পাবনা: পাবনার চাটমোহরে পিতা ও সৎ ভাইয়ের ধর্ষণের শিকার হয়ে হয়েছে এক স্কুল ছাত্রী। নজিরবিহীন এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে ভাই বোন ও বাবা মেয়ের পবিত্র সম্পর্ককে কলংকিত করেছে দুই লম্পট। প্রথমে সৎ ভাইয়ের লালসার শিকার হবার পরে স্কুলছাত্রী ৫ মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে পরিবারের সহযোগীতায় গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য হয় সে। লোকলজ্জার ভয়ে ঐ স্কুলছাত্রী কাউকে কিছু না বললেও এর কিছুদিন পরে ক্রমাগত আপন বাবার লালসার শিকার হবার পরে সে বাধ্য হয়ে মুখ খুলে সব কিছু বলে ফেলে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার খন্দকার পাড়া গ্রামে। অভিযুক্ত লম্পট পিতা আনোয়ার হোসেন (আনু) ও তার বড় পক্ষের ছেলে রিপন হোসেন (২০) এখন পলাতক। রিপন ফৈলজানা ইউনিয়নের পবাখালী গ্রামে বিয়ে করে সেখানেই থাকে। বাবা-ভাইয়ের পাশবিক নির্যাতনের শিকার ১৫ বছর বয়সী কিশোরী স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় জনসাধারনের মাঝে নিন্দার ঝড় ওঠেছে এবং অভিযুক্ত বাবা ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তারা।
[সৈয়দপুর বিমানবন্দরে শ্রীলঙ্কা জাতীয় ফুটবল দলকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ]
পাশবিক নির্যাতনের শিকার কিশোরী সাংবাদিকদের বলেন,‘আমার আপন মা কয়েক বছর আগে মারা গেছে। আমার মা ছিল বাবার ২য় পক্ষ। গত ৭ মাস আগে আমাদের গ্রামের জালসায় আমার সৎ মা (বড় পক্ষ) ও তার ছেলে রিপন আমাদের বাড়িতে আসে। রাতে ঘুমানোর জন্য বাবা ও মা আমার ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ে এবং আমার সৎ ভাইকে আমার বিছানায় ঘুমানোর জন্য বলে তারা। রাতে আমার সেই সৎ ভাই আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। সকালে বিষয়টি আমার সৎ মাকে জানালে সে বলে ভাইয়েরা এমন একটু আধটু করেই থাকে। এটা নিয়ে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। বললে তোকে প্রাণে মেরে ফেলবো বলে উনি জানায়। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই আমার সেই ভাই আমাদের বাড়িতে এসে আমার সাথে জোর করে শারিরীক সম্পর্ক করেছে। এভাবে আমি অন্তঃস্বত্তা হয়ে যাই। আমাকে আমার সেই সৎ মা ও বাবা আটঘরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করানোর চেষ্টা করে। সেখানে সে কাজ করা সম্ভব না হলে ইতোমধ্যে আমি পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে যাই। লোকলজ্জা আর ভয়ে কাউকে কিছুই বলি নাই। আমার শারিরীক অবস্থার পরিবর্তন দেখে পাড়া প্রতিবেশী ও আমার পাশের নানার বাড়ির লোকজন সন্দেহ করলে বিষয়টি আমি তাদের খুলে বলি। পরে আমার মামার সহায়তায় ঢাকাতে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে আসি।’
স্কুল ছাত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাড়ি আসার কিছুদিন পরেই আমার বাবার কু-দৃষ্টি পড়ে আমার উপর। বাড়িতে তেমন কেউ না থাকার সুযোগে সেও আমাকে একাধিক বার জোর করে ভয় দেখিয়ে শারিরীক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেছে। আমি আমার লম্পট বাবার শাস্তি চাই।’
[ভূরুঙ্গামারীতে ইয়াবাসহ মুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধু আটক]
অভিযোগের বিষয়ে কিশোরীর পিতা আনোয়ার হোসেন আনু’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যে। মুলত আমার মেয়ের মামারা আমার ভিটা জমিটি দখল নেয়ার জন্য মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে এসব করাচ্ছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। ঘটনার বিষয়ে মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম বকুল বলেন, এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা জানার পরেই আমি ঐ গ্রামে গিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলি। সে যা বলেছে এটা প্রকাশ করাও পাপ। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই নরপশু বাবা ও ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এরা ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিকতার প্রেক্ষাপটে চরম গুরুতর অপরাধে অপরাধী। যারা এই বিষয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে কিংবা মিমাংসার কথা বলবে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা আমি করবো।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) তাপস কুমার বলেন,খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলো। ভিকটিমের পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে থানায় এসে অভিযোগ দেয়ার জন্য। ইতোমধ্যে আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে, তারা পলাতক।