রংপুর এক্সপ্রেস: বাাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মেয়াদ বাড়াতে দৌড়ঝাঁপ করছে ইউরোপের ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড। কিন্তু সরকার রাজি নয়। সরকারকে রাজি করাতে ক্রেতাজোটের নেতারা উন্নয়ন সহযোগী এবং কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। অ্যাকর্ডের মেয়াদ আর না বাড়াতে আদালতের প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞার পর ওই বিষয়ে প্রভাব খাটাতে সরকারকে সরাসরি অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সব অনুরোধ আমলে নেয়নি সরকার। এমন অবস্থায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে শেষ হচ্ছে অ্যাকর্ডপর্ব। এর ফলে ২শ ব্র্যান্ডের জোট অ্যাকর্ডের এদেশে অধিককাল কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হতে পারে। পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্রমতে, বিগত ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর একই বছরের ১৫ মে ইউরোপের ২০টি দেশসহ উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার ২শ ব্র্যান্ড এবং খুচরা ক্রেতা ও কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়নের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড গঠিত হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ওই জোটটির ৫ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ গত মে মাসে শেষ হয়েছে। যদিও সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ৬ মাস সময় এদেশে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে অ্যাকর্ড এবং অপর ক্রেতাজোট উত্তর আমেরিকার অ্যালায়েন্সকে। বর্ধিত ওই মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বরে। ইতিমধ্যে গত ৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম নিয়ে চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে অ্যাকর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই সময় পর্যন্ত তাদের সরকার গঠিত ট্রানজিশন মনিটরিং কমিটির (টিএমও) তত্ত¡াবধানে কাজ করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া অ্যাকর্ডের ওয়েবসাইটে দেয়া আগামী ৩ বছরের বর্ধিত মেয়াদের বিষয়ে সরকারের অনুমোদন থাকার তথ্যও আমলে নিয়েছেন আদালত। তাতে বলা হয়, আদালত খবর নিয়ে জেনেছেন এ-সংক্রান্ত কোনো অনুমোদন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। অ্যাকর্ডের পক্ষে আইনজীবী আদালতে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি। গত ২৬ অক্টোবর অ্যাকর্ড তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, আগের সপ্তাহে অর্থাৎ ১৯ অক্টোবর সরকার অ্যাকর্ডের ৩ বছরের বর্ধিত মেয়াদ অনুমোদন করেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে সেকেন্ড অ্যাকর্ড নামে ইউরোপীয় ক্রেতাজোটটি আগের মতোই এদেশের পোশাক খাতে স্বাধীনভাবে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতবছরের ২৭ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অ্যাকর্ডের অংশীদারদের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। তবে জোটের অনেক অংশীদার এখনো তাতে সই করেনি। যদিও ২০০ ব্র্যান্ডের মধ্যে ১৪০টি ব্র্যান্ড মেয়াদ বাড়াতে সম্মত বলে দাবি করেছে অ্যাকর্ড। ওই জোটের দাবি, তাতেই ১২০০ কারখানায় বর্ধিত মেয়াদে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ চালিয়ে নিতে সরকারের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, অ্যাকর্ডের কার্যক্রম নিয়ে অস্বস্তিতে আছে তৈরি পোশাক খাতের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিজিএমইএ। সরকারের কাছে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম নিয়ে বিজিএমইএ কয়েক দফা অভিযোগও করেছে। তারা কিছুতেই অ্যাকর্ডের অতিরিক্ত সময় কার্যক্রম চালানোর পক্ষপাতি নয়। অ্যাকর্ডভুক্ত ক্রেতারা যেসব কারখানা থেকে পোশাক নেয় ওই রকম ২ হাজার ৯৬টি কারখানাকে প্রাথমিক পরিদর্শনের জন্য বাছাই করা হয়। তারমধ্যে এক হাজার ৬৩১টি কারখানার প্রাথমিক পরিদর্শন শেষ হয়েছে। নতুন করে পরিদর্শনের কথা রয়েছে ৭৪টির। ৪৯টিকে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ৮৮টি। আর সংস্কার অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থতার অভিযোগে ৯৬টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। তবে স্থানান্তর আবশ্যক হওয়া বাকি ৫৮টি কারখানা এখন আর অ্যাকর্ডের আওতায় নেই। অ্যাকর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক পরিদর্শনে চিহ্নিত ভবনের কাঠামো, অগ্নি নিরাপত্তা ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ত্রুটির ৮৪ ভাগ ইতিমধ্যে সংশোধন হয়েছে।
এদিকে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানোর প্রশ্নই আসে না। বরং সরকার গঠিত রিমিডিয়েশন কোঅর্ডিনেশন সেলে (আরসিসি) তারা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। অ্যাকর্ডের প্রয়োজনীয়তা থাকলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করা যেত। কিন্তু তাদের আর প্রয়োজন নেই। কারণ অ্যাকর্ডভুক্ত কারখানার সংস্কার প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া নেদারল্যান্ডসের আইনে একটা স্বাধীন দেশে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।