আর মাত্র পাঁচ বা ছয় দিন। তারপরই ঈদুল ফিতর। খুশির এই দিনটি উদযাপনে কমবেশি সবাই ঢাকা ছাড়ছে। ট্রেনে-বাসে-লঞ্চে করে শুরু হয়েছে বাড়িমুখো মানুষের ঈদযাত্রা। গতকাল সকাল থেকেই বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও লঞ্চঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে।
তবে ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই রেলের শিডিউলে কিছুটা বিপর্যয় দেখা দেয়। অন্যদিকে বাস বা লঞ্চের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। সদরঘাটে মানুষের চাপ থাকলেও টিকিট নিয়ে কোনো ভোগান্তি চোখে পড়েনি। আর বাসে করে স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন মানুষ।
সরেজমিনে গতকাল দেখা যায়, সকাল ৮টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাবার কথা নীলসাগর এক্সপ্রেসের। সে হিসেবে এই ট্রেনের যাত্রীরা ভোর থেকে স্টেশনে ছিলেন অপেক্ষায়। আর ঈদের ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে অনেকেই আরও আগে এসে প্লাটফর্মে বসেছিলেন। কিন্তু ৮টার ট্রেন শেষে ঢাকা ছেড়ে যায় সোয়া ১০টায়।
ঈদ যাত্রার শুরু হতে না হতেই সঙ্গী হয়েছে এমন দেরি। তবু বাড়ির টানে এসব দেরিকে তেমন আমলে নিচ্ছেন না কেউ। নাড়ির টানে গ্রামের পথে এবার ঢাকার দুই স্টেশন থেকে ট্রেনে করে প্রতিদিন ঢাকা ছাড়ছেন অর্ধলাখ যাত্রী। এর মধ্যে ৩৩টি আন্তঃনগর ট্রেনের ৩০ হাজার টিকিট রয়েছে। বাকিরা স্ট্যান্ডিং টিকিটে যাবেন। গতকালও ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জানান, ঈদের ৩৭ টি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। এর মধ্যে উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গের ১৬টি ট্রেনের প্রতিদিন ১৪০৯৫টি টিকিট ছিল। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৬টি ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়েছে। ঢাকা নোয়াখালী রোডসহ সাতটি ট্রেনের টিকিট ৪৮৭৯টি। ঢাকা জামালপুর রুটের স্পেশালসহ পাঁচটি ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।
ঢাকা নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ ভোটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের মোট টিকিট ১২৫৮ টি। ঢাকা-সিলেট রুটে ৪টি এবং ঢাকা কিশোরগঞ্জের রুটে তিনটিসহ সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে মোট টিকিট ৪ হাজার ৫৪৮টি। সব মিলিয়ে দিনে ঢাকা থেকে ৩৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ছিল ২৮ হাজার ২২৪টি।
তিনি আরও জানান, চাঁদ দেখা যাওয়ার ওপর নির্ভর করছে ৫ ও ৭ জুনের ঈদের টিকিট বিক্রি। ৫ জুন ঈদ না হলে ৪ জুন সন্ধ্যা থেকে দেওয়া হবে পরের দিনের টিকিট।
এদিকে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে গতকাল সদরঘাটেও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার বাড়িমুখো মানুষের ভিড় ছিল। তবে আজ থেকে ভিড় আরও বাড়বে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দিনে গড়ে দূরপাল্লার নৌযান চলাচল করে ৯০টি। ঢাকা থেকে ১৫০টি রুট ধরে এক লাখ ৭০ হাজার যাত্রী সদরঘাট হয়ে চলাচল করে স্বাভাবিক সময়ে। ঈদ যাত্রায় নৌপথে যাত্রীর চাপ পড়ে দ্বিগুণের বেশি। তবে এসময় ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদরঘাট পৌঁছতে গিয়ে বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। বিভিন্ন এলাকা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বাস কম থাকায় গুলিস্তান থেকে হেঁটে সদরঘাটে ছুটতে হয় অনেককে।
সদরঘাট থেকে গতকাল বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে গেছে অন্তত ২১৫টি লঞ্চ। আর এসব লঞ্চে করে ঢাকা ছেড়েছেন বিপুল যাত্রী।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ঢাকা নদীবন্দরের হিসেবে এ বছর ঈদ করতে সদরঘাট হয়ে নৌপথে ঘরে ফিরবেন প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। ৪৩টি রুটে প্রতিদিন লঞ্চ চলবে ২১৫টি। তবে এবার ঈদে ঝড়বাদল থাকতে পারে। সে আশংকায় তিন নম্বর বিপদসংকেত দিলেই নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ঢাকা নদী বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এ ঈদে ঢাকা বরিশাল রুটে লঞ্চ চলবে ২৩টি, ঢাকা চাঁদপুর রুটে ২৫টি, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে ১৩টি, ঢাকা হুলারহাট ভান্ডারিয়া রুটে চলবে ১০ টি, ঢাকা ভোলা রুটে ৮টি।
এদিকে সড়কপথে এবার যাত্রার আগে থেকেই টিকিটের হাহাকার দেখা গেছে। সড়কপথে ঢাকার মহাখালী, কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে উত্তর-দক্ষিণের জেলাগুলোর বাস ছাড়ে। গতকাল এসব টার্মিনাল থেকে মানুষ বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন। তবে বেশি যাত্রীর চাপ পড়বে ১ থেকে ৩ জুন। এর মধ্যে ৩ জুনের কোনো এসি বা নন এসি বাসের সিট পাওয়া যাচ্ছে না।
মহাখালি টার্মিনাল সূত্র জানায়, চাঁদরাত পর্যন্ত এখান থেকে বাস চলবে। তবে ঈদের দিন বেশিরভাগ দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রাত থেকেই আবার কিছু কিছু রুটে বাস চলাচল শুরু হবে।