লবণের কৃত্রিম সঙ্কটে বিপুল পরিমাণ চামড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে

admin August 28, 2018

এক্সক্লুসিভ: অসাধু মজুদদার চক্রের কারসাজিতে বাজারে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর ফলে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে পচে যাচ্ছে চামড়া। সরকার ভাষ্য অনুযায়ী দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বরং দেশে অনেক উদ্বৃত্ত লবণ রয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া লবণ মৌসুমে দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। সারা বছর ব্যবহার করে আগের উদ্বৃত্তসহ বর্তমানে দেশে ১২ লাখ টনেরও বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণীর মজুদদার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিতেই তারা এমন অবস্থা তৈরি করেছে বলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়িদের অভিযোগ। চামড়া ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবারের কোরবানি ঈদে কম দামে পশুর চামড়া বিক্রি হলেও তা সংরক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়িরা। কারণ বাজারে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট। এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে প্রায় ২ লাখ টন লবণের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, কাঁচা চামড়ায় সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হয়। কিন্তু অনেকে এখন পর্যন্তও দিতে পারেনি। আর একটা গরুর চামড়ায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি লবণ লাগে। গত মে মাসে উৎপাদনের মৌসুম শেষে আয়োডিন ছাড়া প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) লবণ ৭০০-৭০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে লবণের দাম বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে যায়। আর ঈদে দিন থেকে দাম আরো বেড়ে দেড় হাজার টাকা হয়ে গেছে। লবণের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না চামড়া ব্যবসায়িরা। তাছাড়া ঈদের পরে সিন্ডিকেটের কারণেই চামড়া ব্যবসায়িরা সঠিক সময়ে লবণ পাচ্ছে না। তাতে এবার লাখ লাখ টাকার চামড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) হিসাবে দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বিসিক বলছে, এবারো লবণ মৌসুম (নভেম্বর থেকে মে) শেষে দেশে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আর আগের মৌসুমের আড়াই লাখ টন লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে লবণের চাহিদা এক লাখ ৩৫ হাজার টন। আর এ বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট চাহিদা বাদ দিয়ে দেশে ১২ লাখ ৩ হাজার টন লবণ মজুদ থাকবে। কিন্তু ঈদের আগে ৭৫ কেজির এক বস্তা লবণের দাম ছিল ৯৪০ টাকা। আর ঈদের দিন থেকে ওই লবণের দাম দেড় হাজার টাকা হয়ে গেছে। এমনকি অনেক চামড়া ব্যবসায়ি বেশি দাম দিয়েও লবণ পায়নি। ফলে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ চামড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। তবে সরকার ওই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। কারণ শিল্প রক্ষার কথা বিবেচনা করে এখনো পর্যন্ত সরকারের কাঁচা চামড়া রপ্তানির কোনো পরিকল্পনা। কারণ কাঁচা চামড়া রপ্তানি করলে দেশের চামড়া শিল্পই ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ চামড়া বাংলাদেশের ৫টি রপ্তানি খাতের মধ্যে অন্যতম। গত বছর চামড়াকে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় এ খাত যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক রয়েছে।
এদিকে কৃত্রিম সঙ্কটের কথা মানতে নারাজ লবণ ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম সঙ্কটের কথা অস্বীকার করে মদিনা সল্টের স্বত্বাধিকারী জামিল আহম্মেদ জানান, এবার আড়াই হাজার বস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে। তারপরও লবণ কিনতে আসেন চামড়ার আড়তদাররা। এত লবণ কোথায় পাওয়া যাবে? তারপরও চাহিদা বিবেচনায় ঈদের দিন অতিরিক্ত ট্রাক ও লেবার ভাড়া দিয়ে লবণ তোলা হয়েছে। বেশি দামে লবণ কেনা কারণে বিক্রিও বেশি দামে হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন রিটেইল ডিলার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, সরকার লবণের দাম বাড়ায়নি। অথচ চাহিদ বেশি থাকায় লালবাগের একটা সিন্ডিকেট কোনো কারণ ছাড়াই লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three