রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
দরজায় কড়া নাড়ছে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২২ গজের লড়াই শুরুর আগে উত্তেজনায় কাঁপছে ক্রিকেট বিশ্ব। কোন দলের কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। ক্রিকেটের এই উৎসবে যোগ দিচ্ছে বাংলা ট্রিবিউনও। ইংল্যান্ডের আসরে অংশ নিতে যাওয়া ১০ দলের শক্তি-দুর্বলতা, সম্ভাবনা নিয়ে সাজানো আমাদের এই আয়োজন।
আজ থাকছে ইংল্যান্ডকে নিয়ে- ‘আমরা কালই বিশ্বকাপে নামতে প্রস্তুত’ -কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে বলতে পারেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এউইন মরগান। এককথায় বলতে গেলে বিশ্বকাপের আগে উড়ছে ইংলিশরা। একে ঈর্ষণীয় ফর্ম, এর ওপর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরের আয়োজক তারাই। দুয়ে মিলিয়ে এবার ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ না জেতাটাই হবে অঘটন!
ইংল্যান্ডের সঙ্গে যাদের ফেভারিট ধরা হচ্ছে, সেই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক পর্যন্ত ফেভারিট মানছেন তাদের। না মেনে উপায়ই বা কী! দিনকয়েক আগে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতার পথে প্রায় সব ম্যাচেই ৩৫০ ছাড়ানো স্কোর গড়েছে। ব্যাটিং লাইন-আপ তাদের ভয়ঙ্কর। জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয়, জস বাটলার, এউইন মরগান, জো রুট, মঈন আলী, বেন স্টোকস- কাকে রেখে কার কথা বলবেন?
দুর্বলতা যদি কিছুটা থেকে থাকে, তা হলো বোলিংয়ে। যদিও ইংল্যান্ড ব্যাটিং দিয়ে সেই দুর্বলতা পূরণ করে নিতে চায়। সাম্প্রপ্রতিক সময়ে সেটা করেও দেখিয়েছে তারা। যে ইংল্যান্ডকে ‘টেস্টের দল’ বলা হতো, তারাই এবারের বিশ্বকাপে নামতে যাচ্ছে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের চ‚ড়ায় বসে। তবু সেই অহংয়ে পূর্ণতা নেই! বিশ্বকাপ যে এখনও জেতা হয়নি ইংরেজদের।
তিনবার ফাইনাল খেললেও শিরোপা অধরা থেকে গেছে ইংল্যান্ডের। ইতিহাসের দায় শোধ করার বিশাল সুযোগ এসেছে এবার, ইংরেজ সাম্প্র্রাজ্য বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার!
একনজরে-
অধিনায়ক: এউইন মরগান।
কোচ: ট্রেভর বেলিস।
ডাকনাম: থ্রি লায়্ন্স।
র্যাংকিং: ১।
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ১১ বার (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫)।
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: রানার্স-আপ- ১৯৭৯, ১৯৮৭, ১৯৯২।
আগের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স:
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে পেতে হয় বড় লজ্জা। শক্তিশালী দল নিয়ে নেমেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের। ইংলিশদের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল বাংলাদেশ। অ্যাডিলেড ওভালের ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি ও রুবেল হোসেন দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশ বিদায় করে দেয় ইংল্যান্ডকে।
কিভাবে বিশ্বকাপে: আয়োজক হিসেবে সরাসরি সুযোগ পেয়েছে।
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ সূচি:
৩০ মে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। দ্য ওভালের ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের বিশ্বকাপ যেহেতু রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে, তাই ৯ দলের সবার বিপক্ষে মাঠে নামবে প্রোটিয়ারা বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা খেলবে ৮ জুন।
৩০ মে: দক্ষিণ আফ্রিকা
৩ জুন: পাকিস্তান
৮ জুন: বাংলাদেশ
১৪ জুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১৮ জুন: আফগানিস্তান
২১ জুন: শ্রীলঙ্কা
২৫ জুন: অস্ট্রেলিয়া
৩০ জুন: ভারত
৩ জুলাই: নিউজিল্যান্ড
নজরে থাকবেন:
এউইন মরগানএউইন মরগান: তার নেতৃত্বে গত বিশ্বকাপও খেলেছে ইংল্যান্ড। যদিও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের আসর থেকে। এবারও ইংল্যান্ড নামতে যাচ্ছে তার নেতৃত্বে। চমৎকার অধিনায়কত্বে দলকে একসুতোয় বেঁধে রেখেছেন মরগান। দলকে ওয়ানডের এক নম্বর আসনে বসানোর সঙ্গে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও আলো ছড়িয়ে চলেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজে তার ব্যাটে চলেছে রান উৎসব।
জস বাটলার: মরগানের ডেপুটি তিনি। খেলেছেন গত বিশ্বকাপেও। তবে এবার তার কাছে প্রত্যাশা আরও বেশি। আইপিএলে ধারাবাহিক ছিলেন না, তা নিয়ে অবশ্য ইংল্যান্ডের ভক্তদের ভাবনা আছে সামান্যই। কারণ ইংলিশদের হয়ে তার ব্যাট সবসময়ই ধারালো। আর বাটলারের দিনে প্রতিপক্ষের কী অবস্থা হয়, সেটা অনেকবার দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব।
ক্রিকেট যুদ্ধে থাকছেন না:
শুধু স্কোয়াডে থাকা নয়, একাদশেও জায়গা পাকাপোক্ত ছিল অ্যালেক্স হেলসের। কিন্তু তার শরীরে নিষিদ্ধ পদার্থ পাওয়া যাওয়ায় বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়েছেন এই ওপেনার। ডেভিড উইলি ও জো ডিনলিও বাদ পড়েছেন। প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকলেও সুযোগ হয়নি দুই পেসারের।
শক্তি:
* শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে নামতে যাচ্ছে ওয়ানডের এক নম্বর দল।
* এউইন মরগান, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জেসন রয় আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রান পেয়েছেন সবাই।
* অলরাউন্ডারে ঠাসা দল। বেন স্টোকস, মঈন আলী, টম কারান, ক্রিস ওকস, জোফরা আর্চার ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই জ¦লে উঠতে পারেন।
* ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ। স্বাগতিক হওয়া সুবিধা তো থাকছেই।
দুর্বলতা:
* বোলিং নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। জোফরা আর্চার, মার্ক উড, ক্রিস উডের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়।
* টপ অর্ডারে রান উঠলেও মিডল অর্ডারকে প্রায়ই ভুগতে হয়।
* বড় টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতার অভাব। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজেদের হারিয়ে ফেলে তারা।
* ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ বলে প্রত্যাশার চাপ বেশি, যা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভবিষ্যদ্বাণী: চ্যাম্পিয়ন।ইংল্যান্ড স্কোয়াড:
এউইন মরগান (অধিনায়ক), মঈন আলী, জোফরা আর্চার, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার (উইকেটরক্ষক), টম কারান, লিয়াম ডসন, লিয়াম প্লাঙ্কেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, জেমস ভিন্স, ক্রিস ওকস, মার্ক উড।