অনলাইন ডেস্ক:
আজ পঁচিশে বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ এতকাল পরেও বাঙালির জীবনে তিনি মনন ও জাগরণের দূত হিসেবে চির উজ্জ্বল হয়ে আছেন, এমনকি আরো বহুকাল এমনিভাবে বাঙালির মেধা-মননের অগ্রপথিক হয়ে থাকবেন।
কেননা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি। মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের স্বাক্ষর বয়ে যাবেন যুগ থেকে যুগান্তর। রবীন্দ্রনাথ বাংলার কবি ,বাঙালির কবি হলেও তিনি নিজেকে বিশ্বচরাচরের অংশ হিসাবে বিশ্বাস করতেন। বাঙালিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘তুমি নিছক বাঙালি নও , তুমি বিশ্বচরাচরের অংশ।’
সকলের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রেমের মধ্যে বাঁচতে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে যুক্ত করতে বলেছেন প্রণীজগৎ, নিসর্গ, প্রকৃতিকে। শুধু তাই নয়, শিল্পের জগৎ, কল্পনার জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের বিস্তার ঘটাতে বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ। সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ। চরণপদ্মে মম চিত নিস্পন্দি করো হে। নন্দিত করো, নন্দিত করো, নন্দিত করো হে।’
প্রতিবছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী এই বাঙালি কবিকে স্মরণ করবে তার অগণিত ভক্তকুল। শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, বিশ্বের দেশে দেশে বাংলা ভাষাভাষীরা কবির জন্মবার্ষিকী উদযান করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়। বিশ্ব কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’।
এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আজ বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি।
বিশেষ বক্তা থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক অধ্যাপক সনজীদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। রবীন্দ্র স্মারক বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলের পাশে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকাসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
একশ বছরেরও বেশি আগে বাঙালি পাঠকদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের জিজ্ঞাসা ছিল- ‘আজি হতে শতর্বষ পরে /কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি / শত কৌতূহল ভরে / অথবা, আজি হতে শতর্বষ পরে/ এখন করিছো গান সে কোন্ নুতন কবি /তোমাদের ঘরে!’
কবির জিজ্ঞাসার জবাবে বলা যায়- শতবছর পরে এখন অনেক নতুন কবি এসেছেন, নব নব সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত স্ফীত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য এবং সঙ্গীতের ভুবন। তার পরেও আমাদের রবীন্দ্রনাথ মাত্র একজন। এখনকার নবীনদের সৃষ্টির উৎসও তিনি। এখনো জীবনের সবকিছুতে হাত বাড়াতে হয় রবীন্দ্রনাথে। তাই কবির বসন্ত গান শতবছর পরেও ধ্বনিত হয় নবীন কবি আর পাঠকের বসন্ত দিনে। #NewsBD