স্টাফ রিপোর্ট:
রংপুরে প্রায় ২৩ বছর আগে রুমানা আফরোজ তন্দ্রা নামে এক কলেজছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় ৫ আসামিকে ১৩ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার বেলা ১ টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক যাবিদ হোসেন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নগরীর রবার্টসন্সগঞ্জ মণ্ডলপাড়া এলাকার মানিক, রতন, রানা, বাবলা ও মালেকা। রায় ঘোষণার সময় মানিক, রানা ও বাবলা আদালতে উপস্থিত থাকলেও অন্য দুজন পলাতক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর রংপুর নগরীর রবার্টসন্সগঞ্জ মণ্ডলপাড়া এলাকায় দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন মাসুদা চৌধুরী নামে এক নারী।
ঘটনার সময় ১৯৯৬ সালে তার মেয়ে রুমানা আফরোজ তন্দ্রা রাজধানীর মিরপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে তন্দ্রা ঢাকা থেকে রংপুরে তার মায়ের কাছে বেড়াতে আসেন।
১৯৯৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পর দিয়াশলাই কেনার জন্য বাড়ির পাশে মুদি দোকানে যায় তন্দ্রা। এ সময় ওই এলাকার বখাটে মানিক তাকে একা পেয়ে জড়িয়ে ধরে। তন্দ্রা নিজেকে তার কবল থেকে মুক্ত করে বাড়ির ভেতরে ছুটে যায় এবং তার মাকে বিষয়টি জানায়। পরে তার মাসহ বেরিয়ে এসে এর প্রতিবাদ করলে মানিকের সহযোগী ও নিকটাত্মীয় রতন, রানা, বাবলা ও মালেকার সঙ্গে তন্দ্রা ও মায়ের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
একপর্যায়ে সকলে মিলে মা ও মেয়েকে মারধর করে এবং মানিক প্রকাশ্যে উপস্থিত লোকজনের সামনেই আবারো তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানিসহ তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।
এ ঘটনায় লজ্জায়-ক্ষোভে বাড়িতে ফিরে ওই রাতেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তন্দ্রা। পরের দিন ২ জুলাই তন্দ্রার মা মাসুদা চৌধুরী বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি, মারপিট ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ওই পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
ওই বছরেই পাঁচজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। দীর্ঘ ২৩ বছর মামলাটির বিচারকার্য চলার পর শ্লীলতাহানি, মারপিট ও আত্মহত্যার প্ররোচনার সংশ্লিষ্ট ধারায় মঙ্গলবার প্রত্যেকের ১৩ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন। আর আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুর রশীদ চৌধুরী, আব্দুল হক প্রামাণিকসহ একাধিক আইনজীবী বিভিন্ন সময়ে মামলা পরিচালনা করেন।