কুড়িগ্রামে ঘুষ না দেয়ায় যত্ন প্রকল্পে নাম না উঠার অভিযোগ!

admin May 28, 2019

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের হাতে তাদের দাবি করা টাকা না দেয়ায় যত্ন প্রকল্পের তালিকায় নাম উঠেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে যত্ন প্রকল্পের তালিকায় হতদরিদ্র পরিবারের প্রকৃত সুবিধাভোগীরা তাদের নাম দেখতে না পেয়ে এ অভিযোগ করেন।


সোমবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে যত্ন প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা অনুযায়ী আর্ন্তভুক্তদের টিকেট দেয়া হয়। ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে প্রকৃত দারিদ্র মহলিারা নিজের ও শিশুর নামের টিকেট নিতে গিয়ে দেখেন তাদের নাম তালিকায় অর্ন্তুভুক্ত করা হয়নি। তালিকায় নাম না থাকায় তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, শিশুদের জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ডের ফটোকপিসহ জমা দেয়া কাগজপত্র ফেরত দিলে তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান দরিদ্র পরিবারের মহিলারা।


সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম সর্দারপাড়া ৯ নং ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায় সেখানে অনেক মহিলা ভিড় জমিয়ে আছেন। তাদের মধ্যে মুন্নি (৩২), নুর জাহান (২৩), রোসনা (৩০) জানান, আমরা সুবিধাভোগী হওয়ার জন্য যত্ন প্রকল্পে আবেদন করেছি। এসে দেখি তালিকায় আমাদের নাম নেই। যত্ন প্রকল্পের তালিকায় নাম উঠানোর জন্য আমাদের কাছে মেম্বার প্রথমে ১০ হাজার টাকা পরে ৫ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমরা গরীব মানুষ টাকা দিতে পারিনি। তাই তালিকায় নামও নাই। আমাদের জমা দেয়া কাগজগুলো ফেরত দিলো তা নিয়েই ফিরে যাচ্ছি।



এভাবে একের পর এক বিভিন্ন বয়সের মহিলা এসে জানাতে থাকে তাদের কাহারো নাম তালিকায় নেই। যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের কারও নামই তালিকায় নেই। আর যারা মেম্বার চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছে শুধু তাদের নামই তালিকায় আছে।


ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নংওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার ওয়ার্ডে মোট ৫৬৭ জন আবেদন করেছে। এর মধ্যে বরাদ্দ আছে ২৩৭ জনের। কার নাম আছে আর কার নাম নেই সেটা দেখতে চাইলেও যত্ন প্রকল্পের লোকজন তালিকা দেখায়নি। তাহলে কিভাবে বুঝবো কার নাম আছে আর কার নাই। টাকা নিয়ে তালিকায় নাম উঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাদের নাম উঠেনি তারাতো অপবাদ দিবেই। এটা তাদের অভ্যাস। আমি কারো কাছেই কোন টাকা নেইনি।


ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নে ২১৭৫জনকে পুষ্টি ভাতার কার্ড দেয়া হবে। এগুলো ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তালিকা করে যত্ন প্রকল্পের লোকজনকে দেয়া হয়েছে তারাই যাচাই-বাছাই করে তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে কার নাম আছে কার নাম নেই সেটা আমার জানা নেই। তবে তালিকায় নাম উঠানোর জন্য মেম্বারদের টাকা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউপি সদস্যরা টাকা নিয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। নিজে টাকা নেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।


এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, যত্ন প্রকল্পে যাতে করে মেম্বার চেয়ারম্যানগণ সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা নিয়ে হয়রানি করতে না পারে এজন্য জেলায় যত্ন প্রকল্পের পিডিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রত্যেকটি উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে মাইকিং করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সুবিধাভোগীদের নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত থাকতে বলা হবে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের উপস্থিতিতে সুবিধাভোগীদের লাইনে দাড় করিয়ে বাছাই করা হবে। আর যদি কেউ এ নিয়মের কোন ব্যাত্যয় ঘটায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ৯ টি উপজেলার মধ্যে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা ছাড়া বাকী ৭ উপজেলা ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে প্রথম ধাপে ইনকাম সাপোর্ট ফর দ্য পুওরেষ্ট (যত্ন) প্রকল্পের সুবিধাভোগী যাচাই-বাছাই চলছে। পরের ধাপে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাতে যত্ন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সুবিধাভোগীদের যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে। রোববার শুরু হয়েছে সদর উপজেলায়।


স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় কর্তৃক দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মা ও শুণ্য থেকে ৫ বছরের নীচে শিশুদের দৈহিক সুস্থ্যতা ও শারীরিক বিকাশের লক্ষ্যে এ বছরের গত এপ্রিল মাসে আইএসপিপি (যত্ন) প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের উপকারভোগী একজন নারী গর্ভবর্তী হলে ৪বার চেকআপের জন্য ৪হাজার টাকা, শিশু জন্ম নেয়ার পর ২ বছর পর্যন্ত মা ও শিশু মাসিক ১হাজার ৪শ টাকা পাবেন। একাধারে তিন মাস সেশনে উপস্থিত থাকলে মা একটি বোনাস ভাতা পাবেন এবং শিশুর বয়স পাঁচ বছর হওয়া পর্যন্ত প্রতি ৩মাস পর পর ৭শ টাকা হারে ভাতা পাবেন।


ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, কোন ইউনিয়ন বা উপজেলাতে যত্ন প্রকল্পের নীতিমালা অনুসরক করে সুবিধাভোগী নিয়োগ করা হয়নি। সবগুলো ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তালিকা নিয়ে যত্ন প্রকল্পে নাম পাঠিয়েছে। এই সুযোগে একেকটি নামের বিপরীতে সুবিধাভোগীরে কাছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্যদের নামে। এই টাকার কিছু অংশ চেয়ারম্যানদেরকে দিয়ে নিজের তৈরি করা মনপুত তালিকা জমা দিয়েছেন চেয়ারম্যানের হাতে।


তবে কোথাও মাইকিং করে লাইনে দাড় করিয়ে কোন সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়নি। ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগী হত দারিদ্র পরিবারের মা ও শিশুরা বাদ পড়লে টাকার বিনিময়ে তালিকায় না উঠেছে বিত্তশালী ও মধ্যবিত্তশালী পরিবারের নারী ও শিশুদের।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three