যশোর রোডের ভারতীয় অংশের প্রাচীনগুলো কাটার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট

admin August 31, 2018

রংপুর এক্সপ্রেস: যশোর রোডের ভারতীয় অংশে ৩৫৬টি অতি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা সংলগ্ন বারাসাত থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চেকপোস্ট পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার রাস্তায় যানবাহন চলাচলে গতি ফিরিয়ে আনতে সরকার পাঁচটি উড়ালপুল বা ফ্লাইওভার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্যই তারা গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অতি প্রাচীন ঐ গাছগুলি কেটে ফেলতে শুরু করেছিল।


স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা আদালত থেকে গাছ কাটার ওপরে স্থগিতাদেশ পেয়েছিলেন, যা এতদিন বলবত ছিল। আজ শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায় দিয়েছে যে ৩৫৬টি গাছ কেটে ফেলা যেতে পারে। তবে প্রতিটি গাছের পরিবর্তে আইন অনুযায়ী পাঁচটি করে নতুন গাছ লাগাতে হবে। যে পরিবেশকর্মীরা আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন, তাঁরা শুক্রবারের রায়ের পরে বলছেন, "আমরা হতাশ, এতগুলো হেরিটেজ গাছ কেটে ফেলা হবে।"


অন্যতম মামলাকারী মানস দাস বলছিলেন, "এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। আশা করি সেখানে আমরা সঠিক বিচার পাব। কিন্তু যে কারণে আমরা হতাশ এই রায়ে, তা হল, কোর্ট অফিসাররা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেগুলোকে কোনও মান্যতাই দেওয়া হল না? তারা তো সরকারের দেখানো রিপ্ল্যান্টেশনের ব্যবস্থাতে সন্তুষ্ট হন নি। ঐতিহ্যশালী গাছের বিষয়টাকেও মান্যতা দেওয়া হল না।"


এ নিয়ে ২০১৭ সালে যখন মামলা দায়ের হয়, তখন আদালত গাছ কাটার ওপরে স্থগিতাদেশ জারি করে দুজন কোর্ট অফিসার নিয়োগ করেছিল, যারা সরেজমিনে দু'দিন ধরে সরকারের দেওয়া রি-প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছিলেন। কিন্তু প্রতিটি কেটে ফেলা গাছের বদলে যে পাঁচটি করে নতুন গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত, তার জায়গাই দেখাতে পারে নি সরকার, এমনটাই আদালতকে আগে জানিয়েছিলেন মামলাকারীরা। অন্যদিকে যশোর রোড সম্প্রসারণের দাবীও অনেকদিনের। স্থল সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুগম করতে রাস্তা চওড়া করাও দরকার।


পরিবেশকর্মীরা মামলায় এটাও বলেছিলেন যে পেট্রাপোল সীমান্ত চৌকি থেকে দু'কিলোমিটার রাস্তা যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে - পুরনো রাস্তার ধারে প্রাচীন গাছগুলিকে অক্ষত রেখে তার অন্য পাশ দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে - সেই ভাবেই যশোর রোডের বাকি অংশের সম্প্রসারণ হতে পারে।


বনগাঁর বাসিন্দা অজয় মজুমদার বিবিসিকে বলছিলেন, "আমরা কখনই রাস্তা চওড়া করার বিরোধী নই। আমরা শুধু বলেছিলাম গাছগুলোকে না কেটে পাশ দিয়ে রাস্তা হোক। বাঁধানো রাস্তা তো মিটার পাঁচেক, কিন্তু তার পাশে আরও প্রায় কুড়ি মিটার মতো জমি রয়েছে। যেভাবে সীমান্তের কাছে ভারতের দিকে শেষ দু কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে - মাঝখানে গাছও আছে, আর পাশে রাস্তাও হয়েছে - সেভাবেই পরিকল্পনা করা যায়।"




[caption id="" align="aligncenter" width="624"] আকাশ থেকে গাছে ঢাকা-যশোর রেডের ভারতীয় অংশের ছবি[/caption]

যদিও পুরো রাস্তা চওড়া করার পরিকল্পনার বদলে প্রথমে যশোর রোডের ওপরে পাঁচটি উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার জন্যই এই ৩৫৬টি গাছ কাটতে হবে। আজ শুক্রবারের রায়ের পরে আরেক পরিবেশকর্মী অমিতাভ আইচ বলছিলেন, "রায় হতাশাজনক তো বটেই, যদিও পুরো রায়ের কপি এখনও হাতে পাই নি। তবে শুনছি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে। কিন্তু আমার আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগেই রাতারাতি এই প্রাচীন ঐতিহ্যশালী গাছগুলো কেটে না ফেলা হয়। এগুলো তো আইন অনুযায়ীই হেরিটেজ গাছে তকমা পাওয়ার কথা।"


মি. আইচ আরও বলছিলেন, "একটা বিকল্প হতে পারত যে টানেল বোরিং মেশিন বসিয়ে ফ্লাইওভারের বদলে ভূতল টানেল তৈরি। প্রাথমিক খরচ হয়তো বেশী, কিন্তু দীর্ঘকালের জন্য মেনটেনান্স খরচ বেশ কম। আবার পরিবেশও বাঁচানো যেত এর মাধ্যমে।" পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত এর আগে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, যশোর রোড শুধু একটা রাস্তা নয় - এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য।



[বিশ্বনেতাদের মানসিক রোগী বললেন সামোয়ার প্রধানমন্ত্রী]

"আগে যখন আমরা পেট্রাপোল সীমান্ত অবধি যেতাম, গোটা রাস্তার ওপরে তাঁবুর মতো হয়ে থাকত গাছগুলো। আসলে গাছের তো ভোটাধিকার নেই, তাই ওগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব সহজ। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই চায় না যে ভোট দেয় যারা - সেই জবরদখলকারীদের সরিয়ে ভোটব্যাঙ্কের ক্ষতি করতে। অথচ রাস্তা চওড়া করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করাই যেত। যশোর রোড তো নিছক কোনও রাস্তা নয় - এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য। সেটা রক্ষা করতে পারলে পৃথিবীর কাছে একটা উদাহরণ হয়ে উঠত," বলছিলেন সুভাষ দত্ত।


দমদম বিমানবন্দরের পরে বারাসাত শহর ছাড়িয়ে কিছুটা এগোলেই যশোর রোডের ওপরে ছাতার মতো বিছিয়ে থাকে কয়েক হাজার প্রাচীন গাছের পাতা - ডালপালা। এই রাস্তা তৈরি হওয়ার পর থেকে একসময়ে গোটা রাস্তাতেই গাছের ছায়া থাকত। কিন্তু নগরায়ণের জন্য আগেই কেটে ফেলা হয়েছে অনেক গাছ। তবুও পেট্রাপোল স্থল বন্দর অবধি এখনও যে চার হাজার ৩৬টি গাছ রয়েছে, সেগুলিকে মহীরুহ বলাটাই শ্রেয়।


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে এই যশোর রোড দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই কবি অ্যালেন গিনসবার্গ লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া কবিতা, 'সেপ্টেম্বর অন জেসোর রোড'। যুদ্ধের সময়ে এই রাস্তা দিয়ে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা বা ভারতীয় বাহিনী যাতায়াত করতেন, তেমনই লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে চলে আসার পরে এই রাস্তার দু'পাশেই আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রাথমিকভাবে। বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three