব।
এসপি আশরাফ পিপিএম বলেন, তারা যেভাবে উপার্জন করে চলেন এটি কোন সঠিক পথ নয়। তাদের পেশাগত জীবনে ফিরে আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখন চ্যালেঞ্জ। এজন্য আমরা এসব মানুষদের যোগ্যতা চাহিদা অনুযায়ী আয় বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। এজন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসুচী রয়েছে, সেখানে তাদের সম্পৃক্ত করা হবে। যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, মুলত পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের ডিআইজি (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) ও সদ্য বদলী হওয়া ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে নীলফামারীতে কাজ শুরু করা হয়। তিনি উত্তোরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও। ঢাকায় বিউটি পার্লার, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছেন স্যার। এসব প্রতিষ্ঠানে ভালো করছেন পিছিয়ে থাকা এসব মানুষরা।
সম্প্রতি নীলফামারীতে তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। দিয়েছেন শুভেচ্ছা উপহারও।
নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন। অন্য কেউ কিন্তু এদের নিয়ে ভাবেনি। তিনি বলেন, এসব মানুষদের জীবন মান উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। সহযোগীতা পেলে স্বাভাবিক মানুষগুলোর মত স্বাভাবিক জীবনেও তারা ফিরতে পারবে।