রৌমারী, কুড়িগ্রাম: স্কুল ও বাড়ির লেখাপড়ার কঠোর শাসন, তীব্র প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য একটি শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের দাবি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাবাসীর। ইতোপুর্বে উপজেলা পরিষদের পাশে একটি মিনি শিশুপার্ক স্থাপন করা হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং স্থানীয়দের অযত্নে তা নষ্ট হয়। পরবর্তীতে ওইস্থানে একটি সরকারী নার্সারী করা হয়। বর্তমানে যার অস্তিত্বই নেই।
জানা যায়, রৌমারী উপজেলা সদরে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু-কিশোর ও যুবক। তবুও এখন পর্যন্ত এখানে গড়ে উঠেনি কোন বিনোদন কেন্দ্র। রৌমারীর মানুষ খেলা পাগল, ফুটবল খেলা হলে হাজার হাজার দর্শক খেলার আনন্দে মেতে উঠে। উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, বিনোদন বা খেলাধুলার স্থান না থাকায় রৌমারীর যুব সমাজ অলস সময় কাটায়। এতে করে মাদকব্যবসা, মাদকসেবনসহ মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে তারা। এসব থেকে মুক্ত করার জন্য খেলাধুলা ও শিক্ষা সংস্কৃতির চর্চাসহ বিনোদনের বিকল্প নেই।
মুক্তিযুদ্ধে রৌমারীবাসীর গৌরবগাঁথা ভূমিকা যেমন মুছে ফেলার নয় তেমনি আগামী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মন্তর গৌরবময় ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য, স্মরণীয় করে রাখার জন্য রৌমারীতে সাধারণ জনতার অনেক দাবি সত্ত্বেও গড়ে উঠেনি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কার্য বা স্মৃতিস্তম্ভ। জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছিল রৌমারিতেই ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে বেশ সম্মৃদ্ধ এই এলাকাটি।
জাগরণ সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মো. সামছুল আলম জানান, আমরা লক্ষ করেছি ঈদ বা পুজো কিংবা সরকারি ছুটিতে রৌমারীবাসী বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনসহ পরিবার পরিজন নিয়ে একটু বিনোদন বা মুক্ত বাতাসে নিঃস্বাস নেওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী জেলার মধুটিলা কেন্দ্র, ঝিনাইগাতি, গজনি অবকাশ, লাউচাপড়া, কর্ণঝড়া, রাবারড্রাম, রৌমারী স্থলবন্দর, ব্রহ্মপুত্রে বালু চরে ছুটে যায়। ফলে এ উপজেলার শিশু-কিশোর, যুবকদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার বলে মত দেন তিনি।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, শিশুপার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা যেতে পারে রৌমারী স্থলবন্দর সংলগ্ন স্থানে অথবা এর আশপাশে জিঞ্জিরাম নদীর তীরে। এটা নির্মাণ হতে পারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবার সরকারী অর্থায়নে। সরকারি ভাবে নির্মাণ করলে সরকার এই শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র থেকে প্রচুর রাজস্ব আয় করতে পারবে। আর বিনোদন কেন্দ্র হলে তা কোমলমতি ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভুমিকা রাখবে। সরকারের আয়ও বাড়বে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, যুব সমাজ দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করবে।
রৌমারীতে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার জোর দাবি জানিয়েছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আজিজার রহমান, সোনালী ব্যাংক কুড়িগ্রাম শাখার সাবেক এজিএম মো. হাছানুজ্জামান, রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি সদস্য সচিব এবং মাদকমুক্ত সমাজ বাংলাদেশ’র রৌমারী শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম মোমেন, রৌমারী স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের (আরএসডাব্লিউএ) সভাপতি ফাহিম আকবর মাসুক প্রমুখ।