পার হলো রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর, মেলেনি সমাধান, ক্যাম্পে বিক্ষোভ

admin August 25, 2018

রংপুর এক্সপ্রেস: রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নের এক বছর পার হয়েছে আজ শনিবার (২৫ আগস্ট)। গত বছরের এই দিনে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান জন্ম দেয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই মানবিক সংকটের। রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢল নামে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। কক্সবাজারে পালিয়ে এসে নিজে বাঁচলেও স্বজনদের হারিয়েছেন অনেকে।এদিকে দিনটিকে ‘কালো দিবস’ বলে পালন করছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এ উপলক্ষে আজ শনিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও বালুখালীর বিভিন্ন ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে এই শরণার্থীরা। তারা জানান, গণহত্যা বন্ধ, নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিত হলেই নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাবেন সেখান থেকে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরাণার্থীরা।


তবে নিপীড়নের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা অনেকেই মনে করে, রাখাইনে ফিরে যাওয়া তাদের জন্য নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কয়েক শতক ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও নাগরিকত্ব পায়নি রোহিঙ্গারা। এমনকি শিক্ষা, ধর্ম চর্চার মতো বিভিন্ন অধিকার থেকেও রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে।


নিজেদের কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গারা ৫ টি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো- রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচার, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, নিরাপদ প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসনের পর নিরাপদে চলাফেরার অধিকার। দাবিগুলো মেনে নিলেই মিয়ানমারে ফিরে যাবেন বলে জানান কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, আমরা এখানে আসছি এক বছর হইছে। আমরা বহুত জায়গা বদল করছি। আমরা এখনো বিচারের ফলাফল পাই নাই। আমরা নির্যাতনের শিকার হইছিলাম এইদিন। এই কারণে, সেই অশান্তির দিনটি আজকে পালন করছি।




[caption id="attachment_1443" align="aligncenter" width="800"]rohingya-Camp ২৫ শে আগস্টকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষণা করে আজ ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেন রোহিঙ্গারা।[/caption]

চলমান সংকটের মধ্যেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করবে না। তাদের সঙ্গে আছে বৌদ্ধভিক্ষুরা। গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বৌদ্ধ-প্রধান রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন অভিযান শুরু করলে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে থেকেই বিভিন্ন সময় পালিয়ে আসা তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছে।


সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানিয়েছে। হামলার জন্য মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘ বিভিন্ন সময় বলেছে, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের কাজে মেতেছে মিয়ানমার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে নির্যাতন, হত্যায় জড়িত মিয়ানমারের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। দেশটির নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচিত হয়েছেন, তা এখনো চলছে। তাঁকে দেওয়া বিভিন্ন সম্মাননা ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়। এরইমধ্যে সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বাংলাদেশের বিষয়। এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার সরকার কেবল কথা বলছে, কোনো কাজ করছে না। তারা প্রত্যাবাসন বিষয়ে সমঝোতায় সই করলেও তা মানছে না।


এরই মধ্যে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, রেডক্রসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। কক্সবাজারে স্থাপিত রোহিঙ্গা শিবিরেও তাঁরা গেছেন। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক ও ক‚টনীতিকরা ঘুরে প্রত্যক্ষ করেছেন রোহিঙ্গা সংকট। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। অভিনয় জগতের প্রিয়াংকা চোপড়া, কেট ব্লনশেটসহ বড় তারকারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখে গেছেন। তাঁরা রোহিঙ্গা সংকটে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সর্বশেষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১৩২ জন আইনপ্রণেতা (এমপি) মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, পূর্ব তিমুর। এমপিরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three