আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইং-সহ অন্য ছয় শীর্ষ সেনা জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে জাতিসংঘ এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে ফেসবুক।
ফেসবুক গত সোমবার এ উদ্যোগ নিয়েছে। অর্ধ শতাব্দীর সামরিক শাসনের বেড়াজাল থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা মিয়ানমারে অনেকের কাছে সংবাদের প্রধান উৎস ফেসবুক। তবে রাখাইনের রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী এবং উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রধান প্ল্যাটফর্মেও পরিণত হয়েছে জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রযুক্তি জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠান ব্যাপক পরিসরে জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছে। ফেসবুক বলছে, উসকানিমূলক পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলতে তারা কিছুক্ষেত্রে দেরি করেছে। মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালানোর দায়ে ইসলাম বিদ্বেষী ও উগ্র বৌদ্ধদের দুটি গ্রুপকেও নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। তবে এবারই প্রথম মার্কিন এই অনলাইন স্যোসাল মিডিয়া জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো।
ফেসবুক বলছে, আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইংসহ দেশটির ২০ নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করছি। জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা ঠেকাতে চায় ফেসবুক। ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ মিয়ানমারে ফেসবুকের ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। যে কোনো ধরনের ঘোষণা দেয়ার জন্য দেশটির সরকার এই মাধ্যমটির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের দু'টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সচল ছিল। এর মধ্যে একটিতে ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ এবং অন্যটিতে ২৮ লাখ। ইংলিশ এবং বার্মিজ ভাষায় দেয়া উভয় অ্যাকাউন্টের পোস্টে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সবসময় বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সেদেশে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া দেশটির নৃশংস অভিযান ও গণহত্যার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের এই সেনাপ্রধান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সমূলে উৎপাটনের জন্য সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে বলে সাফাই গেয়ে আসছেন তিনি। রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। এএফপি।