দিনমজুর ছেলেটি গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ায় অবাক গ্রামবাসী

admin May 07, 2019

গ্রামের সবাই জানে মো. সিফাত ঢালী শুধুই একজন দিনমজুর কিশোর। কেউ কখনও জিজ্ঞাসাও করেনি সে পড়ালেখা করে কীনা? সেই সিফাতই সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন।


পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতো সিফাত ঢালী। এ কারণে ঠিকমতো স্কুলে যেতেও পারতো না সে। এরই মধ্যে প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সেই সিফাত এসএসসিতেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।


মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সিফাত। সে শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামের দিনমজুর মো. লিটন ঢালীর ছেলে। কষ্টের জীবনে তাদের সফলতার এমন গল্প স্বপ্ন দেখাচ্ছে তার পরিবারকে।


সিফাতের পরিবার সূত্রে জানায়, আটিপাড়া গ্রামের লিটন ঢালী অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। অভাবের সংসারে দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার চালিয়ে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে লেখাপড়া করান। একা কাজ করে সংসার চালিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া যখন বন্ধের পথে তখন বাবার সঙ্গে অভাবের সংসারে হাল ধরে ছেলে সিফাত। সিফাতের বড় বোন আয়শা আক্তার মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, মেঝ বোন তানহা আক্তার আটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, ছোট বোন গণশিক্ষায় শিশু শ্রেণির ছাত্রী ও মা গৃহিণী।


সিফাতের এ ভালো ফল জেনেও কেন যেন হাসি নেই বাবা-মার মুখে। কারণ একটাই, অভাব। সামনে আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে সিফাতকে। এ ভেবে আনন্দ যেন তাদের স্পর্শ করতে পারছে না।


সিফাত জানায়, বাবা কৃষি কাজ করেন। বাবার সঙ্গে আমিও কৃষি কাজে সাহায্য করি। প্রাইভেট পড়তে না পারলেও সহপাঠীদের সাহায্য নিয়ে বাড়িতেই পড়েছি। খেয়ে না খেয়ে স্কুলে গিয়েছি। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। জানি না এ স্বপ্ন পূরণ হবে কীনা?


সিফাতের বাবা লিটন ঢালী বলেন, সিফাত এসএসসিতে প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।


সিফাতের মা মনি বেগম বলেন, অভাবের সংসার। তাই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকি। সিফাত ঠিকমতো ক্লাসে যেতে পারেনি। কষ্ট করেই ভালো ফল করেছে সে। তবে এতো ভালো করবে বুঝতেই পারিনি।


মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ আল হোসাইন বলেন, আমাদের কলেজটি এসএসসি পরীক্ষার ফলে তিনবারই জেলায় প্রথম হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ভালো পাঠদানে সহায়তা করে থাকি। সিফাত এবার এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সিফাত অনেক মেধাবী। তার পরিবার খুব গরিব। তাই ফ্রি বেতনে পড়ানো হয়েছে সিফাতকে। আমরা সিফাতের উত্তোরত্তর উন্নতি কামনা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three